নূরুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের খুব কাছাকাছি তদন্তসংশ্লিষ্টরা। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে রিমান্ডে থাকা সাবেক কাস্টমস্ কমিশনার শাহাবুদ্দীন নাগরী ও নিহতের স্ত্রী নূরানী আক্তারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। নূরুল ইসলামকে হত্যার বিষয়ে পূর্বপরিকল্পনা না থাকলেও আকস্মিকভাবেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা তাদের। গত ১৩ এপ্রিল রাতে এলিফ্যান্ট রোডের ১৭০/১৭১ নম্বর ডোম ইনো অ্যাপার্টমেন্টের শোওয়ার ঘর থেকে নূরুল ইসলামের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতদেহের দুই-তৃতীয়াংশ খাটের নিচে এবং বাকিটা বাইরের দিকে ছিল। তার মুখে রক্ত জমাট বাঁধা ছিল। মৃতদেহের কিছুটা দূরেও রক্ত দেখা গেছে। মৃতের গায়ের চামড়াও ছিল বিবর্ণ। তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, নাগরী ব্যক্তিগত গাড়ি দিয়ে কখনো এলিফ্যান্ট রোডের ১৭০/১৭১ নম্বর ডোম ইনো অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশ করতেন না। কিছুটা দূরে গাড়ি রেখে সিএনজি অটোরিকশাযোগে ওই ভবনে আসতেন। একাধিক সূত্র বলছে, সাবেক কাস্টমস্ কমিশনার শাহাবুদ্দীন নাগরীর নারীপ্রীতির বিষয়টি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট ছিল তার সহকর্মীদের মাঝে। অবসরের আগ পর্যন্ত মাঝেমধ্যেই সুন্দরীরা হাজির হতেন তার অফিসে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ায় এসব বিষয়ে কথা বলার সাহস করতেন না অধস্তনরা। দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলার কারণে তার পদোন্নতি আটকে ছিল দীর্ঘদিন। অবশেষে দুই বছর আগে কাস্টমস্ কমিশনার হিসেবেই তিনি অবসরে যান। অন্যদিকে বাগেরহাটের রামপালের মেয়ে নূরানী আক্তারের নূরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ের আগেও চারটি বিয়ে হয়েছিল। তবে কোনো সংসারেই তার সন্তান হয়নি। নূরুল-নূরানী দম্পতির ওই ফ্ল্যাটের ৩৫ হাজার টাকা ভাড়া নিয়মিত পরিশোধ করতেন শাহাবুদ্দীন নাগরী। এর বাইরে নূরানীকে ১৪ লাখ টাকার একটি গাড়িও কিনে দেন। ওই ফ্ল্যাটে নাগরীর যাতায়াতের বিষয়ে নিহত নূরুল ইসলামের সম্মতি ছিল বলে তথ্য দিয়েছেন অ্যাপার্টমেন্টের ম্যানেজার বাবু কুমার স্বর্ণকার। রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ আহমেদ সরদার বলেন, ‘এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় যেদিন নূরুল ইসলাম নিহত হন, সেদিনও ওই বাসায় কবি ও সাবেক কাস্টমস্ কর্মকর্তা শাহাবুদ্দীন নাগরী গিয়েছিলেন। খুব শিগগিরই হয়তো আমরা এর রহস্য উন্মোচন করতে পারব। নূরুল ইসলাম যেদিন মারা যান, সেদিনও বেলা ৩টা ১৩ মিনিটে শাহাবুদ্দীন নাগরী আসেন এবং সন্ধ্যা ৭টা ১৭ মিনিটে বেরিয়ে যান। ভিডিও ফুটেজেও তা দেখা গেছে।’ অ্যাপার্টমেন্টের ম্যানেজার বাবু কুমার বলেন, বছরখানেক আগে ব্যবসায়ী পরিচয়ে চার তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন নিহত নূরুল ইসলাম। ফ্ল্যাটে ওঠার পরদিনই শাহাবুদ্দীন নাগরী সেখানে এসেছিলেন। নাগরীকে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় পরিচয় দিয়েছিলেন নূরুল ইসলাম। যে কোনো সময় এলে তাকে যেন ঢুকতে দেওয়া হয় এ বিষয়টিও নূরুল ইসলাম শুরুতেই বলে রেখেছিলেন। ফ্ল্যাটে ওঠার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই শাহাবুদ্দীন নাগরী সেখানে আসতেন বলে জানিয়েছেন তিনি। নিহত নূরুল ইসলামের বোন হাসনা আক্তার কুমকুম বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর আগে ভাই নিজের পছন্দে নূরানীকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর বাড়ির সঙ্গে তার তেমন একটা যোগাযোগ ছিল না। নূরানী ভাইকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে দিতেন না। ওর চলাফেরাও ভালো ছিল না। গত পাঁচ বছরে আমার ভাইয়ের সঙ্গে মাত্র একদিন দেখা হয়েছে।’