শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

সেবা সংস্থার জবাবদিহিতা থাকা জরুরি : মোবাশ্বের

সেবা সংস্থার জবাবদিহিতা থাকা জরুরি : মোবাশ্বের

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেছেন, ‘ঢাকা সিটি মেয়রের নেতৃত্বে সেবা সংস্থাগুলো কাজ করলে নগরের অনেক সমস্যার সমাধান হবে। ঢাকা শহর দেখভাল করার দায়িত্ব একজনেরই থাকার কথা। দেশে যদি চারজন প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে কেমন হবে! ঢাকা শহরের উন্নয়নে ৫৪টি সেবা সংস্থা ও ৭টি স্বাধীন মন্ত্রণালয় রয়েছে। স্বাধীন হওয়ার কারণেই একজন রাস্তা কেটে সংস্কার করার পরপরই আরেকজন কাটছে। কারণ, দুজন মিলে রাস্তা কাটলে কমিশন কমে যায়। দুজন পরপর কাটলে কমিশন বৃদ্ধি পায়। এটাই সমস্যার মূল কারণ। এতে নাগরিক দুর্ভোগ বাড়ে। সেবাবঞ্চিত হয় সাধারণ মানুষ।’

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন মোবাশ্বের হোসেন। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, স্বরাষ্ট্রসহ সাতটি মন্ত্রণালয় ঢাকা মহানগর নিয়ে কাটাছেঁড়া করে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৫৪টি সংস্থা। সবাই নিজেদের মতো করে কাজ করেন। সিটি মেয়রকে বলছি নগরপিতা। কিন্তু তার কাছে কারও জবাবদিহিতা নেই। কাগজে-কলমে মেয়র শুধু দুটি কাজ করতে পারেন। কর আদায় আর রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া। ফুটপাথে একটি লাইটের খুঁটি ভেঙে পড়ে থাকলেও মেয়রের কিছু করার নেই। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে যত দিন তোলা না হবে, তা সেভাবেই পড়ে থাকবে। এ জন্য নগর সরকারের বিকল্প নেই।’

মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস পরিবহন নিয়ে যে খেলাটা হলো তাতে বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে পদোন্নতি দিয়ে আরেক জায়গায় বদলি করা হবে। কারণ তিনি বাস মালিক সমিতির স্বার্থ রক্ষা করেছেন। জনগণকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়েছেন। এই কারণটা ব্যাখ্যা করলে বোঝা যাবে, নগরে জনগণের প্রতিনিধির হাতে যদি সমগ্র ক্ষমতা দেওয়া হতো, তাহলে আজ এই সংকট সৃষ্টি হতো না। সাতটি মন্ত্রণালয় যে অন্যায় কাজটি করছে, এটা যদি মেয়রের হাতে এখতিয়ার থাকত তা হতো না। কারণ একটি পাগলও একটি রাস্তা সাতবার কাটত না।’

তিনি বলেন, ‘নগরপিতার ক্ষমতায়ন করতে হবে। সরকারের উচিত, ৭টি মন্ত্রণালয় ও ৫৪টি সেবা প্রতিষ্ঠানের ওপর ছাতার মতো মেয়রকে বসানো। তারা মেয়রের জবাবদিহিতায় থাকবে। মন্ত্রণালয় সারা দেশ নিয়ে থাকবে, কিন্তু ঢাকা শহরে কিছু করতে হলে মেয়রের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। এটা করতে পারলে ঢাকা শহরের দুঃখ-কষ্ট অন্তত ৫০ ভাগ কমানো সম্ভব। এতে জনগণ সেবা পাবে।’ উদাহরণ টেনে এই স্থপতি বলেন, কারও ছেলের যদি পিতা ৫৪টি হয়, তাহলে ছেলেকে একজন স্কুলে আরেকজন মাদ্রাসায় আরেকজন ইংলিশ মিডিয়ামে কেউবা বাংলা মিডিয়ামে পড়াতে বলবে। আরেকজন বলবে, লেখাপড়ার দরকার নেই, জুতা পালিশ কর। ঢাকা শহরের হচ্ছে এই অবস্থা। পিতা যখন বলা হবে, তাহলে একজনই থাকা উচিত। সাত মন্ত্রণালয় নিজেকেই শ্রেষ্ঠ বলে মনে করে। সেখানেই হয় যুদ্ধ। ৫৪টি প্রতিষ্ঠান ও ৭টি মন্ত্রণালয়কে যদি নগরপিতা হিসেবে মেয়রের অধীনে আনা যায়, তার কাছে দায়বদ্ধ করা যায়, তাহলেই ঢাকা শহরের দুরবস্থা অনেকাংশে কাটানো সম্ভব।’ মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘পৃথিবীর সব জায়গায় প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি একজন থাকেন, ঠিক তেমনই নগরের একজন পিতা থাকেন, যিনি জনপ্রতিনিধি। মেয়র হচ্ছেন আমাদের অভিভাবক। তার কাছে দুঃখ-কষ্ট বা ক্ষোভ-বিক্ষোভ ঝাড়তে পারি। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে তা করা যায় না। তাদের বদলি করা যায়।’

সর্বশেষ খবর