শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ ভুটান ভারতের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ঘোষণা

ঢাকা-থিম্পুর ২৬ দফা যৌথ বিবৃতি

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

জলবিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের ঘোষণা এসেছে ঢাকা-থিম্পুর ২৬ দফা যৌথ বিবৃতিতে। বলা হয়েছে, ‘পরবর্তীতে তিনটি দেশের নেতারা যখন একসঙ্গে হবেন তখন এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দিনের ভুটান সফর শেষে গতকাল ঢাকা ও থিম্পু একযোগে এ বিবৃতি প্রকাশ করে। দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বের বৃহত্তর শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য দুই দেশের একত্রে কাজ করার ঘোষণাও এসেছে যৌথ বিবৃতিতে। শেখ হাসিনার এবারের সফরে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে দুই দেশ। তিন দিনের সরকারি সফর শেষ করে গতকাল সকালে ঢাকা ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা-থিম্পুর ২৬ দফা যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে : আঞ্চলিক ও বিশ্বের শান্তি, সমৃদ্ধি ও সমন্বিত উন্নয়নের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার ওপর বাংলাদেশ-ভুটানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত। চমৎকার এই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে সন্তুষ্ট দুই দেশ। পারস্পরিক স্বার্থে বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের এ সম্পর্ককে আরও সংহত করার ব্যাপারে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাসো তেসারিং তোবগে। দুই প্রধানমন্ত্রী জলবিদ্যুৎ, পানিসম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ট্যুরিজম, সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইসিটি এবং কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির গুরুত্ব বিবেচনা করে উভয় পক্ষ বিদ্যুৎ, পানিসম্পদ এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় এবং উপ-আঞ্চলিকভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রী আঞ্চলিক যোগাযোগের জন্য বিবিআইএন মোটরযান চুক্তির গুরুত্ব অনুধাবন করে দ্রুত চুক্তি বাস্তবায়নে তাদের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন। বিবৃতিতে বলা হয় : বাংলাদেশকে ভুটানে আরও তৈরি পোশাক, সিরামিক, ওষুধ, পাট, পাটজাত ও চামড়াজাত পণ্য, প্রসাধনসামগ্রী ও কৃষিপণ্য রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছে। ভুটান এসব পণ্য তার দেশের বাজারজাতকরণ ও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অধিকতর সম্প্রসারণে একমত হয়। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে গুঁড়া চুন (লাইম স্টোন পাউডার), জিপ্যাম ও ক্যালসিয়াম কারবোনেট রপ্তানিতে শুল্ক ছাড় সমস্যা নিষ্পন্নে তামাবিল-ডাউকি ও নাকুয়াগং-দালু, গোবরাকুরা ও কড়াইতলি-গাসুয়াপারান্দ স্থলবন্দর চালুসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আইসিটি খাতের অগ্রগতির প্রশংসা করেন। দুই নেতা আইসিটি খাতে সহযোগিতায় একমত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটানের রাজা ও রানী এবং প্রধানমন্ত্রীকে তাদের সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। বিবৃতিতে বলা হয় : ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ে সফর বিনিময়ের ঐতিহ্য এবং উভয় দেশের বন্ধুত্ব সমুন্নত রাখতে ও জোরদার করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফর ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। গত মঙ্গলবার সকালে সফর শুরু করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাঁকজমকপূর্ণ ও রাজকীয় সংবর্ধনা দিয়েছে ভুটান। সফরের প্রথম দিনেই হয়েছে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। দ্বিতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থিম্পুতে অনুষ্ঠিত ‘অটিজম অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। পরে তিনি সেখানে বিভিন্ন সেশনে যোগ দেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রধানমন্ত্রী-কন্যা ও বাংলাদেশের অটিজমবিষয়ক জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদকে করার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ও ভুটানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই সম্মেলনের আয়োজন করে।

ঢাকা ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার উদ্দেশে বিমানে উঠতে গতকাল সকালে ভুটানের রাজধানী থিম্পু থেকে সড়কপথে পারো শহরে আসেন। এ সময় রাস্তায় ভুটানের স্কুলের শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে দুই দেশের পতাকা নেড়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানায়। পরে পারো বিমানবন্দরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তেসারিং তোবগে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান। দ্রুক এয়ারওয়েজের ভিভিআইপি ফ্লাইটটি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে বাংলাদেশ সময় ৯টা ৩২ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধানসহ সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা।

প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরেছেন : তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে গতকাল দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এ সময় তাকে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্বাগত জানান। এর আগে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ভিভিআইপি ফ্লাইট ভুটানের পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। পারো বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তেসারিং তোবগে ও ভুটানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জিষ্ণু রায় চৌধুরী। সফরকালীন আবাসস্থল লা মেরিডিয়ান থিম্পু থেকে বিমানবন্দর যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ভুটানের নাগরিকরা হাত নেড়ে, বাংলাদেশ ও ভুটানের পতাকা নেড়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই সফরে দুই দেশের বিদ্যমান ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভুটানে অধিক বাণিজ্যের দুয়ার উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। সফরকালে শেখ হাসিনা ভুটানের রাজা জিগমে খেসার ওয়াংচুক, রানী ড্রুক পেমা ওয়াংচুক ও প্রধানমন্ত্রী তেসারিং তোবগের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এ ছাড়া বাণিজ্য বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৬ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সেখানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অটিজম সম্মেলনে অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা হোসেন ওয়াজেদ, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি।

সর্বশেষ খবর