শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

যারা দুর্নীতি করছে দেশের মাটি তাদের সহ্য করবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

যারা দুর্নীতি করছে দেশের মাটি তাদের সহ্য করবে না

জন্মদিনে ড. কামাল হোসেন

৮১তম জন্মদিন উপলক্ষে নেতা-কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন সংবিধানপ্রণেতা ও প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। শুভেচ্ছা জানাতে গতকাল সকাল থেকেই অনুরাগীরা তার বাসভবনে আসছিলেন ফুল নিয়ে। দল বেঁধে গান গেয়ে ও ফুল দিয়ে দলের সভাপতিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান গণফোরামের নেতা-কর্মীরা। পরে সবাইকে নিয়ে তিনি জন্মদিনের কেক কাটেন। এ সময় ড. কামাল হোসেন বলেন, শহীদরা লুটপাটকারীদের রক্ষার জন্য জীবন দেননি। পাচারকারীদের বাঁচাতে রক্ত দেননি। যারা দুর্নীতি করছেন দেশের মাটি তাদের সহ্য করবে না। যেসব রাঘব-বোয়াল দুর্নীতি করেছেন তারা কি ভালো আছেন? তাদের কী পরিণতি হয়েছে? শহীদের মাটি কোনো দিন অন্যায়-অত্যাচার মেনে নেবে না। বেইলি রোডে নিজের বাসভবনের সামনের লনে গতকাল সকালে জন্মদিনের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে ড. কামাল কথা বলার সময় তার পাশে ছিলেন বিশিষ্ট মানবাধিকার নেত্রী তার স্ত্রী ড. হামিদা হোসেন। উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মফিজুল ইসলাম খান কামাল, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, আ ও ম শফিক উল্লাহ, মোশতাক আহমেদ, এম শফিউর রহমান খান, ফজলুল কবির কাওসার প্রমুখ। জন্মদিনের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে কামাল হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমায় রাজনীতিতে এনেছেন। আমি আসতে চাইনি। বলেছিলাম, আমি তো আপনার কর্মী হিসেবেই কাজ করতে পারি, দলে যোগ দেওয়ার কী আছে! বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, একজন সফল উকিল ব্যারিস্টার হয়ে টাকা কামাই করতে পারবে, মানুষের মন পাবে না। রাজনীতি হলো মানুষের সেবা করা। ঝুঁকি নিয়ে তাদের জন্য লড়াই করা। সত্যিকারের রাজনীতিতে এলে মানুষের যে ভালোবাসা পাওয়া যায় তার তুলনা অন্য কিছুতে নেই। মানুষের সত্যিকারের ভালোবাসা পেতে হলে রাজনীতিতে আসতে হবে। আজ দেখি, বঙ্গবন্ধুর কথাই ঠিক। শতভাগ সত্য। আজ যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা এক হাজার কোটি টাকা দিয়েও কেনা যায় না। রাজনীতি না করলে জনগণের জন্য সত্যিকার অর্থেই কিছু করা যায় না। অন্য কিছু করে হাজার হাজার টাকা রোজগার করা যায়, বিরাট বিরাট দালান-কোঠাও করা যায়। কিন্তু ওদের নাম মানুষ মনে রাখে না। যারা দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে, ত্যাগ স্বীকার করেছে মানুষ তাদেরই মনে রাখে।’ বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ড. কামাল হোসেন এ সময় দুর্নীতিবাজদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘বাবা! তোমরা যারা আজ দুর্নীতি করছ, শুনে রাখো বাংলাদেশের মাটি এটা সহ্য করবে না। জনগণকে আজ এটা বোঝাতে হবে— দেশের গুণগত পরিবর্তনের জন্য শহীদরা জীবন দিয়েছেন।’ বঙ্গবন্ধু সরকারের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই যে এখন গর্ব করে বলা হচ্ছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, তার পেছনে কারা রয়েছে? এসব উন্নয়ন কারা করছে? এ দেশের শ্রমিকরা করছে। গার্মেন্ট শ্রমিকরা— মেয়েরা করছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা করছে, তারা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। আর জনগণের এই টাকা কতিপয় লোক দেশের বাইরে পাচার করছে। পত্রিকায় খবর দেখলাম, দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে।’ তিনি জানতে চান, কারা এই পাচারকারী? তারপর নিজের করা প্রশ্নের উত্তর নিজেই দিয়ে বলেন, ‘যারা পাচার করছে শুনছি তাদের নানানভাবে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। আর সাধারণ মানুষকে এখনো কষ্ট করতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ফল ভোগ করতে হলে সবাইকে মানুষ হতে হবে। যারা মনে করেন স্বাধীনতার অর্থ চুরি করা, অসত্ভাবে টাকা অর্জন করা তারা ভুল করছেন।’ তিনি বলেন, ‘নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। দেশে ঘুষ-দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিতে দেওয়া হবে না। অত্যাচার-নির্যাতনমুক্ত বাংলাদেশ অবশ্যই আমরা গড়ব।’ গণফোরামের সভাপতি আরও বলেন, ‘বাঙালি জাতির বৈশিষ্ট্য তারা অন্যায় মেনে নেয় না। লোভের শিকার হয়ে অন্যায়কে আমরা সমর্থন করি না। এ দেশে নিরানব্বই ভাগ মানুষ লোভে বিক্রি হয় না। বঙ্গবন্ধুও বলেছিলেন গরু-ছাগলের মাথা বিক্রি হয়, মানুষের মাথা বিক্রি হয় না। আমরা যত দিন বেঁচে থাকব আপসহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাব। অবশ্যই আমরা এ দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে, সন্ত্রাসমুক্ত করতে পারব।’

সর্বশেষ খবর