রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

জেএমবির ভয়ঙ্কর বোমা কারখানা ঝিনাইদহে

অপারেশন সাউথ প ২০ কনটেইনার কেমিক্যালসহ বোমা সরঞ্জাম উদ্ধার

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ

জেএমবির ভয়ঙ্কর বোমা কারখানা ঝিনাইদহে

ঝিনাইদহে অভিযান চালিয়ে ২০ কনটেইনার কেমিক্যাল ছাড়াও উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ বোমা সরঞ্জাম ও সুইসাইডাল ভেস্ট —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনিয়াপাড়ার জঙ্গি আস্তানায় শেষ হয়েছে পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম অভিযান। এর আগে শুক্রবার অভিযান শুরু হলেও রাতেই তা স্থগিত করা হয়। পরে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় আবার শুরু হয় অভিযান। এ সময় এলাকায় জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে শেষ করা হয় অভিযান। এ অপারেশনের নাম দেওয়া হয় ‘সাউথ প’ (South Paw)। প্রায় ৪ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের অভিযানে জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কেমিক্যালভর্তি ২০টি কনটেইনার, ১০০টি লোহার বল, তিনটি সুইসাইডাল

ভেস্ট, নয়টি সুইসাইডাল বেল্ট, বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রিক সার্কিট, ১৫টি জিহাদি বই, একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, সাত রাউন্ড গুলি, একটি মোটরসাইকেল, একটি চাপাতি, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও ছয়টি শক্তিশালী  বোমা। এর মধ্যে তিনটি সুইসাইডাল ভেস্ট ও দুটি বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। অভিযানে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহম্মেদের নেতৃত্বে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ৩০ জন ও বোমা নিষ্ক্রিয় বিশেষজ্ঞ দলের সাতজন  অংশ নেন। তাদের শুক্রবার রাতে ঢাকা থেকে ঘটনাস্থলে আনা হয়। এ ছাড়া পিবিআই, র‌্যাব, পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৪০০ সদস্য অভিযানে অংশ নেন। খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহম্মেদ গতকাল বেলা আড়াইটায় প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, আবদুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে ছিল এই জঙ্গি আস্তানা। তিনি নব্য জেএমবির সদস্য। সেখানে নিয়মিত বিভাগীয় পর্যায়ের জঙ্গিরা আসা-যাওয়া করত এবং চার-পাঁচজন জঙ্গি নিয়মিত থাকত। অস্ত্র তৈরির বড় কারখানা হিসেবে বাড়িটি ব্যবহার করা হতো। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, বড় ধরনের নাশকতা করার পরিকল্পনা করছিল জঙ্গিরা। দিদার আহম্মেদ বলেন, মানুষকে বেহেশতে যাওয়ার কথা বলে কেউ এমন কর্মকাণ্ড করলে পার পাবে না। জঙ্গিদের স্থান বাংলাদেশে হবে না। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান, ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার, জেলার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাহার আলী শেখ, বোম ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধানসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। জঙ্গি আস্তানা হিসেবে শনাক্ত আধাপাকা ওই বাড়ির মালিক আবদুল্লাহ ওরফে বেড়ে। তার সঙ্গে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মাইনুল ইসলাম মুসাসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। সম্প্রতি সিলেট, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, সীতাকুণ্ডসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) ডিসি মহিবুল ইসলাম খান বলেন, সন্ধান পাওয়ার পরপরই শুক্রবার দুপুরের পর থেকে আস্তানাটি ঘিরে রাখা হয়। সেখানে কোনো জঙ্গি না থাকলেও প্রেশার কুকার বোমা ও বোমা তৈরির বিপুল সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে পোড়াহাটি গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ি ঘিরে খোঁজখবর নেয় পুলিশ। পরে সদর থানা থেকে সাত কিলোমিটার পূর্বে পোড়াহাটি ইউনিয়নের একটি টিনশেড বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা আছে বলে নিশ্চিত হয় তারা। বাড়িটি দুই কক্ষবিশিষ্ট। তবে ভিতরে কাউকে পাওয়া যায়নি। আবদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিয়ে ওই বাড়িতে থাকতেন। অভিযানের আগেই তারা আস্তানা ছেড়েছেন। আবদুল্লাহ নওমুসলিম। বছর পাঁচেক আগে তিনি হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে ধানহাড়িয়া গ্রামের আবদুল লতিফের মেয়েকে বিয়ে করেন। আবদুল্লাহর বাড়িতে দেশের বিভিন্ন এলাকার জঙ্গিদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। আবদুল্লাহর শ্বশুর আবদুল লতিফ জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আগে থেকেই পলাতক। বাড়িটি ঘিরে সোয়াত, র‌্যাব, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা অবস্থান নেন। সাদা পোশাকে পুরো এলাকায় অনেককেই দেখা যায়। আশপাশের এলাকায় সংবাদকর্মী ও অন্য কোনো সাধারণ মানুষকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, এর আগেও বিভিন্ন সময় ঝিনাইদহে জঙ্গিদের তৎপরতার খোঁজ পাওয়া যায়। হলি আর্টিজান হামলায় জড়িত নিবরাসসহ অন্যদের ঝিনাইদহে একটি আস্তানায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা মুসাও নিয়মিত এ এলাকায় যাতায়াত করত। গোয়েন্দাদের ধারণা, সিলেটের শিববাড়ীতে অভিযানে মুসা মারা গেছে। আবদুল্লার পাশের বাড়ির এক মুদি ব্যবসায়ী জানান, প্রভাত বাহতি হিন্দুধর্ম ছেড়ে পাঁচ বছর আগে ইসলামধর্ম গ্রহণ করে আবদুল্লাহ নাম ধারণ করেন। তিনি এই বাড়িতে স্ত্রীসহ বসবাস করতেন। তবে এলাকার কোনো লোকের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। কখনো কখনো তিনি নছিমন চালাতেন। তার স্ত্রী মুখ ঢেকে বাইরে বেরোলেও কারও সঙ্গে মিশতেন না। বাড়িতে অতিথি এলে ডিম বা মুরগি কেনার জন্য মাঝেমধ্যে বের হতেন।

সর্বশেষ খবর