রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
নতুন প্রস্তাব

বাংলাদেশ-ভুটান ট্যুরিজম করিডর

জুলকার নাইন

বাংলাদেশের কক্সবাজার ও কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকতের সঙ্গে ভুটানের থিম্পু, পারো ও ফুটসেলিং পাহাড়ের নৈসর্গিক দৃশ্যের একটি সমন্বিত পর্যটন ক্ষেত্র গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার থিম্পু সফরে দুই দেশের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে কর্মপদ্ধতি ও অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ভুটানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধি দলও পাঠানো হচ্ছে শিগগিরই। এ ছাড়া ভুটান তার দেশের জনগণের জন্য একটি ‘হেলথ ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠনে বাংলাদেশের সহায়তা চেয়েছে। সেখানেও সহায়তা দিতে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বের অন্যতম সৌন্দর্যের লীলাভূমি ভুটান। সেখানকার পাহাড় দেখতেই বিশ্বের অনেক পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু পাহাড়ের পাশাপাশি যদি সমুদ্র দেখার সুবিধা রাখা যায় তাহলে আরও বেশি পর্যটক আকর্ষণ করা সম্ভব হবে। আর এক্ষেত্রে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার এবং অপর সৈকত কুয়াকাটাকে নিয়ে একটি সমন্বিত পর্যটন ক্ষেত্র গড়ে তোলা যায় কিনা- তার প্রস্তাব দিয়েছে ভুটান। বিশ্বের বেশ কিছু দেশের মধ্যে এ ধরনের সহযোগিতার দৃষ্টান্ত আছে। তাতে বাংলাদেশে সমুদ্র দেখতে আরও বেশি পর্যটক আসবেন। সেই সঙ্গে তারা ভুটানের পাহাড় দেখার সুবিধাও পাবেন। আবার বিপরীতভাবে ভুটান দেখতে আসা বিদেশি পর্যটকরাও বাংলাদেশের পর্যটনে যুক্ত হতে পারবেন। এসব কারণে এই প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, থিম্পুর গ্যালয়ং শংখান-এ শীর্ষ বৈঠকে দুই দেশের কানেকটিভিটিকে ধরে ব্যবসা ও বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় আলোচনায় এসেছে। এই বৈঠকে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী ভুটানের সমর্থন চেয়েছেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন,  ভুটানে তিন দেশের সহযোগিতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এবং এটা রিজওনালি ট্রান্সমিট করবে। এ ছাড়া ভুটানের সরকার একটা ‘হেলথ ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করেছে স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নের জন্য। এই তহবিলে সহযোগিতা চেয়েছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। এতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া ভুটানে বাংলাদেশি ডাক্তারদের ভুটানে সরকারি চাকরি প্রদানের বিষয় নিয়েও একমত হয়েছে দুই দেশ। সূত্র জানায়, বর্তমানে ১২৩ জন ভুটানি ছাত্র বাংলাদেশে পড়ছে। এদের মধ্যে ডাক্তারিতেই বেশি। ওই খাতে আরও সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দুই প্রধানমন্ত্রীই অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন। এ লক্ষ্যে রংপুর মেডিকেল কলেজে ভুটানি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ আসন বরাদ্দ বাড়ানো হবে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল নিয়ে বিবিআইএন নামে যে উপ-আঞ্চলিক জোট গঠনের কাজ চলছে- তা নিয়েও দুই প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করেছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিবিআইএন এ এলাকার কানেকটিভিটির একটা প্রধান করিডর। এর বাস্তবায়নে ভুটানকে তিনি তাগাদা দিয়েছেন। ভারতের মধ্য দিয়ে ফাইবার অপটিকসের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার একটা প্রস্তাব ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দেন ভুটানকে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ট্যাক্স ও অন্যান্য ফি প্রদান করেই বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করবে ভুটান।

সর্বশেষ খবর