রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বলয়ের রাজনীতি ভাঙতে হবে ঢাকার নতুন নেতৃত্বকে

মাহমুদ আজহার

বলয়ের রাজনীতি ভাঙতে হবে ঢাকার নতুন নেতৃত্বকে

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন নেতৃত্বকে ‘বলয়ের রাজনীতি’ ভাঙতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। অতীত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীতে অতীতে যারা নেতৃত্বে ছিলেন, তারা কারও সহযোগিতা চাননি। এ কারণে কেউ তাদের সহযোগিতাও দেয়নি। কেমন যেন একটি বলয় সৃষ্টি করে রাখা হয়েছিল। আমার মনে হয়, নতুন নেতৃত্ব সেই বলয়ের রাজনীতি ভাঙতে পারবে। সবার সহযোগিতা নিয়ে তারা মূল দায়িত্ব পালনে আগ্রহী ও সক্রিয় হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’ দুই ভাগে ঢাকা মহানগর বিএনপির নবঘোষিত কমিটি প্রসঙ্গে গতকাল দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনের নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে খোলামেলা আলাপকালে গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘আর আমরা যদি কেউ মনে করি, তাদের সহযোগিতা না করে ব্যর্থ করব, তাদের ব্যর্থতা দেখব, হাত তালি দেব— এটা হবে হীন মানসিকতা। এটা ত্যাগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ঢাকা মহানগর বিএনপি কোনো কারণে ব্যর্থ হলে সে ব্যর্থতা আমাদের সবার ওপরই বর্তাবে। তাই বলি নতুন নেতৃত্বের ব্যর্থতা দেখার ইচ্ছা না করে তাদের সফল করার জন্য আমাদের যতটুকু সামর্থ্য রয়েছে তা নিয়েই পাশে দাঁড়াতে হবে।’ নতুন কমিটি কেমন হলো এমন প্রশ্নে সাবেক এই যুব নেতা বলেন, ‘আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বহুদিন পর অনেক যাচাই-বাছাই করে ঢাকা মহানগরে দুই ভাগে কমিটি দিয়েছেন। যারা নেতৃত্বে এসেছেন, তাদের অতীতে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রয়েছে। তারা দলে নতুনও নয়। তাদের কাছে একটি প্রত্যাশা নিয়েই নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি, নতুন নেতৃত্ব সফল হবে। এ জন্য তাদেরও পরিশ্রম করতে হবে। ঢাকা শহরে যেসব নেতা বাস করেন, ঢাকার রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে যারা সম্পর্কিত, তাদের সবাইকে নিঃশর্তভাবে নতুন নেতৃত্বকে সহযোগিতা করা উচিত, যাতে তারা সফল হন। আবার যারা নেতৃত্বে রয়েছেন, তাদেরও সহযোগিতা নেওয়ার মনোভাব থাকতে হবে। আগামী পথ সহজ নয়। পারস্পরিক সহযোগিতা না করলে এই পথ পাড়ি দেওয়া কঠিন হবে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান রাজনীতিতে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে অতিমাত্রায় প্রশাসনিক বাড়াবাড়ি চলছে। একটি সুনির্দিষ্ট অবস্থানের মধ্য থেকে আন্দোলনকে তার সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে অনেক কষ্ট করতে হবে। যারা নেতৃত্বে রয়েছেন তারা কম-বেশি সবাই বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগে মামলায় আক্রান্ত। এসব মামলা মোকাবিলা করার পাশাপাশি রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় থাকাই তাদের বড় চ্যালেঞ্জ। এতে অনেক বেগও পেতে হবে। পাশাপাশি তাদের সাধারণ মিছিল-মিটিংসহ নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে হবে। কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনমুখী করতে হবে।’ মামলার বোঝা নিয়ে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব কঠিন পথ পাড়ি দিতে সক্ষম কিনা এমন প্রশ্নে গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘অবশ্যই সম্ভব। বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে প্রথম মেয়র ছিলেন ব্যারিস্টার আবুল হাসানাত। পরবতীতে পর্যায়ক্রমে সাবেক স্পিকার মির্জা গোলাম হাফিজ, লে. জেনারেল (অব.) মীর শওকত আলী, সালাউদ্দিন আহমেদ, সাদেক হোসেন খোকা সর্বশেষ মির্জা আব্বাস ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব দেন। একটি বিষয় বুঝতে হবে, এই নেতারাও দায়িত্ব পালনের সময় অনেকেই পদ-পদবির অধিকারী ছিলেন না। দায়িত্ব নেওয়ার পর কেউ মেয়র হয়েছেন, কেউ মন্ত্রী হয়েছেন। তারা দায়িত্ব পালন করেছেন।’

বিএনপি তো এক ঢাকা রাখতে আন্দোলন করেছিল। এখন দুই ভাগে মহানগর কমিটি কেন— এমন প্রশ্নে সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশনে কলেবর অনেক বেড়েছে। আগে সিটি করপোরেশনে ৮টি সংসদীয় আসন ছিল, এখন ১৫টি। তাছাড়াও ঢাকার আশপাশে কতগুলো ইউনিয়ন ছিল। সেগুলোও সিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া ঢাকা সিটি করপোরেশন যখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়, তখন আমাদের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোও দুই ভাগে ভাগ করা হয়। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও তাই করে। ভৌগোলিক ও অতিমাত্রায় জনশক্তি বৃদ্ধির কারণেই অঙ্গ সংগঠনগুলোর মতোই ঢাকা মহানগর বিএনপিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর