মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

যাই ঘটুক ভোটে যাবে বিএনপি

গোপনীয়তা রেখে ৩০০ আসনে প্রার্থী তালিকা তৈরি করছেন চেয়ারপারসন

মাহমুদ আজহার

যাই ঘটুক ভোটে যাবে বিএনপি

আগামীতে যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে বিএনপি। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক’ সরকারের দাবি নিয়ে মাঠে থাকবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা এই দলটি। বিএনপির বড় একটি অংশই মনে করে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করা ছিল ভুল। তাই আগামীতে যাই ঘটুক না কেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে একটি ইতিবাচক ফল আসার সম্ভাবনা দেখছেন দলের নেতা-কর্মীরা। সার্বিক দিক বিবেচনায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার প্রাক-প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দলটি।

জানা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে গোপনে ৩০০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকাও তৈরি করছেন বিএনপি-প্রধান। এ ক্ষেত্রে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতামতকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দলের ‘যোগ্য প্রার্থী’ খুঁজতে নানা প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। একইভাবে চলছে ‘ভিশন-২০৩০’ ও নির্বাচনী ‘ইশতেহার’ তৈরির কাজ। দল সমর্থিত বুদ্ধিজীবীসহ নেতাদের অনেকেরই মতামত নেওয়া হচ্ছে। এরপর তা দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে চূড়ান্ত করবেন দলের প্রধান খালেদা জিয়া।

এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি। ক্ষমতায় গেলে কী কী করবেন, তার একটি দিকনির্দেশনা থাকবে বেগম জিয়ার ভিশন-২০৩০-এ। বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, ভিশনটি হবে যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত। বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সামনে রেখেই এ ভিশন তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঈদের পর সুবিধাজনক সময়ে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার নিয়েও প্রস্তাব তুলে ধরবেন বেগম খালেদা জিয়া। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনে আমরা যেতেও চাই। তবে এজন্য প্রয়োজন অনুকূল পরিবেশ। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হলে যে কোনো সময় নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত বিএনপি। কারণ, একটি গণতান্ত্রিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা করতে খুব একটা সময় লাগে না। এ লক্ষ্যেই আমাদের চেয়ারপারসন ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করবেন। এরপর পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখাও দেওয়া হবে। এরপর হবে ইশতেহার ঘোষণা।’

সূত্রে জানা যায়, আগামী নির্বাচনকে লক্ষ্যে রেখেই দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর এই প্রথম বিএনপির পুরো নির্বাহী কমিটি যাচ্ছে তৃণমূল সফরে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থেকে শুরু করে সিনিয়র ৫১ জন নেতা এতে যোগ দেবেন। ৭৭টি সাংগঠনিক জেলায় তারা টিমপ্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দেবেন। উদ্দেশ্য, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলের ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। দলকে চাঙ্গা করা। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, সফরে যাওয়া হাইপ্রোফাইলের নেতারা কর্মীদের সঙ্গে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করবেন। তুলে ধরবেন বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে করণীয় নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মতামতও নেওয়া হবে। এরপর তা প্রস্তাব আকারে পাঠানো হবে বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে। এ ছাড়া রমজানে ইফতার পার্টি সামনে রেখে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বিএনপি-প্রধান। ঈদের পর তিনি যেতে পারেন বিভাগীয় পর্যায়ে সফরে। এর এক ফাঁকে যাবেন লন্ডনে। সেখানে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে সলাপরামর্শ ছাড়াও পায়ের চিকিৎসা করাবেন।

এদিকে কেন্দ্রের সবুজ সংকেত না পেলেও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ভোটের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীকে ঘিরে চলছে শোডাউন। প্রতিটি জেলায় একাধিক প্রার্থী রয়েছে দলটির। জেলা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য প্রার্থীর বিষয়টিও মাথায় রাখা হচ্ছে। এরই মধ্যে তৃণমূলের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও দলীয় টিকিট পেতে সিনিয়র নেতাদের বাসায় বাসায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। অনেকেই যোগাযোগ রাখছেন লন্ডনে। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারাও নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে কথা বলছেন। তবে তাদের সবার বক্তব্যেই উঠে আসছে অনুকূল পরিবেশের কথা। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ শর্তসাপেক্ষে আগামী নির্বাচনে দলের অংশগ্রহণ নিয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনাকারী একটি দল। সেই দল অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। একতরফাভাবে ভোটে যাওয়ার ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হবে।’

এদিকে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এক মাসের মধ্যেই দল ও অঙ্গসংগঠনের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় বিএনপি। এরই মধ্যে অন্তত ৪০ জেলার নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল জেড এম গোলাম হায়দার সভাপতি ও অ্যাডভোকেট আবদুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সংশোধিত ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন বিএনপি মহাসচিব। দলের সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এ ছাড়া সম্প্রতি দুই ভাগে ঢাকা মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল ও জাসাসের কমিটিও দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদলসহ অন্য অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি দ্রুতই সম্পন্ন করা হবে। ছাত্রদল ও যুবদলের ইউনিট কমিটি দিতে বিএনপি চেয়ারপারসন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনাও দিয়েছেন।

জেলা কমিটি পুনর্গঠন প্রসঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৪০টির মতো জেলা কমিটি দেওয়া হয়েছে। আরও অন্তত ২০টি জেলা কমিটি যে কোনো সময় ঘোষণা করা হবে। আশা করছি, খুব শিগগিরই সাংগঠনিক সব জেলা কমিটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ হবে।’

সর্বশেষ খবর