মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিএনপিকে মাথায় রেখেই প্রস্তুতি আওয়ামী লীগে

রফিকুল ইসলাম রনি

বিএনপিকে মাথায় রেখেই প্রস্তুতি আওয়ামী লীগে

বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ধরে নিয়েই হ্যাটট্রিক জয়ের লক্ষ্যে তৃণমূলে ভোট ব্যাংক বাড়াতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ভোটের কথা ভাবনায় নিয়ে আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক মিত্র খোঁজা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগও শুরু হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতারাও প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কোন্দল মেটাতে জেলা সফরের পাশাপাশি ঢাকা ডেকে এনে বিরোধ মীমাংসা করা হচ্ছে। তৃণমূল সফরে দলের সব নেতা-কর্মীই দলের আদর্শ ও নীতি-নৈতিকতা সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরছেন। সঙ্গে তুলে ধরছেন পরপর গত ২ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশের উন্নয়নের চালচিত্র। খোঁজ নিচ্ছেন দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের সুবিধা-অসুবিধার। দলের যেসব নেতা-কর্মীর মধ্যে মানঅভিমান রয়েছে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে মীমাংসা করা হচ্ছে। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক দলের সিনিয়র নেতারা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে নির্বাচনের জন্য সাংগঠনিকভাবে দলকে মজবুত করতে শুরু করেছেন। একাধিক নীতিনির্ধারক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনের সময় আরও কিছুটা ঘনিয়ে এলে ১৪-দলীয় জোটের আকার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলোরও সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ চলছে। কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মোর্চা গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে একাধিক নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেই ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তির জন্য আওয়ামী লীগের দরজা খোলা রয়েছে। নতুন বন্ধুদের নিয়ে নির্বাচনী মোর্চা গড়া হলে কয়েকটি আসনে প্রার্থী ভাগাভাগি করবে ক্ষমতাসীন দল। 

দলীয় সূত্রমতে, প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতাপূর্ণ নির্বাচনকে মাথায় রেখে নির্বাচনী এলাকার খোঁজখবর নিচ্ছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। দলীয়ভাবে ছাড়াও আরও দুটি মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছেন সভানেত্রী। আগামী নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর মোকাবিলায় উপযুক্ত হবে—এই চিন্তায় বেশ কিছু আসনে নতুন মুখ আনতে পারে আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সম্পাদক নূর-ই আলম চৌধুরী লিটন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে অন্য দলের প্রার্থীর মনোনয়নকে বিবেচনায় রাখা হবে। কারণ কার সঙ্গে কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। সে বিবেচনায় প্রার্থী পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক বিষয়। যারা মানদণ্ডে টিকবেন না তারা মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতা-কর্মী ও এমপিদের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করতে বলেছেন। নেতা-কর্মীরাও সে লক্ষ্যে কাজ করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন মাথায় রেখেই আমরা তৃণমূলকে সংগঠিত করছি। 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, তাদের দল নির্বাচনমুখী দল। একটি নির্বাচন শেষ হওয়ার পর আরেকটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। নির্বাচনের এখনো প্রায় দুই বছর বাকি। এই সময়ের মধ্যে সরকারের উন্নয়ন জনগণের সামনে তুলে ধরব। তৃণমূল আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করব। এ জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা কাজ শুরু করেছেন বলেও জানান তিনি। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, আওয়ামী লীগের এই দুই মেয়াদে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা বাংলাদেশ সৃষ্টির আগে কখনই হয়নি। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। বিগত দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জনগণ ম্যান্ডেট দেওয়ায় এত উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। একাদশ নির্বাচনেও দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রাখবে এবং মানুষের ভালোবাসা নিয়ে হ্যাটট্রিক জয় করবে। আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, দলের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে দলীয় এমপিদের নিজ নিজ এলাকায় জনসংশ্লিষ্টতা বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় কোন্দল থাকলে তা নিরসনের নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে। যেসব সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে তাদের ঢাকায় ডেকে এনে সতর্ক করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও সরকার দলীয় এমপিদের ঢাকায় ডেকে এনে নিজেদের অন্তঃকোন্দল নিরসনের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। গতকাল যশোর জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন ড. আবদুর রাজ্জাক, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আবদুস সোবহান গোলাপ, বিএম মোজাম্মেল হক, এনামুল হক শামীম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, অসীম কুমার উকিল, ফরিদুন্নাহার লাইলী, আফজাল হোসেন, বিপ্লব বড়ুয়া, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদারসহ জেলার এমপিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোন্দল নিরসন এবং উপজেলা পূর্ণাঙ্গ কমিটি দ্রুততম সময়ে করার নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জেলা নেতাদের ঢাকায় ডেকে কথা বলা হচ্ছে। বিরোধপূর্ণ জেলাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকলে নির্বাচনী ফলাফল আমাদের জন্য ভালো হবে না। জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রায় দুই বছর সময়ের মধ্যে কোন্দলমুক্ত করে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে নিয়ে নির্বাচনে যাব।

সর্বশেষ খবর