মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবে জাতীয় পার্টি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবে জাতীয় পার্টি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। তবে সমঝোতায় বেশি আসন পাওয়ার জন্য কিছু ইসলামী দল ও ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী সংগঠনের সঙ্গে জোট করবে দলটি। জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ে কথা বলে দলটির এ অবস্থানের কথা জানা গেছে। দলটির নেতারা জানান, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলেও জাতীয় পার্টির নির্বাচনী কৌশল এমনটাই হবে। আর  কোনো কারণে বিএনপি গতবারের মতো নির্বাচনী ময়দানে না এলে এ জোট নিয়ে এককভাবে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়া বা না নেওয়া, তখনকার রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতি এসব কিছুর ওপরই নির্ভর করবে তাদের সমঝোতার ধরন কী হবে। এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনে জোট করার ব্যাপারে দলীয় প্রেসিডিয়াম বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, যে কোনো সময় জোট আত্মপ্রকাশ করবে। অন্তত ১০টি নিবন্ধিত দলের সঙ্গে আমরা বসব। এরপরই চূড়ান্ত হবে। মহাসচিব বলেন, জোট নিয়ে আমরা চমকপ্রদ কিছু দেওয়ার অপেক্ষা করছি। নতুন এই জোটের চেয়ারম্যান হবেন জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামীতেও জোট গঠন করে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে যাবে। তবে এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করার কোনো আলোচনা দলে নেই। জানা গেছে, এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জোটের নাম হবে ‘জাতীয় মহাজোট’। এপ্রিলে জাতীয় মহাজোট ঘোষণার কথা থাকলেও নিবন্ধিত ও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল এখনো না আসায় জাতীয় মহাজোটের ঘোষণা নির্ধারিত সময়ে ঘোষণা করা যাচ্ছে না। ৩৪টি ইসলামপন্থি অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিয়ে সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জাতীয় ইসলামী মহাজোট’ নামে একটি নয়া জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এইচ এম এরশাদ ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এই জোট জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট বাঁধবে। এই জোটে আরও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল থাকার কথা রয়েছে। তবে শোনা যায়, জাতীয় ইসলামী মহাজোটের প্রায় প্রতিটি সংগঠনই প্যাড সর্বস্ব ও কাগজে-কলমে। তাদের অধিকাংশেরই নেই দলীয় কার্যালয়সহ নেতা-কর্মী। জানতে চাইলে পার্টির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, প্রথমত আমরা একক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের মিত্রতা রয়েছে। তা ছাড়া রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। সাংগঠনিকভাবে পার্টির চেয়ারম্যানের এ ক্ষমতা রয়েছে। পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজ রহমান বলেন, ২৫ মার্চের প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে জোট গঠন এবং একক নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, পার্টির চেয়ারম্যানের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। দেশ এবং জাতীয় স্বার্থে সাবেক এ রাষ্ট্রপতি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, আমরা তাই অনুসরণ করব। নেতা-কর্মীরা জানান, আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি। এ দলটি আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে আর জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে প্রার্থী দিলে ম?ূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসা দলের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। নির্বাচনে তৃতীয় শক্তি হিসেবে জাতীয় পার্টি কতটুকু অবস্থান করে নিতে পারবে এবং কতগুলো আসনে বিজয়ী হতে পারবে তা নিয়ে দলের মধ্যে নানা হিসাব-নিকাশও রয়েছে।  আবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে টানা দুই বার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগকে একটা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হবে। আগামীতেও সরকার গঠনের জন্য নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিশ্চিত করতে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টি আওয়ামী লীগ গুরুত্ব দেবে। তারা বলেন, আলাদাভাবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিলে সংসদে আসন সংখ্যা কী দাঁড়াবে সে বিষয়টিও জাতীয় পার্টির নীতি-নির্ধারকদের ভাবনায় রয়েছে। আওয়ামী লীগও রাজনৈতিক কৌশগত কারণে সংসদে বর্তমান প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে সুবিধাজনক অবস্থানেই পেতে চায়। তা ছাড়া জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ও যারা মন্ত্রিসভায় রয়েছেন, তারা আসন সমঝোতার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনেও অংশ নেওয়ার পক্ষে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির এক নেতা ও সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচনও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে হওয়ার পক্ষে আমার মত। তবে এ বিষয়টি নিয়ে আমরা এখনই কথা বলতে চাই না।

কওমি স্বীকৃতি প্রধানমন্ত্রীর ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত : প্রধানমন্ত্রী কওমি সনদের স্বীকৃতি দিয়ে এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি। তিনি বলেন, কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে সরকারিভাবে এম এ মান প্রদান ও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে মূর্তি অপসারণের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর সাহসী সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, স্বীকৃতির ফলে লাখ লাখ কওমি শিক্ষার্থী উপকৃত হবে। দেশ, জাতি ও ইসলামের খেদমতে তারা আরও ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। গতকাল শ্যামপুর-কদমতলী থানার যৌথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় আরও বক্তব্য দেন পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সুজন দে, শেখ মাসুক রহমান, কাওসার আহমেদ, ইব্রাহিম মোল্লা, শাহ ইমরান রিপন প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর