বুধবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

এবার জিএসপি স্থগিতের হুমকি ইইউর

ফেব্রুয়ারির ঘটনায় ক্ষুব্ধ ১৮ মে ঢাকায় বৈঠক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার সাভার ও আশুলিয়ায় ঘটে যাওয়া শ্রমিক অসন্তোষ সামলাতে সরকার সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেনি বলে মনে করছে বাংলাদেশকে অস্ত্র ব্যতীত আর সব পণ্যে (ইবিএ) জিএসপি সুবিধা দেওয়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। এখন তারা তাদের শর্ত মানতে বাংলাদেশকে বাধ্য করতে চাইছে। ট্রেড ইউনিয়ন ইস্যুতে তারা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর বাংলাদেশের প্রাপ্য জিএসপি সুবিধা স্থগিতের হুমকি দিচ্ছে।

সূত্র জানায়, আসছে মে মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় সাসটেইনেবল কমপ্যাক্ট বৈঠকে বাংলাদেশ অংশীদারদের সন্তুষ্ট করার জন্য শেষবারের মতো সময় পাবে বলে জানিয়ে দিয়েছে ইইউ। তারা বলেছে, ওই সময় তৈরি পোশাক খাতে শ্রম-ইস্যু ও মানবাধিকার প্রশ্নে সরকারের স্পষ্ট জবাব পাওয়া না গেলে তারা (ইইউ) পরের মাস অর্থাৎ জুনে একটি অনুসন্ধান দল পাঠাবে। ওই দলটি বাংলাদেশের (ইইউ-এর কাছে প্রাপ্ত) জিএসপি সুবিধা স্থগিতের বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।

জানা গেছে, ১৮ মের ওই বৈঠকে অংশীদার  হিসেবে ইইউ-এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাও থাকবে। তারাও বাংলাদেশের শ্রম ইস্যুর পাশাপাশি ‘মানবাধিকার’ এবং ‘সুশাসন’ ইস্যুতে সরকারের অবস্থান জানতে চাইবে। ব্রাসেলসে ইইউ বাংলাদেশ মিশনের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর মোহাম্মদ জহুরুল কাইয়ুম সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এই ইস্যুতে একটি জরুরি বার্তা পাঠিয়েছেন। মিশন প্রতিনিধি বলেছেন, ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) ডিজি ট্রেড সান্দ্রা গ্যালিনা, ডিরেক্টর জরদি কারেল (ডিজি অ্যামপ্লয়মেন্ট) এবং এমডি ইইএএস লট নুডসনের যৌথ স্বাক্ষরে ব্রাসেলসে বাংলাদেশ মিশনে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করে বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক খাতে তারা বাংলাদেশকে যেসব শর্ত দিয়েছিল সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে কি না সেটি অনুসন্ধান করতে আগামী জুনে একটি টিম আসবে। তাদের অনুসন্ধানে নেতিবাচক তথ্য গেলে ইইউ-এর দেওয়া ইবিএ সুবিধা সাময়িকভাবে স্থগিত হতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ইইউ এর এই অবস্থান সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্যও করেছেন। তিনি ইপিজেডে শ্রমিকদের কল্যাণে ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন করার পরামর্শ দিয়েছেন। এর আগে গত ২০ এপ্রিল জার্মানির একটি প্রতিনিধি দল বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে দেখা করে ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়নের পরামর্শ দেওয়ার পর বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ইপিজেডে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনের বিষয়ে সরকার বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। রানা প্লাজা ধসের পর ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের দেওয়া বেশিরভাগ শর্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছে— এমনটি উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা জানান, ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন সুবিধাসহ দু-একটি ইস্যুতে মতভেদ রয়েছে- অংশীদারদের সঙ্গে যা নিয়ে আলোচনা চলছে। অবশ্য এখন তারা আবার গত ফেব্রুয়ারিতে সাভার ও আশুলিয়াতে ঘটে যাওয়া শ্রমিক অসন্তোষ ও সেই প্রেক্ষিতে করা মামলাগুলো নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তারা ‘মানবাধিকার’ ও ‘সুশাসন’ এই দুটি ইস্যুতেও জোরালো অবস্থান গ্রহণ করেছেন। ফেব্রুয়ারির ঘটনা নিয়ে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তা সংগঠন বিজিএমইএ সরকারকে বলেছিল, ওটি একটি ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ ঘটনা যেখানে পোশাক খাতের সুনাম নষ্ট করতে চাইছে একটি চক্র। এ নিয়ে মামলাও হয়।   সূত্র জানায়, ফেব্রুয়ারির ঘটনায় ক্ষুব্ধ ইইউ ৬ এপ্রিল প্রেরিত একটি মেইলে জানিয়েছে, আগামী ১৮ মে কমপ্যাক্ট পর্যালোচনা সভায় সিএএস (কমিটি অন দ্য অ্যাপ্লিকেশন অব স্ট্যান্ডার্ড ) বর্ণিত স্পেশাল প্যারাগ্রাফের বিষয়ে একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা বাংলাদেশকে স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করতে হবে। জানা গেছে, আইএলও এবং কমিটি অন দ্য অ্যাপ্লিকেশন অব স্ট্যান্ডার্ডের দেওয়া সুপারিশের মধ্যে ৪টি বিষয় রয়েছে যেগুলো জানতে চাওয়া হবে। বিষয়গুলোর অন্যতম হলো : বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ; ইপিজেড আইনের প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ এবং  ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিতকরণ। সূত্রটি আরও জানায়, ব্রাসেলস বাংলাদেশ মিশন থেকে যে বার্তা পাঠানো হয়েছে সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ইইউ শ্রমিক অধিকার এবং ট্রেড ইউনিয়ন করার বিষয়ে বাংলাদেশকে শেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন ইইউ যদি কোনো ধরনের অবরোধ আরোপ করে অথবা ইবিএ সুবিধা স্থগিত করে তাহলে সেটি দেশের তৈরি পোশাকের ওপর শুধু নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা নয়, উপরন্তু চিংড়ি চামড়া ইত্যাদি পণ্য রপ্তানির ওপরও তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ইইউ-এর চিঠিতে যা আছে : বাংলাদেশকে দেওয়া ইইউ-এর পত্রে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ২০১৬ সালের জুনে বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি এবং সংগঠনের স্বাধীনতা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি স্পেশাল প্যারাগ্রাফ গ্রহণ করে। আইএলও ওই প্যারাগ্রাফের বিষয়ে তাদের উদ্বেগ জানিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আইএলও গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের আটকসহ নির্যাতন ইত্যাদি বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ইইউ-ও নিয়মিতভাবে ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের নিপীড়ন, নির্যাতন বিষয়ে রিপোর্ট পেয়েছে, যা শ্রমিক অধিকার পরিস্থিতির অবনতি নির্দেশ করে।

সর্বশেষ খবর