শিরোনাম
বুধবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
মমতার আবদার

আত্রাই নদী থেকে বাঁধ তুলে নিন

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

আত্রাই নদী থেকে বাঁধ তুলে নিন

পশ্চিমবঙ্গের বালুর ঘাটের ওপর দিয়ে বয়ে চলা আত্রাই নদীর বাঁধ তুলে নিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ জানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল কোচবিহার জেলার রাসমেলার মাঠে অনুষ্ঠিত এক সভায় মমতা বলেন, ‘আজকে বালুর ঘাটে সমস্যা হচ্ছে। ওখানে আত্রাই নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে দেওয়া হচ্ছে। আমি বাংলাদেশের বন্ধু সরকারকে অনুরোধ    করব, আত্রাই নদীর বাঁধ তুলে দিন, আমাদের বালুর ঘাটের লোকেরা পানি পাচ্ছে না।’ এদিন ফারাক্কা প্রসঙ্গটিও তোলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে পানি দিয়েছিলাম। কিন্তু তার ফলে কত গ্রাম ভেসে গেছে। ফারাক্কা বাঁধে নদী শুকিয়ে গেছে, কলকাতা বন্দর শুকিয়ে গেছে। একটা ড্রেজিং পর্যন্ত করা হয় না।’

এর আগে তিস্তা নিয়েও ফের নিজের বক্তব্য স্পষ্ট করেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘আজকে আমি পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই যে, বাংলাদেশকে আমরা খুব ভালোবাসি। বাংলাদেশ পানি চায়, আমাদের তাতে আপত্তি নেই। তবে আমি বলেছিলাম, পানি যেখানে আছে সেখান থেকে দেব, কিন্তু যেখানে নেই সেখান থেকে কী করে দেব। তিস্তায় পানি নেই। তিস্তার পানি চলে গেলে শিলিগুড়ির লোক পানি পাবে না। জলপাইগুড়ির লোক পানি খেতে পাবে না। কৃষক চাষ করতে পারবে না।’ তিস্তার পানির বদলে বিকল্প ব্যবস্থা সম্পর্কে মমতা বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, আপনারা বিকল্প ব্যবস্থা দেখুন। যেখান থেকে পানি গেলে সমস্যা হবে না। সংকোশের পানি আমায় ভাসিয়ে দিয়ে চলে যায়। কেন পরিকল্পনা করেন না? ওখান থেকে পানি নিয়ে যান না। তোর্সা, ধানসাই, মানসাই আছে ওখানে থেকে নিয়ে যান, আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি বাংলা (পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য)-কেও ভালোবাসি, বাংলাদেশকেও ভালোবাসি। বাংলাদেশ আমার বন্ধু দেশ।’ এ সময় ছিটমহল প্রসঙ্গটিও টেনে আনেন মমতা। বলেন, ‘আমরা ৭০ বছরের পুরনো ছিটমহল সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি। কই আমায় তো বলতে হয়নি। আমি নিজে ছিটমহলে গিয়েছি। ওখানকার মানুষ চেয়েছে, আমরা করে দিয়েছি। ওখানকার মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশে গেছে, ভারতের মানুষ ভারতে এসেছে। তাদের ঘরবাড়ি, খাবারদাবার সব করে দিয়েছি।’ এর আগে সোমবার কোচবিহারে প্রশাসনিক বৈঠকের পরই তিস্তা নিয়ে নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন মমতা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিস্তার বদলে বিকল্প ব্যবস্থার ওপর জোর দেন তিনি। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরেও প্রতিবেশী দেশকে তিস্তার পানির বদলে বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিলেন মমতা। ৮ এপ্রিল হাসিনার সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পর মমতা জানান, ‘তিস্তা আমাদের লাইফলাইন, উত্তরবঙ্গের লাইফলাইন। এর পানি বণ্টন নিয়ে আমাদের সমস্যা রয়েছে। তিস্তার পানি দিলে রাজ্য আরও বিপন্ন হয়ে পড়বে।’ এর বদলে আরও চারটি বিকল্প নদীর প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী। দুই দেশের সরকারকেই এ নিয়ে ভেবে দেখার অনুরোধও জানান তিনি। যদিও মমতার সেই বিকল্প প্রস্তাবে মোদি কিংবা হাসিনা কেউই সাড়া দেননি। এমন এক পরিস্থিতিতে প্রতিটি অনুষ্ঠান-সভা থেকেই তিস্তা নিয়ে সরব হচ্ছেন মমতা। পানির বণ্টন নিয়ে প্রতিবারই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর