শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

২৪ দিন পর মায়ের কোলে সুমাইয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ দিন পর মায়ের কোলে সুমাইয়া

২৪ দিন চোখের আড়ালে ছিল নাড়িছেঁড়া ধন। মায়ের কোলে ফিরে তাই বাঁধভাঙা আনন্দে মেতে ওঠে শিশু সুমাইয়া —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে অপহরণের শিকার পাঁচ বছরের শিশু সুমাইয়া ২৪ দিন পর তার মা-বাবার কোলে ফেরেছে। বুধবার রাত ২টার দিকে রাজধানীর কদমতলী থানা এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের পর রাতে তাকে থানায় রাখা হয়। পরে সকালে তার বাবা-মাকে ডেকে পাঠানো হয় থানায়। সেখানে গিয়ে মেয়েকে দেখে মা মুনিয়া বেগম ও বাবা জাকির হোসেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। তাদের কোলে ফিরে সুমাইয়া বলতে থাকে, ‘আব্বু-আম্মু আসছ? আমাকে তোমরা খুঁজছিলে?’—এই বলেই সে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। পুলিশ ইতিমধ্যে এ ঘটনায় সাবিনা আক্তার বৃষ্টি ও তার বাবা সিরাজ মিয়া ওরফে বাবুল নামের দুজনকে গ্রেফতারও করেছে। আরও তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এরা হলেন আনিস, বেলাল ও নাসির। গতকাল মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান। প্রেস ব্রিফিংয়ের পরই সাবিনা আক্তার বৃষ্টি ও সিরাজ মিয়াকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত। এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাজীবুল ইসলাম আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। প্রেসব্রিফিং শেষে সুমাইয়াকে তার বাবা-মায়ের কোলে তুলে দেয় পুলিশ। একমাত্র সন্তানকে কাছে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা তারা। এ সময় সুমাইয়াও চঞ্চল হয়ে ওঠে। একবার সে বাবার কোলে, কিছু পরে আবার মায়ের কোলে উঠতে থাকে। এ সময় সেখানে উপস্থিত সবার মাঝে স্বস্তির আনন্দ বয়ে যায়। মেয়েকে ফিরে পাওয়ার পর সুমাইয়াকে কোলে নিয়ে বাবা জাকির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তার মেয়ে সুস্থ আছে, সবার সঙ্গে কথা বলছে। কিন্তু কেন তাকে অপহরণ করা হয়েছিল সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। পরক্ষণে মেয়েকে নিজের কোলে তুলে মা মুনিয়া বেগম বলেন, আমার মেয়েটা অনেক লক্ষ্মী। ওকে যাই বলি, তাই শোনে। আমার কোনো কথার অবাধ্য হয় না। ৩ এপ্রিল বিকাল ৫টার দিকে কামরাঙ্গীরচরের বড়গ্রামে বাসার সামনে থেকে নিখোঁজ হয়েছিল শিশু সুমাইয়া। মেয়ের খোঁজে ওই দিনই কামরাঙ্গীর চর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন স্থানীয় একটি কারখানায় কর্মরত জাকির। ঘটনার ২২ দিন পর পুলিশ আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানতে পারে, সুমাইয়াকে অপহরণ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে সোমবার একই থানায় অপহরণের একটি মামলা করা হয়। পুলিশ কর্মকর্তা ইব্রাহীম খান জানান, বড়গ্রামে জাকিরের বাসার তিন বাড়ি পরেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার মোহাম্মদ হোসেনের বাসা। ওই বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে কালো বোরকা পরা এক নারীকে শিশুটির হাত ধরে হেঁটে যেতে দেখা যায়। এরপরই অপহরণকারীকে শনাক্তের জন্য মাঠে নামে পুলিশ। তবে জাকির বলেন, তাদের পাশের বাসায় এক দম্পতি ভাড়া থাকতেন গত আট মাস আগে। প্রাথমিকভাবে তার সন্দেহ ছিল প্রতিবেশী ওই নারীই তার সুমাইয়াকে নিয়ে যেতে পারে। পরবর্তীতে ওই নারীই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন ফকির জানান, শিশু অপহরণের সঙ্গে কোনো সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তথ্য বের করা হবে।

সর্বশেষ খবর