শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

সমুদ্রপথে নাশকতার রসদ আনতে চেয়েছিল জঙ্গিরা

প্রকৌশলী থেকে তারা এখন জঙ্গি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সমুদ্রপথে নাশকতার রসদ আনতে চেয়েছিল জঙ্গিরা। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আঁকা হয়েছিল ছক। ভয়ঙ্কর সব হামলার কাঁচামাল নিরাপদে পরিবহন ও খালাসের জন্য আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলাচলকারী জাহাজে কর্মরত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছিল। তাদের অনেককে ইতিমধ্যেই জঙ্গি মতাদর্শে উদ্বুদ্ধও করেছিল জঙ্গিরা। তবে বিধিবাম। সব প্রস্তুতি শেষ করার পর দুই সহযোগীসহ ধরা পড়ে গেলেন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তি নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষ জঙ্গি মেরিন ইঞ্জিনিয়ার তামীম দ্বারী ওরফে আবদুল্লাহ আল হাসান ওরফে আজিজুর রহমান ওরফে আবদুল্লাহ আল জাফরি ওরফে আমীর হামজা ওরফে আল হুযাইফা ওরফে শ্রী গৌরাঙ্গ কুমার মণ্ডল (৩২)। বাকিরা হলেন, কামরুল হাসান ওরফে কাজল ওরফে নুরউদ্দিন (২৬) ও মো. মোস্তফা মজুমদার ওরফে শিহাব ওরফে হামজা (৩২)। সাভারের রাজফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের একটি বাস থেকে গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে এই তিনজনকে  গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪ এর একটি দল। র‌্যাব বলছে, এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, গুলি, প্লাস্টিক বিস্ফোরকসহ আইইডি তৈরির সরঞ্জামাদি, চাপাতি,  ফোল্ডিং চাকু ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল কারওয়ান বাজারের র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, তামীম দ্বারী ধর্মান্তরিত একজন মুসলিম। তিনি নব্য জেএমবির অন্যতম নেতা তামীম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা ছিলেন। তামীম দ্বারী ২০০৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তাবলিগ জামাতে চলে যান। তাবলিগে গিয়ে পরিচয় হয় তানভীর কবির নামের একজনের সঙ্গে। তানভীর তাকে তার বাড়িতে নিয়ে যান এবং তার বাবা তামীমকে পালক সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেন। ২০০৫ সালে তামীম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে মাত্র ৭/৮ মাস পড়াশোনা করেন। পরে ভর্তি হন মেরিন একাডেমিতে। সেখান থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পর ২০১০-২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বাংলার কাকলিসহ বিভিন্ন জাহাজে ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি করেন। একই জাহাজে একাডেমিক জুনিয়র আবু বক্করও চাকরি করতেন। ২০১৩ সালে ‘বাংলার কাকলি’ জাহাজ নিয়ে পাকিস্তানে যাওয়ার সময় বিশ্বে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়নের বিষয়ে একজন মুসলিম হিসেবে তার করণীয় কী সে বিষয়ে আবু বক্করের সঙ্গে তার আলোচনা হয়। আবু বক্কর তখন জিহাদের কথা বলেন। এরপর তামীম জিহাদ সম্পর্কে আগ্রহী হন। ওই বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি আবুবক্কর মিরপুর ১১ নম্বরে তামীম চৌধুরীর সঙ্গে তামীম দ্বারীর পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় তামীম চৌধুরী তাকে সশস্ত্র জিহাদে উদ্বুদ্ধ করেন। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, তামীম চৌধুরীর সঙ্গে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় তামীম দ্বারীর দেখা হয়। এ সময় তামীম দ্বারী জঙ্গি নেতা তামীম চৌধুরীকে ‘বাংলার দূত’ জাহাজ ঘুরিয়ে দেখান। তখন তামীম চৌধুরী নৌপথে পরিবহনের জন্য বিশ্বস্ত লোকের প্রয়োজনের কথা বলেন। যাতে বিদেশ থেকে তাদের মাধ্যমে নাশকতার রসদ আনা যায়। এরপর তারা ভুয়া পাসপোর্ট, ভিসা  তৈরি করে তাদের সমমনা তরুণদের জাহাজে চাকরি দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। ২০১৪ সালের মাঝামাঝিতে তামীম চৌধুরীর সঙ্গে ফের মিরপুরের একটি বাসায় দেখা করেন তামীম দ্বারী। সেখানে মীর ফরহাদ, আশরাফ, হিমেল, আবদুল্লাহ, আবু বক্কর এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২/৩ জন জঙ্গি ছিল। তখন দেশের ভিতরে নাশকতার পরিকল্পনা করে তারা। এর কিছুদিন পর তামীম দ্বারীর পতেঙ্গার বাসায় যান তামীম চৌধুরী। ২০১৫ সালের জুলাইতে তামীম দ্বারী আইএমটিএ তে ভর্তি হন। এ সময় তামীম চৌধুরীর সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তার দেখা হয়। তামীম দ্বারী জঙ্গিবাদে তার সংশ্লিষ্টতা গোপন করতে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে ২০১৬ সালের আগস্টে দেশীয় একটি জাহাজে যোগ দেন। ওই বছরের নভেম্বরে তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তিনি হিজরতের উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন। তার সহযোগী কামরুল হাসানের বাবা বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত। তার বাবা বিডিআরের হাবিলদার ছিলেন। তার সাত বছরের সাজা হয়েছে। তার আরেক সহযোগী মোস্তফা মজুমদার ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি ২০০৭ সালে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের কর্মকর্তা পদে কুমিল্লা জেলায় কর্মরত ছিলেন। মোস্তফাও হিজরতে ছিলেন। মুফতি উসমান ও জনৈক ডা. ইকবালের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলেও জানায় র‌্যাব।

সর্বশেষ খবর