রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

দল গোছাতে চান খালেদা বার্তা নিয়ে মাঠে ৫১ টিম

মাহমুদ আজহার

ঈদের আগেই দল গোছাতে সংশ্লিষ্ট নেতাদের বার্তা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ জন্য দ্রুততার সঙ্গে গঠন করা হচ্ছে জেলা কমিটিগুলো। এরই মধ্যে ৮১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৩৬টির কমিটি ঘোষণা হয়েছে। যে কোনো দিন ঘোষণা হবে আরও অন্তত ১০টি জেলা কমিটি। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার পাশাপাশি কোন্দল নিরসনে জেলা পর্যায়ে পাঠানো হচ্ছে ৫১টি সাংগঠনিক টিম। দলকে চাঙ্গা করতে কর্মিসভার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির বার্তাও দেওয়া হবে তৃণমূল নেতৃত্বকে। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তৃণমূল সফর প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে ৫১টি টিম দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। সেখানে আমাদের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হবেন। তারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন। আন্দোলন, নির্বাচনসহ সব বিষয়  সেখানে আলোচনা হবে। আমরা আশা করছি, এই সফরে আমাদের দলের শক্তি আরও বৃদ্ধি পাবে। নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত হবে ভবিষ্যতের কার্যক্রমের জন্য।’ জানা যায়, তৃণমূলে সাংগঠনিক সফর ২২ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে। কিন্তু গত ৮ দিনে দু-একজন বাদে দায়িত্বশীল কোনো নেতাই এখনো জেলা সফরে বের হননি। আগামী ৭ মে’র মধ্যে এ সফর শেষ করতে বলা হয়েছে। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক নেতা জানান, জেলা পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা চলছে। কেউ কেউ ঢাকায়ও প্রস্তুতি সভা করছেন। আশা করছি, দু-এক দিনের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত সব নেতাই এলাকায় চলে যাবেন। তবে এ কাজের জন্য সময়সীমা আরও বাড়ানো হতে পারে বলেও একাধিক নেতা জানান।  একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ের সংগঠনের অবস্থা, আন্দোলন ও নির্বাচন প্রস্তুতিসহ করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে মাঠ নেতাদের সঙ্গে টিমপ্রধানরা ঘরোয়া আলোচনা করবেন।  যেখানে  যেখানে কমিটি নিয়ে বিরোধ ও গ্রুপিং আছে সে বিষয়েও অবহিত হবেন নেতারা। যতদূর সম্ভব তা নিরসনের চেষ্টা করা হবে। না পারলে তা রিপোর্ট আকারে তৈরি করে দেওয়া হবে দলপ্রধান বেগম খালেদা জিয়ার হাতে। একই সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের কার কী অবস্থান, নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী কারা হতে পারেন এমন বার্তাও দেওয়া হবে শীর্ষ নেতৃত্বকে। বিএনপির দফতর শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা জানান, সাংগঠনিক সফরে কারা গেল, না গেল এ বিষয়টি এখনই বিবেচনা করা হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়সীমা পর্যন্ত দেখা হবে। এরপর কেউ যদি না যান, তা দলের হাইকমান্ডকে অবহিত করা হবে। কেন তারা যাননি, সে ব্যাখ্যাও হাইকমান্ডকে তাদের দিতে হবে। বিষয়টি দলের চেয়ারপারসন নিজেই দেখভাল করছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘রাজনৈতিক দল তৃণমূল সফর করে নানা কারণে। সেখানে যেমন থাকে সাংগঠনিক বিষয় আবার আলোচনা হয় চলমান পরিস্থিতি। নির্বাচনের বিষয়েও নেতা-কর্মীরা মতামত দিতে পারেন। বিএনপি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হিসেবে নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কথা শুনতে এবং দলের বার্তা পৌঁছে দিতেই তৃণমূল সফর।

জানা যায়, বিএনপির তৃণমূলের সাংগঠনিক অবস্থা বেহাল। বেশ কয়েকটি জেলা ও মহানগরে নতুন কমিটি দেওয়ার পরও কোন্দলের মাত্রা বেড়ে গেছে। রাজশাহী মহানগর ও জেলায় নতুন নেতৃত্ব এলেও এখনো গতিশীল হতে পারেনি সংগঠন। আগের নেতৃত্ব ও বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে এখনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত চরমে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও বিভক্ত। নতুন নেতৃত্বকে রুখতে রাজশাহী মহানগরে দলীয় অফিসে তালাও দেওয়া হয়। বরিশাল বিভাগের সব জেলায়ই দলীয় কোন্দল বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় নতুন নেতৃত্ব এলেও ভিতরে ভিতরে চলছে গ্রুপিং-কোন্দল। সিলেট বিভাগ ও জেলায় নতুন কমিটি হয়েছে। কিন্তু সেখানেও প্রাণ ফিরে পায়নি সংগঠন। ছয় নেতাকে অব্যাহতি দেওয়ার পর থেকে এখনো খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপিতে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। অব্যাহতি পাওয়া নেতারা খুলনা মহানগর বিএনপির সব ধরনের কর্মকাণ্ড ও সম্মেলন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন। এর পরপরই  সোনাডাঙ্গা, খুলনা সদর,  দৌলতপুর, খানজাহান আলী ও খালিশপুর থানার সম্মেলন স্থগিত করা হয়। নগর বিএনপি সভাপতিকে অবাঞ্ছিত করার ঘোষণা, কুশপুত্তলিকা পোড়ানোসহ বিক্ষোভ-সমাবেশও চলে খালিশপুরে।

ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা, উত্তর জেলা বিএনপি ও মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনকে ঘিরেও দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে পুরনো কোন্দল এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে। দলটিতে এখন পদ-পদবিকে ঘিরেই চলছে ব্যাপক লবিং গ্রুপিং। কমিটি হচ্ছে, হবে করতে করতে গড়িয়েছে বেশ কিছু দিন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, যে কোনো দিন ঘোষণা করা হবে ময়মনসিংহের তিন সাংগঠনিক জেলার কমিটি। এ নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটছে ময়মনসিংহ জেলা দক্ষিণ, উত্তর ও মহানগরের অন্তত দুই ডজন পদপ্রত্যাশী নেতার। ফেনী বিএনপির নতুন কমিটিকে ঘিরে শুরু হয়েছে ব্যাপক লবিং-গ্রুপিং। দীর্ঘ ৮ বছর কাউন্সিল না হওয়ায় জেলাটি এখন অন্তর্কোন্দলে জর্জরিত। নতুন কমিটিকে ঘিরে ঝিমিয়ে পড়া  নেতারা পদ-পদবির আশায়  জোর তৎপরতা শুরু করেছেন। বরিশাল মহানগরে শুরু হয়েছে নতুন করে তৎপরতা। গতকাল যুবদলের পদবঞ্চিত নেতাদের একটি অংশ জেলা ও মহানগর বিএনপি অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ নিয়ে চলছে চরম উত্তেজনা। বিএনপির যুগ্ম ও মহানগর সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ারকেই চান নেতা-কর্মীদের একটি অংশ। তবে তিনি কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব হওয়ায় মহানগরের শীর্ষ পদে যেতে অনেকেই নানামুখী লবিং গ্রুপিং শুরু করেছেন। আন্দোলনের সময় নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখা সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামালও মহানগরের দায়িত্ব পেতে তৎপরতা শুরু করেছেন। বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুক ও মহানগরের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আলী হায়দার বাবুলও এ পদে আগ্রহী। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন শিকদার ছাড়াও এ পদের জন্য তৎপর মজিবর রহমান সরোয়ারের  ছোটভাই মিজানুর রহমান অহিদ, মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি মনিরুল আহসান মনির শীর্ষ পদে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম জানান, ‘বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। কমবেশি মতবিরোধ থাকবে— এটাই স্বাভাবিক। দলকে গুছিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যেই বিএনপি কাজ করে যাচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর