সোমবার, ১ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আইন হলে বাতিল : প্রধান বিচারপতি

জবি প্রতিনিধি

সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আইন হলে বাতিল : প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ন করে ভবিষ্যতে সংবিধানের কোনো বিধান বা অন্য কোনো আইন সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে তা বাতিল করতে সুপ্রিম কোর্ট পিছপা হবে না। গতকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ভূমি আইন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও প্রথম ব্যাচের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, জাতীয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য ঐকমত্য হলেই সংবিধান সংশোধন করতে পারেন। শুধু দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যই নন, পুরো সংসদ মিলে যদি সংবিধানকে পরিবর্তন করে দেন, কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট যদি দেখে এতে সংবিধানের মূল ভিত্তি নষ্ট হয়ে গেছে, আইনের শাসন ও বিচার  বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে এবং জনগণের অধিকারের ওপর আঘাত হয়েছে, তাহলে সংসদের ওই সিদ্ধান্তকে সুপ্রিম কোর্টের বেআইনি ঘোষণা করার ক্ষমতা রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রধান বিচারপতির কথা বেশি বের হয় কারণ দেশে এখনো পূর্ণ আইনি শাসন প্রতিষ্ঠা পায়নি। অন্যান্য দেশে প্রধান বিচারপতিরা এত কথা বলেন না। কারণ সেসব দেশে আইনি শাসন রয়েছে। আইন সবার জন্য সমান উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা ততদিন সভ্য হব না যতদিন না আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল হব। আমরা যখন কোনো রায় দিই তখন অনেকে মনোক্ষুণ্ন হয়ে এমন সব মন্তব্য করেন তাতে আমাদের খুব কষ্ট লাগে। দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, আমরা যে রায় দেব আপনারা সে রায়ে রিয়েকশন করবেন না। বর্তমানে আমাদের আইন উপনিবেশ চিন্তা-চেতনার আইন। আমাদের আইন সংস্কার করতে হবে। অনেক কিছু পরিবর্তন করতে হবে। এখন প্রত্যেক কোর্টে সকালে ট্রায়াল হয় বিকালে জামিন করা হয়। বর্তমানে মামলাজট এতই কমেছে যে, কোর্টে এখন মামলা পাওয়া যাচ্ছে না। প্রধান বিচারপতি বলেন,  বঙ্গবন্ধু যে সংবিধান প্রণয়ন করেছেন তাতে সুপ্রিম কোর্টকে জুডিশিয়াল রিভিউ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের এই ক্ষমতাবলেই সুপ্রিম কোর্ট পঞ্চম সংশোধনী, সপ্তম, অষ্টম ও ১৩তম সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছে। এতে কোনো দ্বিমত নেই। ভূমি আইন বিষয়ে বিচারপতি সিনহা বলেন, অনেক আইনজীবী এবং বিচারপতিও ভূমি আইন বিষয়ে অজ্ঞ। ভূমি আইনের বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। দেশের একেক জায়গায় ভূমি আইন একেক রকম। পার্বত্য চট্টগ্রামে এক রকম আবার সিলেটে অন্য রকম। এ বিষয় নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। উচ্চ আদালতেও এ সংক্রান্ত বিচারপতির সংখ্যা কম। আইনজীবীরা চান ফৌজদারি মামলা নিয়ে কাঁচা টাকা ইনকাম করতে। ভূমিবিষয়ক আইনজীবীর সংখ্যাও কম। আইনের সুশাসন সম্পর্কে তিনি বলেন, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন উন্নত দেশ হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে আইনের শাসনের সঠিক বাস্তবায়ন। আইনের শাসন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হলে এবং দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে চললে সভ্য ও উন্নত জাতিতে পরিণত হওয়া সম্ভব। এ জন্য আইন, শাসন ও বিচারব্যবস্থাকে একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে হবে। সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্য আইনের শাসনের প্রতি সবার শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিচারপতিরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন শিক্ষা দিয়ে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো এ সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। পরবর্তীতে জবিতে ভূমি বিষয়ক ক্লাস নেওয়ার আগ্রহ জানান তিনি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে বিচার বিভাগের অধীনস্থ বিভাগসমূহে নানা সমস্যা রয়ে গেছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজন ভূমি সংক্রান্ত নানা আইনের অজ্ঞতার কারণে প্রতিনিয়ত প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই ভূমি আইন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ভূমি আইন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান খ্রিস্টিন রিচার্ডসন-এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন জবির ট্রেজারার অধ্যাপক মো. সেলিম ভূঁইয়া এবং আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সরকার আলী আককাস।

সর্বশেষ খবর