রবিবার, ৭ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রী

ইসলামের নামে জঙ্গি বরদাশত নয়

বিএনপি পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়
ইয়াবা পাচারকারীরা রেহাই পাবে না
বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন হবে আন্তর্জাতিক পর্যটন নগরী

আয়ুবুল ইসলাম, কক্সবাজার

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি মানুষের দুর্দিনেও নাই, উন্নয়নেও নাই। মানুষের সাহায্যে তারা কখনো আসেনি। তাদের কাজ লুটপাট করা, নিজেদের অর্থ বানানো, নিজেদের বিলাস বাড়ানো। নির্বাচনে না গিয়ে তারা (বিএনপি) পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। গতকাল কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলামের নাম নিয়ে কেউ জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস সৃষ্টি করবে আমরা তা বরদাশত করব না। এ থেকে আমাদের ছেলে মেয়েদের রক্ষা করতে হবে।’ নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কক্সবাজারবাসীর জন্য উন্নয়নের উপহার নিয়ে এসেছি। কক্সবাজারবাসী, আপনারা আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট উপহার দেবেন।  কারণ নৌকা শুধু কক্সবাজারের উন্নয়ন নয়, নৌকা জনগণের মার্কা, নৌকা বাংলা ভাষার মার্কা, নৌকা স্বাধীনতার মার্কা, নৌকা উন্নয়নের মার্কা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়। আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ পিছিয়ে যায়।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক যুবসমাজকে শেষ করে দিচ্ছে। সবাইকে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কক্সবাজারের একটা বদনাম আছে, এখান থেকে ইয়াবার চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। ইয়াবার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি যে দলের লোক কিংবা যত বড় ক্ষমতাধর হোক, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এ সময় কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে সকাল ১০টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের আধুনিক সুপরিসর বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজে চড়ে কক্সবাজার পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ফ্লাইটের মধ্য দিয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরের সমপ্রসারিত রানওয়েতে বড় আকারের উড়োজাহাজ চলাচল শুরু হলো। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজটি চালিয়েছেন বিমানের নারী ক্যাপ্টেন তাসমিন দোজা। এরপর কক্সবাজার-টেকনাফ ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন করে সুধী সমাবেশে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, দুটি এলএনজি টার্মিনালের ভিত্তিফলক উন্মোচনসহ সাতটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং নয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। বিকালে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন তিনি। ৫৫ মিনিটের দীর্ঘ বক্তৃতায় বর্তমান সরকারের উন্নয়ন, বিএনপি-জামায়াতের ‘অপরাজনীতি’, কক্সাবাজার ঘিরে সরকারের গৃহীত উন্নয়নের বর্ণনা দেন প্রধানমন্ত্রী। বেলা ২টায় জনসভার কথা থাকলেও ১টার মধ্যে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম মাঠ জনসমুদ্রে রূপ নেয়। স্টেডিয়াম ছাড়াও পুরো এলাকায় ছিল লাখো মানুষের সমাগম। শহরজুড়েই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসহ সরকারের উন্নয়ন চিত্রের বিলবোর্ড। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যানের পরিচালনায় এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দফরত সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন, সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, আশিকউল্লাহ রফিক এমপি, আবদুর রহমান বদি এমপি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, মহিলা লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন, যুব মহিলা লীগের নাজমা আক্তার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের মোল্লা মো. আবু কাওছার, ছাত্রলীগের এস এম জাকির হোসাইন প্রমুখ। এ সময় মঞ্চে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি উপস্থিত থাকলেও বক্তৃতা করেননি।

কক্সবাজার হবে আন্তর্জাতিক পর্যটন নগরী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সাবাজারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, মেডিকেল কলেজসহ সরকারের গৃহীত প্রকল্প এ শহরকে আন্তর্জাতিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। যেহেতু এখানে পর্যটক আসে, সেহেতু তাদের যাতায়াতের জন্য বিমান নিয়ে এসেছি। এই বিমান আজ কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রথম অবতরণ করল। আমি এই বিমানের মাধ্যমে এখানে আন্তর্জাতিক রুট পরিচালনার ঘোষণা দিলাম।’ চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেললাইনের  দাবি পূরণ হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ জমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের রাস্তা চার লেন করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। মহেশখালী দ্বীপে চর জেগেছে। সেসব এলাকা উন্নত করে কক্সবাজারসহ যেন বাংলাদেশ উন্নত হয় সে ব্যবস্থা করেছি।’ তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দর সমপ্রসারণ করতে যে মানুষগুলো আছে, তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্প করে দেওয়া হবে। আমরা গ্যাস সঞ্চালন লাইনের কাজ শুরু করেছি। শিল্পায়নের জন্য সারা বাংলাদেশে আমরা ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। ট্যুরিস্ট জোন তৈরি করে দেওয়া হবে। নাফ ট্যুরিজম কেন্দ্র স্থাপনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। বাঁশখালীতে অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩ গড়ে তোলা হবে বলেও জানান তিনি।

আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবেশীর সঙ্গে সমস্যা সমাধান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের একটাই লক্ষ্য, আমাদের প্রতিবেশী দেশ, তাদের সঙ্গে হয়তো সমস্যা থাকতে পারে। আলোচনার মাধ্যমে সেসব সমস্যা সমাধান যেমন করব, সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করব। কোথায় কোথায় একসঙ্গে কাজ করতে পারি, তা নির্দিষ্ট করে আমরা দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাব।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানটা এমন একটা জায়গায়, এই বাংলাদেশকে যদি আমরা সেভাবে গড়ে তুলি, তাহলে বিশ্বে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা অবস্থান করে নিতে পারে। প্রাচ্য-পাশ্চাত্য এবং উত্তর-দক্ষিণ দুই দিক থেকেই সেতুবন্ধটা হতে পারে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে যে সেতু হতে পারে, এটা হতে পারে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের গুরুত্ব অপরিসীম সেটাও আমরা প্রতিষ্ঠা করব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ—সাউথ এশিয়ার এই সাত দেশ মিলে ইতিমধ্যে একটি স্যাটেলাইট উেক্ষপণ করেছে। এখানে যে সুবিধা হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের দেশ আমাদের। এখানে ঝড়ঝঞ্ঝা, ঘূর্ণিঝড় যে কোনো সময় আসে। এই আবহাওয়া সম্পর্কে দ্রুত তথ্য সরবরাহ করা বা আর্থসামাজিক উন্নয়নে এটা অনেক বড় অবদান রাখতে পারে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, মিয়ানমার—আমরা যৌথভাবে এই চারটি দেশ মিলে ইকোনমিক করিডর, অর্থাৎ কানেকটিভিটির ব্যবস্থা করেছি। এতে রাস্তাঘাট যেমন উন্নত হবে, ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সমপ্রসারিত হবে।’  শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান বিশ্বে কেউ একা চলতে পারে না। সবাইকে নিয়েই চলতে হয়।

বিরোধী দলে থাকলে খালেদা ভারতবিরোধী : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) বিরোধী দলে থাকলে খুব ভারতবিরোধী হয়ে যান। আর যখন ক্ষমতায় যান, তখন দিল্লি শহরে গিয়ে দিল্লির লাড্ডু খেয়ে গঙ্গার পানির কথা ভুলে যান। এটাই তাদের চরিত্র। তিনি বলেন, ‘১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সমুদ্রসীমা ও স্থলসীমা আইন করলেও তাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে ভারতের কাছে এ অধিকারের কথা তুলতে কেন ভুলে গিয়েছিল? তিনি বলেন, ‘তারা সাহসই পায় নাই। তুলবে কী করে? খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে গঙ্গার পানির কথাও বলেন নাই।’

সর্বশেষ খবর