রবিবার, ৭ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

সমুদ্র তীরে অন্যরকম সময় প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

সমুদ্র তীরে অন্যরকম সময় প্রধানমন্ত্রীর

কক্সবাজারে গিয়ে গতকাল খালি পায়ে সৈকতে নেমে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

কক্সবাজারের সমুদ্রতীরে গিয়ে পানিতে নামেন না এমন মানুষের দেখা পাওয়া মুশকিল। আর সবার মতো সেই আকর্ষণ এড়াতে পারলেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। গতকাল কক্সবাজার-টেকনাফ ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন শেষে দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রধানমন্ত্রী সোজা সৈকতে নেমে যান। সমুদ্রের পানি যেখানটাতে আছড়ে পড়ছিল তার কাছাকাছি গিয়ে পায়ের জুতা খুলে রাখেন। এরপর পা ভেজান সমুদ্রের জলে। বেশ কিছুটা সময় ধরে ধীরে ধীরে হাঁটতে থাকেন আর উপভোগ করেন মৃদু মৃদু ঢেউয়ের আছড়ে পড়া। খোলা হাওয়ায় মন হারিয়ে যাওয়ার অবকাশ হয়তো নেই, পেছনেই নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত কর্মীরা। তাও সব ভুলে সমুদ্রের বিশালতায় যেন কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে গেলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। কাছাকাছি গিয়ে নিরাপত্তাকর্মীরা শামুক-ঝিনুকে পা কাটতে পারে এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে স্লিপার কিংবা স্যান্ডেল পরার পরামর্শ দেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ?‘কত এসেছি, কত হেঁটেছি, অভ্যেস আছে।’ এ সময় তার ছোটবেলার সমুদ্রসৈকত দেখার স্মৃতিচারণা করেন বলে সঙ্গে থাকা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ইনানী সৈকতে বিচরণের সময় প্রধানমন্ত্রীকে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখাচ্ছিল। রৌদ্রস্নানের চেয়ারে কিছুক্ষণ বসে সাগরপানে তাকিয়ে থেকেছিলেন তিনি। এমনিতে সাধারণ পর্যটকের আনাগোনায় বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার মুখর থাকে প্রতিদিন। তবে গতকাল ছিল ভিন্ন চিত্র। এদিন প্রধানমন্ত্রীর আগমন নতুন আবহ তৈরি করে এখানে। সৈকতে পায়চারির সময় তার চোখেমুখে ছিল অন্যরকম আনন্দ-উচ্ছ্বাস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফরসঙ্গী ও মেরিন ড্রাইভ নির্মাণকারী সেনা সদস্যদের নিয়ে সাগরপাড়ে উপভোগ করেন বিশাল জলরাশির সৌন্দর্য। সেনা কর্মকর্তারা এ সময় পোশাক ও জুতা পরিহিত থাকলেও প্রধানমন্ত্রী পানিতে নামেন নগ্ন পায়ে। তার মুখে প্রসন্ন হাসিই বলে দিচ্ছিল সময়টা কতটা উপভোগ করেছেন তিনি। এ সময় তার কয়েকটি ছবিও তোলেন ফটোসাংবাদিকরা। এর মধ্যে কোনো ছবিতে প্রধানমন্ত্রীকে একা আবার কোনো ছবিতে সফরসঙ্গী ও সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেলাভূমিতে হাঁটতে দেখা যায়। মুহূর্তের মধ্যেই ছবিগুলো ভাইরাল হয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জনবহুল ঢাকায় যান্ত্রিক জীবনযাপন করতে হয় শেখ হাসিনাকে। তাই কক্সবাজারে কোলাহলমুক্ত ও নির্মল প্রকৃতির ছোঁয়া তাকে দেয় যান্ত্রিকতা থেকে ক্ষণিকের মুক্তি। সৈকতে সময় কাটিয়ে তিনি মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছিলেন ঢেউয়ের পর ঢেউয়ের পরশে বালুকাবেলায় ফুটে ওঠা সূর্যরশ্মির কারুকাজ। এর আগেও নানা সময় ব্যতিক্রমী কাজ করে সমাদৃত হয়েছেন প্র্রধানমন্ত্রী। প্রায়ই তিনি হয়ে যান অন্যরকম, কখনো আনন্দ করেন শিশুদের মতোই। কয়েক মাস আগেই গোপালগঞ্জে নিজ বাড়িতে গিয়ে সকালবেলা খেয়ালের বসে গ্রাম ঘুরেছেন রিকশাভ্যানে করে। তারও আগে সুইজারল্যান্ড সফরে গিয়ে বোনের সঙ্গে খেলা করেছেন বরফ নিয়ে। আর গণভবনে শিশুদের সঙ্গে তার প্রায়ই খেলার ছবিও এসেছে গণমাধ্যমে। এসব ঘটনা এক অন্যরকম শেখ হাসিনাকেই তুলে ধরে দেশবাসীর কাছে। বে ওয়াচ রিসোর্টের সামনে সৈকতের বেলাভূমিতে মঞ্চ করে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে শেখ হাসিনা বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে শৈশবে সমুদ্র দেখার অভিজ্ঞতার কথা জানান। ইনানীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিও। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসনামলে অরণ্যঘেরা ইনানীর চেনছড়ি গ্রামে বেশ কিছু দিন ছিলেন বাংলাদেশের জাতির জনক।

সর্বশেষ খবর