সোমবার, ৮ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
ঝিনাইদহে আস্তানায় অভিযান

দুই আত্মঘাতী জঙ্গি নিহত, অস্ত্র গুলি গ্রেনেড উদ্ধার

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহের মহেশপুরে বজরাপুর হঠাত্পাড়ার এক জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানোর সময় আত্মঘাতী বোমায় দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরেক আস্তানা থেকে ৬টি শক্তিশালী গ্রেনেড, ১টি নাইন এমএম পিস্তল ও ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে। তারা জঙ্গি সন্দেহে দুজনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল রাত সাড়ে ৩টা থেকে তারা বজরাপুর হঠাত্পাড়ার আস্তানা ঘিরে রাখে। মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহমেদ কবির জানান, আস্তানাটির ভিতরে ঢুকতে চেষ্টা করলে ভিতরে অবস্থানরত জঙ্গিরা বাধা দেয়। তিনি বলেন, অভিযানের এক পর্যায়ে আস্তানার ভিতর জঙ্গিরা আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই বিস্ফোরণেই দুই জঙ্গি নিহত হয়। অভিযান সম্পর্কে জানা গেছে, মহেশপুর উপজেলার এসবিকে ইউনিয়নের বজরাপুর হঠাত্পাড়ার জঙ্গি আস্তানাটি ঘিরে রাখা অবস্থায় গতকাল বিকাল ৫টা ৫৫ মিনিটের দিকে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা ভিতরে প্রবেশ করে। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে একটি বোমার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ জানান, পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট শনিবার রাত থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখে। এরপর গতকাল ভোরের দিকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও পুলিশের সদস্যরা বাড়িটিতে ঢুকতে চেষ্টা করলে ভিতর থেকে গুলি ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। পুলিশ আরও বলছে, এই বিস্ফোরণে দুই জঙ্গি নিহত হয় এবং তাদের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। রাত ৮টায় পাওয়া খবর অনুযায়ী, তখন পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত ছিল। পুলিশ জানায়, বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে তুহিন নামের একজন রয়েছে। এ বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের এডিসি নাজমুল ইসলাম এবং জেলা পুলিশের এসআই মহসিন আলী ও কনস্টেবল মুজিবুর রহমান। তাদের মধ্যে নাজমুল ইসলামকে উন্নত চিকিত্সার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পুলিশ বাড়ির মালিক জহুরুল ইসলাম, তার ছেলে জসিম, ভাড়াটিয়া আলমগীর হোসেন ও তাদের প্রতিবেশী আতিয়ারকে গ্রেফতার করেছে। জনসাধারণের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে বাড়িটির ২০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। অপরদিকে সদর উপজেলার কুমড়াবাড়ীয়া ইউনিয়নের লেবুতলায় গ্রামের মৃত শরাফত মণ্ডলের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে ৬টি শক্তিশালী গ্রেনেড, ১টি নাইম এমএম পিস্তল ও ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। ওই স্থান থেকে হোসেন মোহাম্মদ শামীমসহ ২ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, দুই জঙ্গির লাশ ভিতরে পড়ে আছে। ঢাকা থেকে বোমা বিশেষজ্ঞ টিম আসলে মূল অভিযান শুরু করা হবে। অভিযানে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন রাখা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, আস্তানা হিসেবে চিহ্নিত একতলা বাড়িটির মালিক জহুরুল ইসলাম কিছুদিন আগে বাড়িটি আলমগীরকে ভাড়া দেন। আলমগীর বাড়ি থেকে খুব একটা বের হতো না। বাড়ির একটি কক্ষ বাইরে থেকে তালা দেওয়া ছিল। অভিযানকারীরা সেই তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভিতর থেকেও আটকানো ছিল ঘরটি। এ সময় অভিযানকারীরা প্রচণ্ড ধাক্কায় দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন। এ সময় ভিতরে বিস্ফোরণ ঘটে। গোলাগুলিও হয় দুই পক্ষের মধ্যে। এর পর আর গুলি-বোমার কোনো শব্দ শোনা যায়নি। উল্লেখ্য, এর আগে গত ২২ এপ্রিল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনেপাড়ায় জঙ্গি আস্তানায় সিটিটিসি ইউনিটের সদস্যরা ৪ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের অভিযানে ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে বিস্ফোরক তৈরি রাসায়নিক ভর্তি ২০টি ড্রাম, একটি সেভেন পয়েন্ট সিক্স বোরের পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছিল।

জহিরুল ফুচকা ব্যবসায়ী : এসবিকে ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, বাড়ির মালিক জহুরুল ইসলাম ফুচকা/খাস্তা তৈরি করে ফেরি করে বিক্রি করত।

 এর আগে জহুরুল বাস করত কোটচাঁদপুর উপজেলার রহমতপুর গ্রামে। ১০-১২ বছর আগে তিনি বজরাপুর গ্রামে এসে বাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করেন।

বসবাসকারীরা আতঙ্কে : বজরাপুর গ্রামের মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জঙ্গি আস্তানার ২০০ গজের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ব্যতীত কেউ যেন প্রবেশ না করে।

সর্বশেষ খবর