মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

অপরাধী যেই হোক শাস্তির আওতায় আনতে হবে

অ্যাডভোকেট সালমা আলী

নিজস্ব প্রতিবেদক

অপরাধী যেই হোক শাস্তির আওতায় আনতে হবে

মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ও পুরুষতান্ত্রিক মনমানসিকতার জন্য এখনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। আমাদের ৯৫ শতাংশ ধর্ষণের মামলাগুলোর বিচার হচ্ছে না। এমনকি আসামিরাও জামিন নিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক মামলার আসামি গ্রেফতারই হচ্ছে না। সম্প্রতি বনানীর একটি হোটেলে নির্যাতিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীর ঘটনায় সরকারের সংশ্লিষ্টদের নড়েচড়ে বসতে হবে। অপরাধী যেই হোক না কেন তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউএলএ) নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।

সালমা আলী বলেন, ধর্ষণের ঘটনা দেশে নতুন নয়। ঢাকা ও তার আশপাশে গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি মেয়ে এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে অহরহ ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। শহরে হয়ত বিষয়টি জানাজানি হলে আমরা জানতে পারছি। সমাজে ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য থাকার কারণেই প্রভাবশালীরা মনে করছেন যে, তারা চাইলেই গরিব ও অসহায় নারীদের ওপর নির্যাতন চালাতে পারবেন। আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি ধর্ষণের ঘটনায় ভিকটিম অনেক নারী আত্মসম্মান রক্ষার খাতিরে থানায় মামলা করার সাহস পান না। কারণ থানায় মামলা করতে গিয়ে সেখানে এবং পরে আদালতে তাকে অবান্তর ও অশ্লীল প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। তিনি বলেন, ধর্ষণের মামলাগুলো পরিচালনা ও তদন্তের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে আমরা  সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আশা করি। তা না হলে সমাজে চলমান এই অপরাধগুলো কমবে না। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার ছাড়া দেশের অন্য থানাগুলোতে নারীবান্ধব পরিবেশ নেই। অথচ ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর মামলাগুলোর জন্য থানায় নারীবান্ধব পরিবেশ প্রয়োজন। থানাগুলোতে মহিলা পুলিশ অফিসার দিয়ে আলাদা কক্ষে ধর্ষণের শিকার নারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। এই আইনজীবী বলেন, ধর্ষণের মামলায় আমাদের দেশে বিদ্যমান আইনে যে শাস্তি উল্লেখ করা আছে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সেটি পর্যাপ্ত। শিশু রাজন-রাকিব হত্যাকাণ্ডের মতো ধর্ষণ মামলাগুলোর ক্ষেত্রেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্টদের গুরুত্ব দিতে হবে এবং দ্রুত অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতার, মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে। সালমা আলী বলেন, বনানীর নির্যাতনের শিকার মেয়ে দুটিকে প্রয়োজনে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে সুরক্ষা দিতে হবে। মেয়েদেরও এ ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে। বিপদে পড়লে নারী নির্যাতনের জন্য সরকারি হেলপ লাইনে ফোন দিয়ে সাহায্য চাইতে হবে। পুলিশ চাইলেই এ ঘটনার তদন্ত করতে পারে। যে হোটেলটিতে ঘটনা ঘটেছিল তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিজ্ঞেস করলেই সব জানা যাবে। আর ঘটনাটি প্রভাবশালীদের চাপে পড়ে অন্যখাতে যাতে না যায় তাও লক্ষ্য রাখতে হবে। এই ঘটনায় ভিকটিমরা নারী নির্যাতন মামলা ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি আইনেও সাইবার ক্রাইমের মামলা করতে পারেন। একজন ভিকটিম যখন বলবেন যে, তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তখনই পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য। অথচ বনানীর ঘটনাটিতে আমরা দেখেছি যে, ভিকটিমদের মামলা নিতে পুলিশ ২দিন লাগিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আর ফরেনসিক রিপোর্ট নিয়েও হুটহাট মন্তব্য করা ঠিক হবে না। ধর্ষণের মামলায় একজন আসামির আইন মোতাবেক যেভাবে বিচার হওয়ার কথা এই মামলার ক্ষেত্রেও আমরা তা দেখতে চাই। তবেই সরকারের সুশাসনের প্রতি দেশবাসীর আস্থা থাকবে।

সর্বশেষ খবর