রবিবার, ১৪ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

ধর্ষিতাকে থানা থেকে বের করে দিয়েছিলেন ওসি ফরমান

সাখাওয়াত কাওসার

ধর্ষিতাকে থানা থেকে বের করে দিয়েছিলেন ওসি ফরমান

ফরমান

বখাটেদের কাছ থেকে নিজের সুরক্ষার জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন গার্মেন্ট কর্মী। পুলিশি নিরাপত্তা তো দূরের কথা, পরদিনই সেই বখাটেদের কাছে নিজের সর্বস্ব হারান হতভাগা সেই নারী। রাতভর গণধর্ষণের পর গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসা নেন। চিকিৎসকের সার্টিফিকেট নিয়ে পুনরায় থানায় অভিযোগ দায়েরের জন্য গিয়েছিলেন। তবে এবারও জুটেছে ভর্ত্সনা। আজ নয় কাল, নানা অজুহাত। নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হচ্ছে ধর্ষিতাকে। ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে ১৭ দিন। সর্বশেষ অভিযোগ না নিয়েই গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয় ধর্ষিতাকে। অবশেষে আদালতের দ্বারস্থ হন সেই ধর্ষিতা। মামলা গ্রহণের জন্য আদালত থেকে নির্দেশনা পাঠানোর পরও টালবাহানা করতে থাকেন থানার ওসি। অবশেষে ১৪ দিন পর তা মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়। তবুও চোখ রাঙানো থামেনি সেই প্রভাবশালী ওসির। ঘটনাটি খোদ রাজধানীরই বনানী থানার। সম্প্রতি দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর গণধর্ষণের ঘটনাটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করতেও টালবাহানা দেখিয়েছিলেন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বি এম ফরমান আলী। ভুক্তভোগীরা টানা দুই দিন থানার বারান্দায় ঘুরিয়েছিলেন। সবশেষ, ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার কয়েকদফা অনুরোধের পর তা মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়। ওসি ফরমানের আংশিক আচরণ গণমাধ্যমে উঠে এলে নির্ভার এই পুলিশ সদস্য কৌশলে পাঁচ দিনের ছুটিতে যান। গতকাল পর্যন্ত তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন বলে জানা গেছে। গার্মেন্ট কর্মীর ধর্ষণের ঘটনা অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৩ মার্চ রুবি আহমেদ (ছদ্মনাম) বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি নম্বর-১৯২) মাধ্যমে বখাটেদের উৎপাত থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য পুলিশি সহায়তা চেয়েছিলেন। তবে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় একদিন পর ৪ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে গার্মেন্ট থেকে বাসায় ফেরার পথে রুবিকে অপহরণ করে কড়াইল বস্তির জুনায়েদ, নায়েব আলী, সোহাগ ও নাতি বালী নামের চার বখাটে। রাতভর জুনায়েদের বাড়িতে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। রুবির অপরাধ ছিল পুলিশকে অবহিত করা। গুরুতর অবস্থায় তাকে আসমা নামে এক নারী উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে টানা আট দিন চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে সরাসরি ধর্ষণের সার্টিফিকেট নিয়ে থানায় চলে যান রুবি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বি এম ফরমান আলী ১২ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ভুক্তভোগীকে নানা অজুহাতে ঘুরাতে থাকেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, ওসি সাহেব আমার সঙ্গে অনেক খারাপ আচরণ করেছেন। আমাকে একের পর এক মানহানিকর প্রশ্ন করতেন। একদিন আমাদের গলাধাক্কা দিয়ে থানা থেকে বের করার জন্য নির্দেশ দেন অন্য পুলিশ সদস্যদের। বাধ্য হয়ে ঢাকার আদালতে গিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করি। মামলার আইনজীবী জিয়াউর রহমান খান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। একজন ধর্ষিতাকে যেভাবে থানার ওসি হয়রানি করেছেন তা সত্যিই বেদনাদায়ক। এখন আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। একই সঙ্গে মামলা ভিন্নখাতে ঠেলে দেওয়ার জন্য আমাকে নানাভাবে ফোন করাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গত ২৯ মার্চ নালিশি মামলা হিসেবে আমলে নেয় আদালত। তবে ওই সময় বিচারক ছুটিতে থাকায় গত ১৮ এপ্রিল আদালত থেকে থানায় নির্দেশনা পাঠানো হয় মামলা রেকর্ড নেওয়ার জন্য। এরপরও থানার হয়রানি চলতে থাকে। গত ২ মে অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়।  হতভাগা রুবির ভাই আনিস জানান, আদালতে মামলার পর থেকেই আসামিরা রুবিকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। মামলা তুলে না নেওয়া হলে তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছে। তাদের এই হুমকির ফলে রুবি এখন আর গার্মেন্টে যেতে পারছে না। এমনকি মামলার পর থেকে কড়াইল বস্তির ঘর ছেড়ে বোনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছে রুবি। ধর্ষকদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন আনিস। জানা গেছে, জুনায়েদ কড়াইল বস্তিতে অবৈধ বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবসা করেন। তিনি বনানী থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে নির্বিঘ্নে এসব কাজ করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে বস্তির কেউ কথা বলার সাহস পায় না।

সর্বশেষ খবর