শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

সাফাতের বডিগার্ড ও ড্রাইভার আটক

রেইনট্রি ও আপন জুয়েলার্সের মালিকদের তলব

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাফাতের বডিগার্ড ও ড্রাইভার আটক

বনানী ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত সাফাত আহমেদের দেহরক্ষী রহমত আলী ও বিল্লালকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান থেকে রহমতকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। গাড়িচালক বিল্লালকে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডের ইব্রাহিম হোটেল থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০। এদিকে স্বর্ণ, ডায়মন্ড আটকের ঘটনায় আপন জুয়েলার্স এবং অবৈধ মদ রাখার দায়ে হোটেল ‘দ্য রেইন ট্রি’র মালিককে তলব করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। গতকালও ফের আপন জুয়েলার্সে অভিযান চালিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। অন্যদিকে ধর্ষিতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আজ ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে চিঠি পাঠাবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া গত রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে বনানীর দ্য রেইন ট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। রাত ৮টার দিকে রাজধানীর নবাবপুর রোডের একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-১০ অধিনায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর। এদিকে রাতে বডিগার্ড রহমত আলীকেও গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তার কাছ থেকে একটি শর্টগান ও ১০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

গতকাল শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ জানায়, রবিবার আপন জুয়েলার্সের গুলশান, উত্তরা, মৌচাক ও সীমান্ত স্কয়ারের পাঁচটি বিক্রয়কেন্দ্র থেকে সোনা ও হীরা আটক করা হয়। এগুলো ব্যাখ্যাহীনভাবে মজুদ রাখা ছিল। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানার জন্য দিলদার আহমেদসহ আপন জুয়েলার্সের সব মালিককে তলব করা হয়েছে। এ ছাড়া  হোটেল  রেইন ট্রিতে ১০ বোতল মদ রাখার দায়ে মালিকদের তলব করা হয়েছে। এ ব্যাপারে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মঈনুল খান সাংবাদিকদের জানান, শুল্ক গোয়েন্দার অভিযানে ব্যাখ্যাহীনভাবে মজুদ স্বর্ণ ও ডায়মন্ড আটকের ঘটনায় আপন জুয়েলার্সের মালিকদের তলব করা হয়েছে। একই সময়  হোটেল দ্য রেইন ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও (এমডি) মদ রাখার দায়ে সমন  দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, আগামী ১৭ মে বেলা ১১টায় তাদের শুল্ক গোয়েন্দার কাকরাইলের সদর দফতরে কাগজপত্রসহ হাজির হতে বলা হয়েছে।

গুলশানে আপন জুয়েলার্সে ফের অভিযান : রাজধানীর গুলশান ২ নম্বর সার্কেলের সুবাস্তু টাওয়ারে সিলগালা করে দেওয়া আপন জুয়েলার্সের বিক্রয়কেন্দ্রে ফের   ফের অভিযান চালিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের যুগ্ম-কমিশনার শাফিউর রহমান সাংবাদিকদের জানান, রবিবার গুলশান এলাকায় সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় তাদের সদস্যরা সুবাস্তু টাওয়ারের ওই দোকান সিলগালা করে গিয়েছিলেন। সোমবার সেটি খুলে অভিযান চালানো হয়। বনানীতে দুই ছাত্রী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদের বাবা দিলদার আহমেদ আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক। এই পরিবারের বিরুদ্ধে সোনা  চোরাচালানের অভিযোগ থাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের  নির্দেশে একটি অনুসন্ধান কমিটি করে তদন্ত শুরু করেছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। এরই অংশ হিসেবে রবিবার শুল্ক গোয়েন্দা দল আপন জুয়েলার্সের গুলশান, উত্তরা, মৌচাক ও সীমান্ত স্কয়ার শাখায় অভিযান চালায়। অভিযানে ২৮৬  কেজি স্বর্ণ ও ৬১ গ্রাম ডায়মন্ড ব্যাখ্যাহীনভাবে মজুদ রাখার দায়ে তা সাময়িক আটক করা হয়। এগুলো আইন অনুসারে সিলগালা করে তাদের হেফাজতে দেওয়া হয়। গুলশানের সুবাস্তু টাওয়ারে আপন জুয়েলার্সে অন্য আরেকটি শাখা বন্ধ পাওয়ায় সবার উপস্থিতিতে ইনভেন্টরি করার নিমিত্তে সিলগালা করা হয়েছে। তলবে সাময়িকভাবে আটক এই মূল্যবান সামগ্রী সরবরাহের বৈধতা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক মইনুল খান জানান, স্বর্ণ ও রত্ন সংগ্রহের তথ্যে অস্বচ্ছতা এবং মালিকের ‘অবৈধ সম্পদের’ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবেই শুল্ক আইনের বিধান অনুসারে ওই অলঙ্কার তারা আটক করেছেন। দিলদারের ছেলে সাফাত ও তার বন্ধুরা ২৮ মার্চ বনানীর রেইন ট্রি হোটেলে জন্মদিনের দাওয়াতে ডেকে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করে বলে ৬ মে থানায় মামলা হয়। রবিবার রেইন ট্রিতে অভিযান চালিয়ে মদ উদ্ধারের পর হোটেলটির মালিকদেরও তলব করেছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ।

চিঠি দেবে মানবাধিকার কমিশন : ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দেবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কমিশন বলছে, মামলার তদন্তে পুলিশের ব্যাপক ব্যস্ততার কারণে ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণ মামলার বাদী ও ভিকটিমের নিরাপত্তা দাবি করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে তার দায়ভার পুলিশকেই নিতে হবে। দুই শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আজ ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দেবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তিনি বলেন, এরই মধ্যে (৮ মে) দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পাঁচ সদস্যের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পরে কমিটিতে আরও দুজন সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনা তদন্তে ইতিমধ্যে কমিটি কয়েকটি মিটিং করেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তারা ধর্ষণের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে। তদন্তের অংশ হিসেবে কমিশন এরই মধ্যে ওই দুই তরুণীর সঙ্গে সেদিনের ঘটনা নিয়েও কথা বলেছে। মানবাধিকার কমিশনের দুই সদস্য ঘটনা তদন্তে ঘটনাস্থল দি রেইনট্রি হোটেল পর্যবেক্ষণও করেছে। কমিটি কয়েক দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেবে।

সর্বশেষ খবর