বুধবার, ১৭ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
ব্যস্ততা নির্বাচনের রাজনীতিতে

এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন তৃণমূল নেতারা

রফিকুল ইসলাম রনি

এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন তৃণমূল নেতারা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সারা দেশে দ্বন্দ্ব্ব-কোন্দল মিটিয়ে সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করতে আগামী ২০ মে জেলা-মহানগরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করার নির্দেশ দেবেন তিনি। দলের সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানও শুরু করা হবে। একই সঙ্গে জেলা নেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র। ওই মতবিনিময় বৈঠকে জেলার নেতাদের কাছে দলের সাংগঠনিক অবস্থাসহ এমপি-মন্ত্রীদের ভূমিকা জানতে চাইবেন প্রধানমন্ত্রী। জানা গেছে, বৈঠকে জেলা-মহানগরের নেতারা বক্তৃতা করার সুযোগ পেতে চাইবেন। সুযোগ পেলে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কিছু এমপি-মন্ত্রীর বিমাতাসুলভ আচরণের কথা তুলে ধরবেন তারা। এ নিয়ে বেশ স্নায়ুচাপে আছেন আওয়ামী লীগের এমপি ও মন্ত্রীরা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, ২০ তারিখের এই মতবিনিময় সভা আসলে দলের বর্ধিত সভা। এ সভায় জেলা নেতাদের কথা শোনার পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া সাংগঠনিক অবস্থান সম্পর্কেও জানতে চাইবেন তিনি। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একাদশ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই ২০ মে বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। ওইদিন দলীয় সভানেত্রী নেতাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন। এতে কথা বলার সুযোগ পেতে পারেন জেলা নেতারাও।

দলীয় সূত্রমতে, ‘বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে’ ধরে নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সে কারণে দলীয় মনোনয়নে এবার ব্যাপক পরিবর্তন আনার আভাস পাওয়া গেছে। এজন্য অনেক আগে থেকেই দলের প্রার্থীর খোঁজখবর রাখছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যে তিনি সংসদীয় দলের সভায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনে মুখ দেখে নয়, জরিপ দেখে মনোনয়ন দেওয়া হবে।’ তিনি বলেছেন, ‘এলাকায় জনপ্রিয়তা না থাকলে মনোনয়ন দেওয়া হবে না।’ সে কারণে এমপিরা যেমন নড়েচড়ে বসেছেন, অন্যদিকে দলীয় সভানেত্রীর এই ঘোষণার বাস্তবায়ন চান তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি জেলার নেতা-কর্মীরা বর্ধিত সভায় বক্তব্য দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং তারা এলাকার এমপি ও মন্ত্রীর ভূমিকার খতিয়ান তৈরি করছেন। সুযোগ পেলে তারা সেগুলো নেত্রীর সামনে তুলে ধরবেন। একাধিক জেলা নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বেশির ভাগ জেলা-উপজেলায় দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এমপি-মন্ত্রীদের সম্পর্ক ভালো নেই। এমপি-মন্ত্রীরা নির্বাচনী এলাকাগুলোয় নিজস্ব লোক তৈরি করে তাদের নিয়ে চলাফেরা করছেন। সূত্রমতে, এদের বেশির ভাগ হাইব্রিড, দলে নবাগত। এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয়স্বজনদের স্বেচ্ছাচারিতায় দলের পরীক্ষিত নেতা-কর্মীরা দূরে। বিএনপি-জামায়াত থেকে আগত নেতাদের নিয়েই চলছেন অনেক এমপি। দল সরকারে থাকলেও অনেক জেলায় ‘তৃণমূল নেতারা যেন বিরোধী দলে’।

এ প্রসঙ্গে গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ শামসুল আলম হিরু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গাইবান্ধার দু-এক জন এমপি বাদে সবাই গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া ও হুইপ মাহবুব আরা গিনিসহ অধিকাংশ এমপির এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। আগামী নির্বাচনে দলের প্রার্থী পরিবর্তন না করা হলে ভরাডুবি হবে। বিষয়গুলো আমি সভানেত্রীসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বলব।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের অনেক অর্জন থাকলেও এমপিদের কারণে অ্যান্টি আওয়ামী লীগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ পিরোজপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল হাকিম হাওলাদার বলেন, ‘পিরোজপুরের রাজনীতি সম্পর্কে নেত্রী সবই জানেন। কিছু দিন আগে লন্ডনে পিরোজপুরের রাজনীতি নিয়ে কথা প্রসঙ্গে সভানেত্রী বলেছিলেন, “সবই জানি। ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব, কে কী করে তা আমার জানা আছে”।’ জয়পুরহাট জেলা সাধারণ সম্পাদক এস এম সোলায়মান আলী বলেন, ‘জেলার একজন এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতা প্রভাব খাটিয়ে জেলা আওয়ামী লীগে বিভক্তি তৈরি করছেন। ক্ষেতলাল পৌরসভায় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম। কিন্তু মামলা আছে মর্মে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে উপজেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বুলুকে মনোনয়ন পাইয়ে দেন। বিষয়গুলো আমি সভানেত্রীকে জানাব।’ সাতক্ষীরা জেলা সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জেলায়ই এমপিকেন্দ্রিক একটি বলয় গড়ে উঠছে। সাতক্ষীরাও এর ব্যতিক্রম নয়। সদর আসনের এমপির সঙ্গে ১০ ভাগ নেতা-কর্মী নেই। একই অবস্থা জেলার অন্য আসনগুলোয়ও। এমপি-নেতাদের দ্বন্দ্বের কারণে অনেক উপজেলায় সম্মেলন হলেও কমিটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। বর্ধিত সভায় কথা বলার সুযোগ পেলে বিষয়গুলো তুলে ধরব।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, ‘যারা দলে বিভেদ সৃষ্টিকারী তাদের যেন কেন্দ্র আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেয় সে বিষয়টি তুলে ধরব।’ তিনি বলেন, ‘অনেকেই আছেন, যারা দলের দুর্দিনে ছিলেন না। পরীক্ষিত বিভেদ সৃষ্টি ও ষড়যন্ত্রকারী। তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানাব।’

সর্বশেষ খবর