বুধবার, ১৭ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
ব্যস্ততা নির্বাচনের রাজনীতিতে

ভিশন ধরেই ইশতেহার তৈরি করছে বিএনপি

মাহমুদ আজহার

ভিশন ধরেই ইশতেহার তৈরি করছে বিএনপি

ভিশন-২০৩০ এর পথ ধরেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার তৈরি করছে বিএনপি। সম্প্রতি ইশতেহারের নানা দিক নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন দল সমর্থিত কয়েকজন বুদ্ধিজীবী। এরই মধ্যে তারা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইশতেহারে আগে দেওয়া হবে নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক’ সরকারের রূপরেখা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ঈদের পরপরই এই রূপরেখা ঘোষণা করবেন বেগম খালেদা জিয়া। রমজানের আগেই সহায়ক সরকারের রূপরেখার খসড়া তৈরি হতে পারে।

সূত্র জানায়, তরুণদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি ইশতেহারকে যুগোপযোগী করার পরিকল্পনা আছে বিএনপির। ইশতেহারের জন্য একটা ভালো স্লোগানও খুঁজছে দলটি। এ জন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নেওয়া হচ্ছে। বিশ্বায়নের নানা দিক তুলে ধরার পাশাপাশি তরুণ ও নারীদের আকৃষ্ট করতে নানামুখী উদ্যোগ থাকছে ইশতেহারে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তিকে। ইশতেহারে প্রতিহিংসা নয়, প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে নতুন ধারার রাজনীতির। এসব বিষয়ে ভিশনেও কিছু তথ্য তুলে ধরেছে বিএনপি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের জন্য ইশতেহার অবশ্যই দেওয়া হবে। ইশতেহারে ভিশন-২০৩০ এর নানাদিক গুরুত্ব পাবে। তবে এখন বিএনপি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। দলের একটি অংশ মনে করে, ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সময় বিএনপি যে ইশতেহার ঘোষণা করেছিল, তা যুগোপযোগী ছিল না। সেই ইশতেহারে তরুণদের আকৃষ্ট করার মতো ছিল না। অন্যদিকে পরিবর্তনের স্লোগান দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে রূপকল্প-২০২১ তুলে ধরে। এতে তরুণরা বেশ আকৃষ্ট হয়। ‘ডিজিটাল’ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায় দলটি। জানা যায়, ভিশন-২০৩০ এ ঘোষিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে সেমিনার ও জনমত গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। দেশি-বিদেশি কূটনীতিকদের পাশাপাশি সারা দেশেই এই ভিশনের কপি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি রাজধানীতে একটি শিক্ষা বিষয়ক সেমিনার হয়। সেখানে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ শিক্ষাবিদরা বক্তব্য দেন। ওই অনুষ্ঠানের সুপারিশমালা যুক্ত হবে ইশতেহারে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, অর্থনীতি, মানবসম্পদসহ অন্যান্য বিষয়েও সেমিনার করবে বিএনপি। সবগুলোতেই উপস্থিত থাকবেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া। সেখানে উঠে আসা প্রস্তাবগুলোও নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত হবে। এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি সুস্থধারার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। এই লক্ষ্যে আগামী নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ইশতেহার দেওয়া হবে। তবে সেটা তৈরি করতে খুব একটা কঠিন হবে না। কারণ, ভিশন-২০৩০ ধরেই আমরা ইশতেহার দেব। তিনি বলেন, এখন সর্বাগ্রে গুরুত্ব পাচ্ছে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের বিষয়টি। এ নিয়ে কাজও চলছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই বিএনপি চেয়ারপারসন সহায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরবেন।

জানা যায়, ভিশনে যুক্ত থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটি পর্যায়ের একাধিক নেতা ও দল সমর্থিত বুদ্ধিজীবীরাই সহায়ক সরকার ও ইশতেহার তৈরির কাজ করছেন। এসব কাজে যুক্ত দলের চিন্তকদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, ড. মাহবুব উল্লাহ, মাহফুজ উল্লাহ, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক মোস্তাহিদুর রহমান প্রমুখ। দলের বাইরেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করা হচ্ছে। এগুলো যুক্ত হবে ইশতেহারে। পরে দলের স্থায়ী কমিটিতে তা চূড়ান্ত হবে। জানা যায়, বিএনপির আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে থাকছে ‘নতুন ধারা’র পূর্ণাঙ্গ ধারণা। সরকার, সংসদ, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, কৃষি, পররাষ্ট্রনীতিসহ সরকারের প্রতিটি বিভাগে নতুন ধারার ধারণার আলোকে পরিকল্পনাসমূহ সন্নিবেশিত করা হচ্ছে। মেধার পরিপূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে চাকরিতে কোটা পদ্ধতি কমিয়ে আনা, প্রশাসন ও বিচার বিভাগে দলীয়করণের অবসান ঘটিয়ে মেধা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকবে। শিক্ষা ও কৃষি খাতে যুগোপযোগী সংস্কারের মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা, কৃষকদের সহজশর্তে ঋণদান, বাস্তবমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা, হানাহানি, বিভক্তি ও বিভাজনের রাজনীতির অবসান, বিরোধী দলকে সত্যিকার অর্থেই বিকল্প সরকারের মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা হবে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার ক্ষেত্রে সহজে ঋণপ্রাপ্তির নিশ্চয়তাসহ ইতিবাচক সব অঙ্গীকার থাকছে এ নির্বাচনী ইশতেহারে। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বিভাজন, প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা নয়, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সব রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়েই বিএনপি আগামী দিনের রাজনীতি করতে চায়। ইশতেহারে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা থাকবে। বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী ও সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ বলেন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার নিয়ে দু-এক দিনের মধ্যেই বৈঠক হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ঈদের পরপরই সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা হবে। এ নিয়ে কী আলোচনা সমালোচনা হয় তাও পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর দেওয়া হবে নির্বাচনী ইশতেহার। সেটার কাজও এগিয়ে চলছে।

সর্বশেষ খবর