বুধবার, ১৭ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক ছাড়িয়েছে কৌশলগত অংশীদারিত্বকেও

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক ছাড়িয়েছে কৌশলগত অংশীদারিত্বকেও

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভূগোল ও ভাষাগত গভীর বন্ধন রয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে এই সম্পর্ক সভ্যতাগত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে ৭ থেকে ১০ এপ্রিল ২০১৭ সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় সফরটির, যেটি দীর্ঘ সাত বছর পর অনুষ্ঠিত হয়েছে, পর্যালোচনা দরকার। ২০১৫ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের পর থেকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নতুন সহযোগিতার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে এবং ২০১৫ সালে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। এ বিষয়গুলোর অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর ছিল একটি সুযোগ। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর আমাদের সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং দুই প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত যৌথ বিবৃতি নিশ্চিত করেছে যে, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কগুলো ভ্রাতৃবন্ধনের ভিত্তি করে রচিত এবং সার্বভৌমত্ব, সমতা, বিশ্বাস ও সমঝোতার ভিত্তিতে একটি সার্বিক অংশীদারত্বের প্রতিফলন, যা কৌশলগত অংশীদারত্বকে অনেকটাই ছাড়িয়ে গেছে।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষ্য অনুযায়ী, ‘আমাদের সম্পর্কে একটি সোনালি অধ্যায় সূচিত হয়েছে।’

স্থল ও সমুদ্রসীমা চুক্তিগুলোর সফল বাস্তবায়ন আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম করেছে এবং আমাদের সহযোগিতা শক্তি সামর্থ্য বাড়ছে। বাকি অঞ্চলের অনুসরণের জন্য একটি নমুনা সম্পর্ক নির্মাণে আমরা একটি দারুণ অবস্থানে আছি। শুধু রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেই নয়, আমাদের সম্পর্ক হচ্ছে দুটি দেশের জনগণের মধ্যে ‘বন্ধুত্বের’ সম্পর্ক।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সম্পর্ককে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে গেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য তার ব্যক্তিগত গভীর শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে দিল্লির প্রাণকেন্দ্রে একটি সড়কেরও নামকরণ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর হিন্দি অনুবাদ উদ্বোধন করেন। উভয় দেশই বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে যৌথভাবে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে, যেটি ২০২০ সালে তার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুক্তি পাবে।

মুক্তিযুদ্ধে প্রাণদানকারী ভারতীয় সৈন্যদের পরিবার-পরিজনদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মান জানানো ছিল এক বিশেষ শুভেচ্ছার নিদর্শন, যা ১২৫ কোটি ভারতীয় জনগণের হৃদয় স্পর্শ করে। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকারও মূল্যায়ন করেছি, যা আমাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরিদের জন্য অতিরিক্ত ১০ হাজার শিক্ষাবৃত্তি প্রদান (বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্যমান ৪৬ কোটি); প্রতি বছর ১০০ মুক্তিযোদ্ধাকে ভারতীয় হাসপাতালগুলোয় বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দীর্ঘ পাঁচ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা প্রদানের ঘোষণা দেন।

সম্পর্ক এগিয়ে নিতে উভয় পক্ষের বিপুল রাজনৈতিক আগ্রহ রয়েছে। ভারত বাংলাদেশের একটি অঙ্গীকারবদ্ধ উন্নয়ন অংশীদার এবং আমরা বাংলাদেশকে সহজ শর্তে ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ প্রদানের অঙ্গীকার করেছি। সফরকালে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রদত্ত ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণরেখার অতিরিক্ত ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার সহজ শর্তে প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এটি হচ্ছে ভারত প্রতিশ্রুত কোনো একক দেশকে দেওয়া বৃহত্তম অঙ্কের ঋণ, যা প্রমাণ করে যে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে যথার্থ মূল্যায়ন করি এবং সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিই।

এই সফরে রেকর্ডসংখ্যক ৩৬টি চুক্তি/সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা কোনো একক সফরে কোনো দেশের সঙ্গে ভারতের স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকালে যে ২২টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল সেগুলো মিলিয়ে আমরা বলতে পারি, দুই বছরে সাকল্যে ৬০টি দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা কোনো ছোট অর্জন নয়। এটি আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিস্তৃতি ও গভীরতা এবং অপার সম্ভাবনার কথা বলে, যা এখনো আমাদের সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে, যা আমাদের সমাজকে বদলে দিতে পারে এবং আমাদের দুই দেশের জনগণের উন্নয়ন ঘটাতে পারে।

উপরন্তু এ চুক্তিগুলোর বেশির ভাগই নতুন চুক্তি এবং শুধু বিদ্যমান চুক্তিগুলোর নবীকরণ নয়। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ১৩টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ভারতীয় সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে, যেগুলো বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, লজিস্টিকস, শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে নতুন করে ১ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ আনবে। মংলা, ভেড়ামারা এবং মিরসরাইয়ে নিমির্তব্য ভারতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক জোনগুলোও বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ সহজতর করবে। আমরা প্রধান প্রধান কিছু ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প, যেমন ‘স্মার্ট সিটিজ’; ‘মেক উইথ ইন্ডিয়া’; ‘নামামি গঙ্গা প্রকল্প’ ইত্যাদিতে লব্ধ আমাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চাইছি। আমরা জ্বালানি দক্ষতা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি এবং ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে ১০ হাজার উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এলইডি বাল্ব লাগানোর পরিকল্পনা করেছি, যার কাজ এখন চলছে। নতুন ঋণরেখার আওতায় আমরা যৌথভাবে বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পও হাতে নেব। ভারতে আমাদের একটি স্মার্ট সিটিজ প্রকল্প রয়েছে এবং আমরা রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটে নগর উন্নয়ন প্রকল্পে সহযোগিতা করতে চাই; আমরা বাংলাদেশে ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করতে যাচ্ছি। আমরা শুধু অবকাঠামো উন্নয়নে নয় বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলোয় অংশীদারত্ব চাইছি, যা জনগণের জন্য বাস্তবভিত্তিক কল্যাণ বয়ে আনবে এবং আমরা ভারতে এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে পেরে আনন্দিত।

সমগ্র উপ-অঞ্চলে প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হওয়ার সম্ভাবনা বাংলাদেশের রয়েছে। যোগাযোগ আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। এটি আমাদের নিজস্ব প্রতিবেশিত্বমূলক প্রথম নীতির অংশ এবং পাশাপাশি উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধি উভয় দেশের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দুই প্রধানমন্ত্রী রাধিকাপুর ও বিরলের মধ্যে চতুর্থ রেলওয়ে সংযোগ (আগের ছয়টি রেল সংযোগের মধ্যে) উদ্বোধন করেন। ২০১৮ সাল নাগাদ আরও তিনটি রেললাইন সংযোগের কাজ শেষ হবে। ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস এখন পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যাত্রীসেবা দিচ্ছে এবং এ বছরের আগস্ট থেকে বেড়ে সপ্তাহে চার দিন চলাচল করবে। দুটি শহরের মধ্যে ভ্রমণের সময়সীমা ব্যাপকহারে কমিয়ে এটি নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান করবে। খুলনা ও কলকাতার মধ্যে চলাচলের জন্য একটি নতুন মৈত্রী এক্সপ্রেস চালুর কাজ চলছে, ইতিমধ্যে এর পরীক্ষামূলক চলাচল সম্পন্ন হয়েছে। যাত্রী চলাচল আরও সহজ করার জন্য কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা এবং ঢাকা-শিলং-গৌহাটি ছাড়াও খুলনা ও কলকাতার মধ্যে একটি নতুন বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে।

পণ্য ও জনগণের চলাচলের জন্য অভ্যন্তরীণ নৌপথের সম্ভাবনাকে অপেক্ষাকৃত কম কাজে লাগানো হয়েছে। তবে কলকাতা ও পানগাঁওয়ের মধ্যে পণ্য পরিবহন শুরু এবং কনটেইনার সার্ভিস চালু করা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এই সফরে যাত্রী ও ক্রুজ প্রটোকল বিষয়ে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকসমূহ এবং নাব্যতা সহযোগিতা অবশ্যই নৌ চলাচলে গতিবেগ আনবে।

বাণিজ্য : আমরা বাংলাদেশকে পূর্ণ বাজার প্রবেশাধিকার দিয়েছি। সীমান্ত হাটগুলো সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জীবিকার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উেস পরিণত হয়েছে এবং এই সফরে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় আরও সীমান্ত হাট স্থাপন করা হবে। সীমান্ত অবকাঠামোর উন্নয়ন পণ্য ও মানুষের সহজ চলাচলের পূর্বশর্ত এবং আমরা গত এক বছরে বেনাপোল-পেট্রাপোল ও ডাউকিতে নতুন ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট (আইসিপি) এবং শ্রীমন্তপুরে স্থল শুল্কবন্দর উদ্বোধন হতে দেখেছি। বাংলাদেশি পণ্যের সহজতর প্রবেশাধিকার ত্বরান্বিত করতে আমরা বিএসটিআইর মান পরীক্ষা সার্টিফিকেট গ্রহণেও সহযোগিতা করছি।

জ্বালানি : গত কয়েক বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে তার ভিশন ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’ সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বর্তমানে ভারত থেকে বাংলাদেশে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে এবং এতে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ করতে পারব বলে আশা করি। প্রকৃতপক্ষে আমরা সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা ভাবছি। এর মধ্যে দুটি প্রধান বেসরকারি বিনিয়োগ রয়েছে, আদানি পাওয়ার লিমিটেড এবং রিলায়েন্স পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে মোট ৩২০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশে অতিরিক্ত ২ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। (বর্তমানে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ ৬৬০ মেগাওয়াট; পাইপলাইনে আছে ৫০০ মেগাওয়াট; রিলায়েন্স এবং আদানি দেবে ২ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট; রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আসবে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট)। আমরা যশোর-খুলনা অঞ্চলের চাহিদামূলক কেন্দ্রগুলোয় এলএনজি সরবরাহ; ভারত এবং বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-খুলনা পাইপলাইনের মধ্যে গ্যাস গ্রিড আন্তসংযোগ স্থাপন; কুতুবদিয়ায় আইওসিএলের একটি এলপিজি আমদানি টার্মিনাল স্থাপন এবং এলপিজি পাইপলাইন নির্মাণের কথা ভাবছি। এ ছাড়া আমরা শিলিগুড়ি থেকে পার্বতীপুরে গ্যাস অয়েল সরবরাহের জন্য ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি মৈত্রী পাইপলাইন স্থাপনের কথা ভাবছি, যেটি ভারতীয় মঞ্জুরি সহায়তা থেকে নির্মাণ করা হবে।

পরিশুদ্ধ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকল্পগুলো অন্বেষণ করা হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে পারমাণবিক জ্বালানি বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে পেরে আনন্দিত, বিশেষ করে যেহেতু রূপপুরে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে এবং বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানি বিষয়ে তিনটি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। আমরা ভুটানের সঙ্গে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতায় যৌথ বিনিয়োগের লক্ষ্যে আলোচনাও শুরু করেছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর ছিল উচ্চ প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্র, যেমন তথ্য-প্রযুক্তি, মহাকাশ, বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানি, সাইবার নিরাপত্তা, ভূবিজ্ঞান ইত্যাদিতে সহযোগিতা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণেরও একটি সুযোগ। এই মাসের শুরুতে আমরা দক্ষিণ এশিয়া উপগ্রহ উেক্ষপণ করেছি, যেটি বাংলাদেশসহ অংশগ্রহণকারী সব দেশকে টেলিযোগাযোগ, টেলিমেডিসিন খাতে সেবা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় উন্নত সহযোগিতাসহ বহুমাত্রিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করবে।

নিরাপত্তা সহযোগিতা : ভারত ও বাংলাদেশের একটি চলমান ও শক্তিশালী নিরাপত্তা সহযোগিতা রয়েছে এবং দুটি দেশের সশস্ত্র বাহিনী এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফর ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের প্রতিরক্ষা ঋণরেখার জন্য একটি সমঝোতা স্মারকসহ প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে এই সহযোগিতার একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যার আওতায় বাংলাদেশ তার ইচ্ছামতো যন্ত্রপাতি পছন্দ করতে পারবে। আমাদের কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতার একটি সফল দৃষ্টান্ত গত বছরে যৌথ অভিযানের সময় দেখা গিয়েছিল, যা ৬৩ জেলেকে উদ্ধার করতে সাহায্য করেছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় ভারত ও বাংলাদেশের কোস্টগার্ডের মধ্যে আগে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক কার্যকর করে তুলতে এপ্রিলে একটি এসওপি স্বাক্ষর হয়।

জ্ঞান অর্থনীতিতে ভারত তার দক্ষতা ভাগাভাগি করেছে, যেখানে আমরা তুলনামূলকভাবে ভালো করেছি। আমরা বাংলাদেশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কিছু প্রস্তাব দিয়েছি, যার মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ৫০০-এরও বেশি প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ১ হাজার ৫০০ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান। দক্ষতা উন্নয়ন, চিকিৎসা বিজ্ঞান, পশু চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। আমাদের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি; টাটা মেডিকেল সেন্টার এবং বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর চিকিৎসাসেবা অধিদফতরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। আইআইটি, আইআইএমসহ ভারতের প্রধান প্রধান প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে আগত শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের দ্বার উন্মুক্ত করেছে।

আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের শক্তি ও আত্মা মানুষে মানুষে শক্তিশালী যোগাযোগের মধ্যে নিহিত। একটি উদার ভিসানীতি এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতীয় ভিসাপ্রাপ্তি সহজ করার লক্ষ্যে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারত ভ্রমণের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বর্তমানে ভারতে বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটক হচ্ছে বাংলাদেশি (২০১৬ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের ফলে চিকিৎসা ভিসা প্রদানের নিয়মাবলি আরও উদার করা হয়েছে, যাতে বাংলাদেশের জনগণ রোগ নির্ণয়ের জন্যও সহজে ভারত ভ্রমণ করতে পারে।

(ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা গতকাল ঢাকায় বাংলাদেশ হেরিটেজ ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বিয়ন্ড সামিট্রিজ : বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক সফল ভারত সফর’ শীর্ষক সম্মেলনে এ বক্তব্য দেন)।

সর্বশেষ খবর