বুধবার, ১৭ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঝিনাইদহে জঙ্গি আস্তানা, মিলল ডিনামাইট

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ধানহাড়িয়া-চুয়াডাঙ্গা গ্রামে দুটি জঙ্গি আস্তানায় র‌্যাব-৬ অভিযান চালিয়ে দুটি সুইসাইডাল ভেস্ট, পাঁচটি শক্তিশালী বোমা, ১৮টি ডিনামাইট স্টিক এবং বোমা তৈরির ১৮৬টি সার্কিট উদ্ধার করেছে। এ সময় গ্রেফতার করা হয়েছে সেলিম (৩৩) ও প্রান্ত (১৭) নামে নব্য জেএমবির দুই সদস্যকে। গ্রেফতার সেলিম সদর উপজেলার চুয়াডাঙ্গা গ্রামের আফতাব আলীর ছেলে। অপরজন প্রান্ত একই গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে। সেলিম ও প্রান্ত সম্পর্কে চাচাতো ভাই। আস্তানার ২০০ গজ এলাকার মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করে অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রথমে দুটি আস্তানার সন্ধান মিললেও পরে দুপুরে একই গ্রামে আরও তিনটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলে। র‌্যাব-৬ অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংকালে জানান, ঝিনাইদহ সদরের ধানহাড়িয়া-চুয়াডাঙ্গা গ্রাম থেকে সোমবার রাতে সেলিম ও প্রান্ত নামে নব্য জেএমবির দুজন সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক র‌্যাব গতকাল সকাল ৭টার দিকে চুয়াডাঙ্গা গ্রামে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে সেলিম ও প্রান্তর বাড়ি ঘিরে অভিযান শুরু করে। সকাল ১০টার দিকে খুলনা থেকে র‌্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয় দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযান শুরু করে। তারা প্রান্তর বাড়ির পাশের বাঁশবাগানের নিচে গর্ত খুঁড়ে দুটি সক্রিয় সুইসাইডাল ভেস্ট এবং সেলিমের বাড়ির পাশে কলাবাগানের মাটির নিচ থেকে পাঁচটি সক্রিয় শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করেন। এ ছাড়া আশপাশ থেকে ১৮টি ডিনামাইট স্টিক, বোমা তৈরির ১৮৬টি সার্কিট উদ্ধার করা হয়। অভিযান চলাকালে আশপাশের বাড়ির লোকজনকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। ফলে কাজকর্ম ফেলে তারা বাড়িতে আটকা পড়ে আছেন। ঝিনাইদহ র‌্যাব ক্যাম্পের মেজর মুনির আহমেদ জানান, প্রান্তর বাড়ির পাশের কলাখেত থেকে চারটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। বোমাগুলো খেতের মাটির নিচে পুঁতে রাখা ছিল। এর আগে বেলা ১১টার দিকে তিনি বলেন, ‘বাড়ির ভিতর মাটির নিচে বিস্ফোরক দ্রব্যসহ অন্যান্য অস্ত্র থাকতে পারে বলে অভিযান দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে। আগামীকাল (আজ) অভিযান সমাপ্ত করা হতে পারে।’ এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেলিমরা পাঁচ ভাই, দুই বোন। এর মধ্যে দুই ভাই দেশের বাইরে থাকেন। সেলিম আগে ঝিনাইদহ বিসিক শিল্পনগরীতে শ্রমিকের কাজ করত। এখন বাড়িতেই থাকে। তার ভাই তুহিন মহেশপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহত হয়। অন্যদিকে প্রান্তরা দুই ভাই, দুই বোন। প্রান্ত সবার বড়। সে ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজে পড়াশোনা করে। চুয়াডাঙ্গা গ্রামের লিকু নামের একজন বলেন, ‘কিছুদিন আগে পাশের গ্রাম পোড়াহাটিতে জঙ্গি আবদুল্লাহর বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। এবার চুয়াডাঙ্গা গ্রামের দুটি বাড়িতে অভিযান চালানো হলো। খুবই ভয় লাগছে। এভাবে একের পর এক এ এলাকায় জঙ্গি আস্তানা গড়ে ওঠায় আমরা আতঙ্কিত।’ ঘটনার শুরু ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি গান্না ইউনিয়নের বেলেখাল বাজারে ধর্মান্তরিত হোমিও চিকিৎসক খাজা ছমির উদ্দিন হত্যার মধ্য দিয়ে। এরপর একের পর এক হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জঙ্গিরা ঝিনাইদহে নিজেদের উপস্থিতির জানান দেয়। ঝিনাইদহ জেলা এখন পরিণত হয়েছে আতঙ্কিত জনপদে। নিরাপত্তা বাহিনীর জালে গুপ্ত হত্যাকারী জঙ্গিরা ধরা পড়ার পর কিছুদিন তাদের সঙ্গীরা এলাকা থেকে সরে যায়। এরপর ২২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনিয়া পাড়ার নব্য মুসলিম আবদুল্লাহর বাড়িতে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপারেশন সাউথ প নামে অভিযান চালায়। ওই সময় জঙ্গি আস্তানার মালিক আবদুল্লাহ পলাতক ছিল। ৭ মে মহেশপুর উপজেলার বজরাপুরের হঠাৎপাড়া ও সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। তারা আস্তানা দুটিতে অপারেশন শাটল স্প্লিট নামের অভিযান চালায়। মহেশপুরে অভিযান চলাকালে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নব্য জেএমবির সদস্য আবদুল্লাহ ও পুলিশের গুলিতে তুহিন নিহত হয়। সেখান থেকে আটক করা হয় বাড়ির মালিক জহুরুল হক ও তার ছেলে জসিমকে।

সর্বশেষ খবর