বুধবার, ১৭ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

সে দিনটি ছিল রবিবার। কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়ার বেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৫ মাইল। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়াও গতিরোধ করতে পারেনি গণতন্ত্রকামী লাখো মানুষের মিছিল। সেদিন  বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে সারা দেশের গ্রামগঞ্জ-শহর-বন্দর থেকে অধিকারবঞ্চিত মুক্তিপাগল জনতা ছুটে এসেছিল রাজধানী ঢাকায়। আজ সেই ১৭ মে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩৬তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৮১ সালের এই দিনে তিনি দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। সেদিন বিকাল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানযোগে শেখ হাসিনা ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে ঢাকার তৎকালীন কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে স্বাধীনতার অমর স্লোগান ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়েছিল ঢাকার আকাশ-বাতাস। জনতার কণ্ঠে বজ নিনাদে ঘোষিত হয়েছিল ‘হাসিনা তোমায় কথা দিলাম—পিতৃ হত্যার বদলা নেব’। ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ধ্বনিতে মুখরিত হয়েছিল রাজধানী ঢাকা। জনতার হৃদয়ছোঁয়া ভালোবাসার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই’। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী কর্মকর্তা ও সৈনিকেরা ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে হামলা চালিয়ে তাকেসহ তার পরিবারের সব সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রবাসে অবস্থান করায় ঘাতকদের হাত থেকে তারা প্রাণে রক্ষা পান। পঁচাত্তর-পরবর্তী রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণেই দীর্ঘদিন বিদেশে নির্বাসিত ছিলেন শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর নেতারা তার হাতে তুলে দেন তৎকালীন বহুধাবিভক্ত দেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যের সাফল্যগাথা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পতাকা। দেশে ফেরার পর থেকেই গভীর ষড়যন্ত্র, বার বার প্রাণনাশের চেষ্টা, গ্রেফতার-নির্যাতনসহ শতসহস  বাধা অতিক্রম করে জনগণের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে দেশে ফেরার ১৫ বছরের মাথায় আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিতে সক্ষম হন শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ৩৬ বছরের রাজনৈতিক পথ-পরিক্রমায় ঘোর প্রতিপক্ষরাও অপকটে স্বীকার করছেন, শেখ হাসিনা এখন যোগ্য রাষ্ট্রনায়ক।

৫ জানুয়ারির আগে শেখ হাসিনা ঝঞ্ঝাপূর্ণ রাজনীতি মোকাবিলায় যেমন বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন, তেমনি রাষ্ট্র পরিচালনায় নির্মোহভাবে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। একের পর এক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারকে এরই মধ্যে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও স্বীকার করেছেন, সরকারের যা কিছু সাফল্যে এর সবই অর্জিত হয়েছে শেখ হাসিনার ঐকান্তিক চেষ্টা ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও অকপটে স্বীকার করে বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনার অসম সাহস ও দৃঢ়চেতা মনোবলের কারণেই বঙ্গবন্ধু হত্যার রায় কার্যকর, বাঘা বাঘা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর এবং জঙ্গিবাদ দমন করা সম্ভব হয়েছে। দেশ বেরিয়ে এসেছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে। সারা বিশ্বই আজ অকুণ্ঠভাবে বিস্ময়কর উন্নয়নের গুণগান গাইছে। সবকিছু মিলিয়ে দৃঢ়ভাবেই বলা যায়, সরকার পরিচালনায় শেখ হাসিনার বিকল্প আজ কেউ নেই। বিপুল সমর্থন নিয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়ে শেখ হাসিনা দেশকে আত্মনির্ভরশীল, সুখী-সমৃদ্ধ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সম্পন্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিরলসভাবে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।  আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আজ দলটির পক্ষ থেকে দেশব্যাপী দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভা করা হবে। বিকালে খামারবাড়ী কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আলোচনায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সভাপতিত্বে দেশের বরেণ্য নাগরিক ও জাতীয় নেতারা উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখবেন। এর আগে সকাল ১০টায় গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের নেতৃবৃন্দ দলীয় সভানেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাবেন। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আজ বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করবে। শোভাযাত্রাটি শাহবাগ মোড় ঘুরে অপরাজেয় বাংলায় শেষ হবে। যুবলীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, আওয়ামী মহিলা লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।  আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে দেশব্যাপী (ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌর, থানা, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে) দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এ দিবসটি পালনের জন্য আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মী, সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী ও দেশের সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর