শনিবার, ২০ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
রাজনীতির নতুন মেরুকরণ

প্রার্থী দেব ৩০০ আসনে, থাকবে জোট : হাওলাদার

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

প্রার্থী দেব ৩০০ আসনে, থাকবে জোট : হাওলাদার

জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও নতুন জোটের মুখপাত্র এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে জাতীয় পার্টি এখন সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। আর নতুন জোট গঠনের মধ্যদিয়ে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার পথ উন্মোচিত হয়েছে। জোট নিয়ে আমরা আশাবাদী। ঈদের পরই দল ও জোট নিয়ে সারা দেশে যাব। ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেব। প্রতিটি আসনেই আমাদের তিন থেকে চারজন করে প্রার্থী রয়েছে। আমরা যোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেব। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন জাপা মহাসচিব। গুলশানে নিজ কার্যালয়ে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন তিনি। দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন ৫৬ দলের সম্মিলিত জাতীয় জোট (ইউএনএ) নিয়েও কথা বলেন রুহুল আমিন হাওলাদার। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ জোট নিয়ে আমি আশাবাদী। দম্ভ-অহংকার তিরস্কার করা রাজনৈতিক সংস্কৃতি হতে পারে না। আমি সাবেক সফল রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু এইচ এম এরশাদের একজন কর্মী হিসেবে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিকে হৃদয়ে লালন করি। সব রাজনীতিবদকে শ্রদ্ধা করি। জোট নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের ইতিবাচক আর মির্জা ফখরুলের নেতিবাচক মন্তব্যের জবাবও দেন তিনি। জাপা মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আমাদের রাজনৈতিক বন্ধু। কিন্তু বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেকে শত্রু ভাবেন কেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতিতে মেরুকরণ শুরু হয়েছে। আমরা চাই দেশে একটি সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরে আসুক। এ জন্য গণতন্ত্রমনা দলগুলো নিয়ে আমরা জোট করেছি। মির্জা ফখরুল ইসলাম কেন এ নিয়ে বৈরী মনোভাব প্রকাশ করেন, তা আমি জানি না। এতটুকু বলব, রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। এ চিরন্তন সত্য মেনেই আমাদের চলতে হবে। তিনি বলেন, রাজনীতিকদের সব প্রচেষ্টাই দেশের মানুষকে ঘিরে। সেখানে আত্মঅহংকার করে কোনো দল বা নেতাকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। এটাই আমাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক শিক্ষা। জনগণ কখন কোন দলকে ক্ষমতা থেকে ফেলে দেন আর কোন দলকে ক্ষমতার মসনদে বসাবেন তা একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তা জানেন।

মন্ত্রিপরিষদে থাকার পরও এরশাদের জোট কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আশা করছি ঈদের পরই এ বিষয়টি দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার করতে পারব। আমরা ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পর গণতান্ত্রিক সরকারের নামে যে দলগুলো ক্ষমতায় এসেছে তারা সরকারকে দলীয়করণ করেছে। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি ও বহু লুটপাট হয়েছে। জনগণ থেকে সরকারের দূরত্ব বেড়েছে। 

তিনি বলেন, জনগণ সরকারগুলোর নির্বাচনী অঙ্গীকার ভঙ্গ ও নানান অনিয়মের কথা ভুলেনি। ফলে থাকতে হয়েছে দলগুলোকে সরকারের বাইরে। সে কথাও গণতান্ত্রিক দলগুলোকে মনে রাখতে হবে। রাজনীতি নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি করলে রাজনীতিবিদদের ওপর গণমানুষের আস্থা কমে যায়। সেজন্য সব দুঃখ-বেদনা, নিপীড়ন সহ্য করে আমাদের চলতে হয়। দল বড়, জনসমর্থন বেশি এই বলে দম্ভ করলে ফলাফল কী হয় তা আমরা দেখেছি।

রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে এজন্য কে কতটুকু দায়ী তা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সংশোধনের পথে ফিরে আসলে অবশ্যই জাতীয় ঐকমত্যে আসা যাবে। জাপার ভিশন কি জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব বলেন, জাতীয় পার্টি অতীতের সব অপারগতা থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে নতুন প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে নির্ভুল ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছে। অচিরেই দলের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নিয়ে দেশবাসীর কাছে হাজির হব। এটা ভিশন না মিশন সময়ই কথা বলবে।

জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পেছনের দিনগুলোতে আমরা অতীতের সরকারের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছি। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। জেল-জুলম অত্যাচারে অগণিত নেতা-কর্মী জীবন দিয়েছে। দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে অনেকে। আমাদের নেতা-কর্মীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাদের দলে যোগদান করানো হয়েছে। এরপরও আমরা প্রতিটি নির্বাচনে জনসমর্থন নিয়ে পার্লামেন্টে রয়েছি। জোট প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, জোটের পরিধি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। সম্মিলিত জাতীয় জোটের লিয়াজোঁ কমিটি বিভাগ, জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসভা পর্যায়ে গঠিত হবে। রমজান মাসকে সামনে রেখে একযোগে কাজ করা আমাদের লক্ষ্য। জোট নিয়ে আরও চমক আসতে পারে। আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নির্দেশে এবং নেতৃত্বে সংগঠিত আমরা হচ্ছি। আগামী নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোট দেওয়ার পূর্বে বিগত তিনটি সরকারের সংস্কার উন্নয়ন, কল্যাণ ও জননিরাপত্তার কথা ভেবে নিশ্চয় পল্লীবন্ধুর নয় বছরের শাসনামলের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে। এইচ এম এরশাদের প্রতীক লাঙ্গলকেই অগ্রাধিকার দেবে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর যত উন্নয়ন হয়েছে তার সিংহভাগই হয়েছে এরশাদের শাসনামলে। অপর দুটি সরকারের শাসনামল এবং এরশাদের ৯ বছরের শাসনামলের তুলনামূলক বিশ্লেষণে মানুষ এই উপলদ্ধি করছে পল্লীবন্ধুর ৯ বছরের শাসনামল ছিল উন্নয়ন ও সুশাসনের স্বর্ণযুগ। তাই দেশের মানুষ এরশাদের জাতীয় পার্টিকে আবার ক্ষমতায় দেখতে চায়। দেশবাসী এরশাদের শাসনামলের অপেক্ষায় আছে। এরশাদ সরকারের আমলে চাঁদাবাজি, অবৈধ দখলবাজি, গুম, হত্যাসহ সমাজের এত অবক্ষয় ছিল না। এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতীয় জোটের মধ্যদিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে আবারও দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি, উন্নয়ন প্রতিষ্ঠা করা হবে ইনশাল্লাহ।

সর্বশেষ খবর