শনিবার, ২০ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

তৃণমূলে শেখ হাসিনার চার বার্তা

উন্নয়ন প্রচার, কোন্দল নিরসন বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড উপস্থাপন, সরকারের পক্ষে জনমত গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলের পর প্রথম বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। সকাল ১০টায় গণভবনে এই সভা হবে। সভা থেকে তৃণমূল নেতাদের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জোর দেবেন চারটি বিষয়ের ওপর। এগুলো হলো : সরকারের উন্নয়ন প্রচার, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন, বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং বিগত সরকারের সঙ্গে বর্তমান সরকারের তুলনামূলক উন্নয়নচিত্র তুলে নৌকার পক্ষে ব্যাপক জনমত গঠন। দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানা গেছে।

আজকের বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পাশাপাশি জাতীয় পরিষদ এবং ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও প্রচার ও প্রকাশনা, তথ্য গবেষণা ও দফতর সম্পাদক এবং দলের এমপি-মন্ত্রীদের ডাকা হয়েছে। কিন্তু সংগঠনের গঠনতন্ত্রে বর্ধিত সভায় জেলা ও মহানগরের সভাপতি-সম্পাদকদের উপস্থিত থাকার বিধান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতেই প্রচার, দফতর ও তথ্য গবেষণা সম্পাদকদের পাশাপাশি এমপি-মন্ত্রীদের ডাকা হয়েছে। যেসব জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই সেখানকার শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থাকবেন আজকের বৈঠকে। এমপি-মন্ত্রীরা যত বেশি নিজ নিজ এলাকায় উন্নয়ন ও দলের কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হবেন ততই তাদের জনপ্রিয়তা বাড়বে বলে মনে করেন দলের হাইকমান্ড। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড প্রচারে তৃণমূল নেতাদের প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সরবরাহ করার এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মূলত জেলা নেতাদের নির্বাচনী প্রচারণায় দক্ষতা বাড়ানো ও জনমত সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনী ইশতেহার তৈরিতে নেওয়া হবে তৃণমূল নেতাদের পরামর্শ। এ ছাড়া সংগঠনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সভায় আলোচনা হবে। অন্যদিকে সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে আজ। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ টাকা দিয়ে দলের সদস্য ফরম কিনে নিজের সদস্যপদ নবায়নের মাধ্যমে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে। আগামী জুন থেকে পুরোদমে আবার সদস্য সংগ্রহ করা হবে। একই সঙ্গে আজ গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র তুলে দেওয়া হবে জেলা নেতাদের হাতে। এর মাধ্যমে আজ থেকে জেলায় ২ জন সহসভাপতি ও ২ সদস্য এবং ১০ জন করে কাউন্সিলর নতুন করে নেওয়া হবে। দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচনী প্রচারণার কাজে জেলার নেতাদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য নিয়েও বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রচার-প্রচারণাসহায়ক তথ্য-উপাত্ত তুলে দেওয়া হবে তৃণমূল নেতাদের হাতে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের কোনো শত্রু নেই। সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদ আমাদের প্রধান শত্রু। এর বিরুদ্ধে জনমত গঠন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারের মাধ্যমে জনগণের কাছে যাওয়া এবং বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরার নির্দেশনা দেবেন দলীয় সভানেত্রী।’ তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। সেই নির্বাচনে জিততে হলে আমাদের মানুষের মন জয় করতে যা যা করতে হবে এবং দলকে আরও গণমুখী কীভাবে করা যায় সেই নির্দেশনা দেবেন শেখ হাসিনা।’ আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, গত নির্বাচন তেমন কোনো প্রতিযোগিতাপূর্ণ না হওয়ায় সে সময় তেমন কাজ করতে হয়নি, কিন্তু এবার এমনটা হবে না। তাই এবারের নির্বাচনে প্রচারণায় নতুনত্ব আনতে প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে দলকে সুসংগঠিত করে তোলা হবে। দলের মধ্যে কিছু ভুলত্রুটি রয়েছে, সেগুলো দূর করে সংগঠনের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে।’

আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা কৌশল নিয়েই আলোচনা হবে। দলের উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বিগত জাতীয় কাউন্সিলে দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে যেসব সংশোধনী আনা হয়েছিল সেগুলো জেলা নেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর