শনিবার, ২০ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা ছাড়া আর উপায় নেই

শফিউল আলম দোলন

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা ছাড়া আর উপায় নেই

শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন

দেশের যে অবস্থা তা থেকে পরিত্রাণ পেতে একমাত্র পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছেন না বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, যেখানে শুধু দুষ্টের লালন আর শিষ্টের দমন চলে, অন্যায়-অবিচার আর অনিয়মই যেখানে নিয়মে পরিণত হয়, ‘টপ টু বটম’ সবাই নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই বোঝে না— সেখানে একমাত্র আল্লাহতায়ালা ছাড়া ভালো মানুষের আর কেউ নেই। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে দেশ ও সমাজে বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। তবে দেশের বিদ্যমান রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে চরম অনীহা প্রকাশ করেন শাহ মোয়াজ্জেম। কথাবার্তা বলে বোঝা যায়, বিদ্যমান রাজনীতি থেকে তার আস্থা ক্রমান্বয়েই হ্রাস পাচ্ছে। ক্ষোভ, দুঃখ ও আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, যে সমাজের রক্ষকরাই এখন ভক্ষক-সেখানে আর রাজনীতি করে কী হবে। তা ছাড়া যেখানে ‘রাজ্য ও রাজা’ থাকেন, সেখানেই তো রাজনীতি থাকে। আমাদের দেশে তো এখন তার একটাও নেই। আছে শুধু রাষ্ট্র ও তার প্রধানমন্ত্রী। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আজকের সমাজে ভালো মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বর্তমানে সাধারণ মানুষের জন্য অস্বাভাবিক দুঃসময় চলছে উল্লেখ করে আশি-ঊর্ধ্ব এই রাজনীতিক বলেন, সকালে পত্রিকা খুললেই এখন খুন, গুম, অপহরণ, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ জঘন্য অপরাধ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থেকে চিন্তা করি এ জন্যই কি রাজনীতি করতে গিয়ে জীবনের ২০টি বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছি? জেল-জুলুমসহ অনেক নির্যাতন সহ্য করে, অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছি। আজকে জীবনসায়াহ্নে এসে আর হিসাব মিলছে না। কী চেয়েছিলাম আর কী পেলাম! তিনি আরও বলেন, হয় তো আমাদেরও অনেক পাপ আছে, তা-ই আল্লাহতায়ালা আমাদের এই শাস্তি দিচ্ছেন। সাবেক এই উপপ্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশজুড়ে ভয়ঙ্কর এক অবস্থা চলছে। এরকম একটি দেশের জন্য আমরা সেদিন জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করিনি। এ অবস্থা দেখে আমি মরেও শান্তি পাব না। এই দুঃসহ অবস্থার পরিবর্তন কবে হবে তাও বোঝা যাচ্ছে না। কারণ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়ার বয়স আর আমাদের নেই। যুদ্ধে যাওয়ার সময় শেষ হয়ে গেছে আমাদের। যৌবন থাকতে অনেক কিছুই করেছি। তখন আমার একটাই ছিল নেশা। আর তা হলো রাজনীতি। কিন্তু এখন আর দেশে কোনো রাজনীতি নেই। রাজনীতি করতে হলে রাজার মতো মন লাগে। সেই যোগ্যতাও হয় তো আমরা আজ হারিয়েছি। তাই রাজনীতি নিয়ে আমি আর কোনো কথা বলতে চাই না। নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত এই রাজনীতি আমার কাম্য নয়। তিনি বলেন, দেশব্যাপী প্রতিদিন যে পরিমাণ অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি আর নৈরাজ্য চলছে সেটি আল্লাহতায়ালারও সহ্য করার কথা নয়। নির্যাতিত মানুষের ‘ফরিয়াদ’ আর আল্লাহর মাঝখানে নাকি কোনো দূরত্ব থাকে না। কিন্তু যে সাধারণ মানুষের কথা আমরা বলছি- তাদেরও কোনো না কোনো পাপ আছে। সুযোগ না পাওয়ার আগ পর্যন্ত যে কোনো মানুষকেই নিষ্পাপ মনে হয়। কিন্তু সুযোগ পাওয়ার পরও যিনি অন্যায়, দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট, অবিচার করেন না, তাকেই বলা যায় নিষ্পাপ ব্যক্তি। কিন্তু এ ধরনের মানুষ কয়জন খুঁজে পাবেন সমাজে? আর পাওয়া যাবে না বলেই হয় তো আল্লাহপাক সহজে আমাদের দোয়া কবুল করেন না। আওয়ামী লীগ শাসনামলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো ভালো কাজের কথা স্মরণ না করতে পারলেও একটি বিষয়ের ব্যাপক প্রশংসা করেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। সেটি হলো শেখ হাসিনা তার বাবার হত্যাকাণ্ডের বিচার করে হত্যাকারীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। শত দোষের মাঝে এটা তার সবচেয়ে বড় গুণ। কারণ যার (বঙ্গবন্ধু) কারণে শেখ হাসিনা আজ ক্ষমতা ভোগ করছেন, তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন— তার হত্যাকারীদের বিচার তিনি করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও তিনি করছেন।

অতীতের স্মৃতিচারণ করে বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ’৫২ সালের সেই শৈশবে ভাষার দাবিতে আন্দোলনে নেমে আর ফেরা হলো না। একেবারে ‘জেল বার্ড’ বনে গেলাম। আমার জীবনের ২০টি বসন্ত কেটেছে জেলখানার বন্ধ প্রকোষ্ঠের অন্ধকারে। দুঃখ করি না, ভাষা আন্দোলন করেছি, জয়ী হয়েছি। বৈষম্য আর শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে করতে এক সময় স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি, নিজের যতটুকু সাধ্য ছিল- তাই নিয়ে সেই সংগ্রামে শরিক হই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ভারতের পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে সেই রক্তঝরা ঐতিহাসিক বক্তৃতার কারণে আমার পৈতৃক বাড়িঘর পাকিস্তানি হানাদাররা ভস্ম করে দেয়। সে সময় আমার পরিবার, স্ত্রী এবং শিশুপুত্র কোথায় ছিল জানতাম না। সে বাড়ি আর আমি পুনর্নির্মাণ করতে পারিনি। আফসোস নেই, কিছু মূল্য তো দিতেই হবে। সেদিন যারা ছিল স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের ঘোরবিরোধী, এমনকি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর নৃত্য-উল্লাস করেছে- তারাই আজ দেশের সর্বময় কর্তা। আর স্বাধীনতার ঘোষককেও ওরা বলে দালাল, পাকিস্তানি এজেন্ট। দেশের বর্তমান রাজনীতির প্রতি চরম অনীহা প্রকাশ করে শাহ মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সর্ব অঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেব কোথা’? কার কাছেই বা গিয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলব? তাই এখন আমার সব কথা পরম করুণাময় আল্লাহর কাছেই বলার চেষ্টা করি। তাত্ক্ষণিকভাবে হয় তো তিনি কোনো ব্যবস্থা নেন না। কিন্তু এক সময় অবশ্যই নেবেন। দেশের বিরাজমান অন্যায়-অবিচার মানুষের এখন গা সহা হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামনে হয় তো আরও খারাপ অবস্থা হতে পারে। সেগুলোতেও হয় তো ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাবে দেশের মানুষ। কারণ এ ছাড়া আর তাদের কোনো উপায় নেই।

সর্বশেষ খবর