রবিবার, ২১ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

সুবিধাবাদীদের দলে টানা হচ্ছে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে

--প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

মন্ত্রী-সংসদ সদস্য ও নেতাদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমার কাছে তথ্য আছে, নিজস্ব গ্রুপ ভারি করার স্বার্থে অন্য দল থেকে সুবিধাবাদীদের দলে টানা হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন, এরা দলে ঢুকে কমিশন খাওয়ার লোভে। পরে এরা এত বেশি শক্তিশালী হয়ে যায় যে, এদের কনুইয়ের গুঁতায় আমার দলের নিবেদিতরা টিকতে পারে না।’ গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন চত্বরে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। সভার শুরুতেও তিনি বক্তব্য দেন।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, এই সুবিধাবাদীরা  বহু জায়গায় আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন করেছে, নানা অপরাধ করেছে। গ্রুপিং ভারী করার জন্য অনেকে তাদের দলে নিয়েছেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, অনুপ্রবেশকারীরা দলে এসেছে কেন? ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে যারা জ্বালাও-পোড়াও করেছে, তাদের অনেকেই দলে এসেছে। অনেকে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, দলে যোগদানের পর অনেকে আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা পর্যন্ত করেছে। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কন্যা আরও বলেন, গ্রুপিংয়ের স্বার্থে, দল ভারী করার স্বার্থে এ সব আবর্জনা দলে স্থান দেওয়া যাবে না। ক্ষতিকর এ অনুপ্রবেশকারীদের দলে ভেড়ানো নেতাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, কার মাধ্যমে তারা আসছে, এখানে নামটা না বলি। তারা যদি এ পথ না ছাড়েন, তবে তারা কিন্তু নেতৃত্ব পাবেন না। এ সময় উপস্থিত নেতা-কর্মীরা করতালি ও হর্ষধ্বনির মাধ্যমে শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানান। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া বর্ধিত সভায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় পরিষদ সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, দলীয় সংসদ সদস্য, ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা ও মহানগর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক,  দফতর ও উপ-দফতর, প্রচার ও প্রকাশনা, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা এবং তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদকরা যোগ দেন। সূচনা বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সব ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ শেষে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন দলের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র উন্মোচন এবং নিজের সদস্যপদ নবায়ন করেন। সদস্যপদ নবায়নের জন্য নির্ধারিত ফি ২০ টাকা হলেও শেখ হাসিনা ৫০০ টাকা দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারজানা বেগমকে সদস্য করার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। এরপর দলের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দেওয়া ল্যাপটপ হন্তান্তর করেন শেখ হাসিনা। পরে আট বিভাগের আট জেলা নেতা বর্ধিত সভায় বক্তব্য দেন। 

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আবারও দেশবাসীর সমর্থন চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা বাংলাদেশের জনগণের মার্কা। যখনই নৌকা ক্ষমতায় এসেছে, তখন দেশের উন্নতি হয়েছে। আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত দলকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল এ দেশের প্রতিটি মানুষ অন্ন পাবে, আশ্রয় পাবে, উন্নত জীবন পাবে। আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মীর দায়িত্ব জাতির পিতার সে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেশ চালাই না। কোথায় কী সমস্যা আমরা জানি। উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনিয়ম যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, কী পেলাম আর কী পেলাম না, সেটি বড় কথা নয়। দেশের মানুষকে কী দিতে পারলাম সেটিই সবচেয়ে বড় কথা। মনে রাখবেন, ক্ষমতা ভোগের বস্তু নয়, ক্ষমতা দায়িত্ব পালনের। প্রতিটি ঘণ্টা, প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি সেকেন্ড দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনগণের কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে। পাকিস্তানের আইয়ুব খানের মতোই জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে মুক্তিযুদ্ধ করাকে অপরাধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তারা পাকিস্তানিদের তোষামোদ করে। বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তৃণমূলে দলের মনোনয়ন নিয়ে জালিয়াতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করেন। আগামীতে সংশ্লিষ্ট সবার স্বাক্ষরসহ তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে নাম পাঠানোর কথা জনিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে তার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরুর কথা উল্লেখ করে তিনি এ অভিযানকে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, জেলার নেতারা উপজেলায়, উপজেলার নেতারা ইউনিয়নে এবং ইউনিয়নের নেতারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাবেন। এভাবে সদস্য সংগ্রহ করবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নে দলের নিজস্ব অফিস থাকতে হবে। তার তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টার দেওয়া ল্যাপটপ অফিসের কাজে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, এসব ল্যাপটপকে ডাটাবেজ ও যোগাযোগের জন্য যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। সবার সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করতে হবে। 

শেখ হাসিনা বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে বলেন, বিএনপির মধ্যে কোনো মানবতাবোধ নেই। এদের রাজনীতিই লুটে খাওয়া ও মানুষ পুড়িয়ে মারা। আওয়ামী লীগকে ‘অনুসরণ করে’ ‘ভিশন ২০৩০’ দিয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এজন্য ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মানুষ তো মানুষকে দেখেই শেখে। আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী দল। তার কাছ থেকে সবাই শিখবে। এটা খুব স্বাভাবিক কথা। যদি নকল করেও পাস করতে চায়, করতে পারবে। সেটা বাংলাদেশের মানুষ বিবেচনা করবে। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে আবারও দেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, দুর্নীতি-লুটপাট ফিরে আসবে। ক্ষমতায় থাকতে এরা সন্ত্রাস ও দেশকে পিছিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি।

সৌদি আরবের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা ত্যাগ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরব ইসলামিক আমেরিকান (এআইএ) সম্মেলনে যোগ দিতে সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন। সৌদি বাদশাহ এবং পবিত্র দুই মসজিদের খাদেম সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।

গতকাল রাতে প্রধানমন্ত্রী এবং তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভিভিআইপি ফ্লাইটটি সন্ধ্যায় রিয়াদের উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব সফরকালে মক্কায় ওমরাহ পালন করবেন এবং মদিনায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করবেন। আজ সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বাদশাহ আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আরব ইসলামিক আমেরিকান শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর