সোমবার, ২২ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

হঠাৎ কেন তল্লাশি

সরকারি দলেই বিস্ময় ► বিএনপির কাছে কোনো কিছু স্পষ্ট নয় ► গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তল্লাশি : কাদের ► স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ চান ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে ‘হঠাৎ’ তল্লাশির যুক্তিযুক্ত কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে পুলিশের পাশাপাশি প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বক্তব্যেও সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা মিলছে না। সরকারি দলও এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। আওয়ামী লীগ বলছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই এ অভিযান চালানো হয়েছে। রাষ্ট্রবিরোধী নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগে অভিযান চালিয়ে পুলিশ বলেছে, ‘প্রাপ্তি শূন্য’। পুলিশের অতি উৎসাহও দেখছেন কেউ কেউ। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ ঘোষণায় দেশব্যাপী গণজোয়ার বাধাগ্রস্ত করতেই এ তল্লাশি। এটাকে ‘ন্যক্কারজনক’ উল্লেখ করে এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছে বিএনপি। 

শনিবারের অভিযানে অংশ নেওয়া একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বৃহস্পতিবার রাতে খালেদা জিয়ার এই কার্যালয়ে এক ট্রাক বই আনার খবর তারা  পেয়েছেন। ২০০৭ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ক্ষমতাসীন সরকারের দুর্নীতির শ্বেতপত্র তৈরি করা হবে— এমন খবরও তাদের কাছে ছিল। সেই সন্দেহ ঘিরেই এ অভিযান চালানো হয়। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে আদালতের তল্লাশি পরোয়ানা ছিল। এই পরোয়ানার ভিত্তিতেই সেখানে অভিযান চালিয়েছি।’ আওয়ামী লীগের একাধিক প্রেসিডিয়াম ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জানান, এ ঘটনা সরকার ও দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। এটা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে ভালো কোনো লক্ষণ নয়। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলে বলেন, আজ খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে। কাল যে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে তল্লাশি চালানো হবে না তারই বা গ্যারান্টি কি? এক্ষেত্রে পুলিশের একটি অংশের অতিরিক্ত বাড়াবাড়িও থাকতে পারে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে কিনা তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার। তবে আওয়ামী লীগের আরেকটি সূত্র বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তল্লাশির ঘটনা সরকারের শীর্ষ মহলের অজানা থাকার কথা নয়।

গতকাল এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এতদিন বিএনপি অফিসে কোনো ধরনের অভিযানের কোনো অভিযোগ তো ছিল না। হঠাৎ করে এটা কেন হলো? এ ব্যাপারে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা আমাকে যেটা বলেছেন, তাদের কাছে কিছু  গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল। তার ভিত্তিতে তারা এ অভিযান পরিচালনা করেছেন।’

বিএনপি সূত্র জানায়, ঘটনার দিন রাতে গুলশানে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কেন এই তল্লাশি চালানো হতে পারে, তা নিয়ে তিনি নেতাদের মতামত শোনেন। এ সময় তিনি বিস্ময় প্রকাশের পাশাপাশি ক্ষুব্ধও হন। এ ব্যাপারে গতকাল দুপুরে দলের যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানেও মির্জা ফখরুল এ বিষয়ে নেতাদের মতামত শোনেন। এরপর রাতে দলের স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে ফের বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।  সেখানেও এ নিয়ে শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য নেন বেগম জিয়া। 

বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি— এমন খবর রয়েছে সরকারের কাছে। সম্প্রতি খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন-২০৩০, দল গোছানোর তত্পরতাসহ নানা খবরও রয়েছে সরকারের কাছে। বিএনপি যাতে নির্বাচনে অংশ না নেয়, সেরকম একটি পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। তবে আগামীতে যে কোনো পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে যাবে বলেও জানা গেছে।

খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশির দিকে ইঙ্গিত করে গতকাল এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনে তাদের বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। গভর্নমেন্ট হ্যাজ বিকাম ডেসপারেট (সরকার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে)। বাংলাদেশে সুষ্ঠু রাজনীতি  হোক, এটা তারা চায় না। তারা আগামী নির্বাচন আবার একদলীয়ভাবে করার চিন্তাভাবনা করছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তল্লাশি করেছে একটি মাত্র কারণে, যাতে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে না আসে, বিএনপি যেন নির্বাচনে না আসে।’

খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশির ঘটনায় গতকাল দেশজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি। রাজধানীতেও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা, উত্তর শাখা, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। গতকাল বিএনপির যৌথসভায় ওই ঘটনার প্রতিবাদে বিশাল সমাবেশ করার কথাবার্তা হয়েছে। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুমতি পেলে আগামী ২৪ মে বড় আকারের প্রতিবাদ সমাবেশও করতে পারে বিএনপি। তা না হলে ২৫ মে ঢাকাসহ সারা দেশে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচিও নেওয়া হতে পারে বলে সূত্রে জানা যায়।

‘অভিযান গোয়েন্দা তথ্যে’ : গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, হঠাৎ কী কারণে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে অভিযান, তা নিয়ে আমি গতকাল (শনিবার) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিপির সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাকে জানিয়েছেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। গতকাল ধানমন্ডিতে একটি কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলার দফতর ও উপ-দফতর সম্পাদকদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় সভায়  তিনি এ কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, অভিযানের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণতন্ত্রের সম্পর্ক আবিষ্কার করেছেন। তারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন আমাদের পার্টি অফিসে দফায় দফায় হামলা হয়েছে। আমাদের সিআরআই (সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন)-এর অফিস সিলগালা করে দেওয়া হয়েছিল। এসব কি তারা ভুলে গেছে। তখন কি গণতন্ত্র সঠিক ছিল? তিনি বলেন, আমাদের অফিসের সামনে তখনকার বিরোধীদলীয় নেতার একুশে আগস্টের সমাবেশে সুপরিকল্পিতভাবে যে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল সে কি গণতন্ত্র?  আইভি রহমানসহ ২৩ জনের রক্ত ঝরল। এটা রক্তাক্ত গণতন্ত্র ছিল। বড় বড় কথা বলে লাভ নেই।

তৃণমূলের নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, দলের শৃঙ্খলা ও ভাবমূর্তি  রক্ষায় কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তিকেও ছাড় দেবেন না দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। পাবনার ঈশ্বরদীতে যে ঘটনা ঘটেছে এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এটা আপনারা জানেন। এ ধরনের ঘটনা যেখানেই ঘটবে সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং নেওয়া হবে। তিনি বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অপকর্মের জন্য প্রশাসনিকভাবেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইভাবে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ীও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের সাংগঠনিক জেলার দফতর সম্পাদকদের উদ্দেশে কাদের বলেন, গণমাধ্যমের কাছে যেতে হয়, তারাও আমাদের কাছে আসেন। কিন্তু গণমাধ্যম স্পর্শকাতর বিষয়। তাদের সঙ্গে কৌশলী আচরণ করতে হবে। কারণ গণমাধ্যমের সবাই আওয়ামী লীগ করে না। তাই অত্যন্ত সতর্কভাবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে হবে। গণমাধ্যমের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এটা দলের স্বার্থে।

সভায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জেলা নেতাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর প্রশিক্ষণ দেন। এ সভায় ড. আবদুর রাজ্জাক, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, অসিম কুমার উকিল, আবদুস সোবহান গোলাপ, সুজিত রায় নন্দী, আবদুস সবুর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই’ : গুলশানে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে পুলিশ  বেআইনিভাবে তল্লাশি চালিয়েছে অভিযোগ তুলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘সরকার সম্পূর্ণ  বেআইনিভাবে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। এ জন্য আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি। কারণ আমরা মনে করি, সম্পূর্ণভাবে  বেআইনি কাজ করেছে পুলিশ। সে জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবশ্যই  তার জবাব দিতে হবে, তাকেই এর দায় বহন করতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যখন দেশে একটা শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক চর্চা শুরু করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি, যখন আমরা ‘ভিশন-২০৩০’ দিয়েছি, এর পরপরই গুলশানে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যে আগ্রাসন হয়েছে, তা নজিরবিহীন। এ ধরনের ফ্যাসিবাদী আক্রমণ দেশে যে গণতন্ত্রের ন্যূনতম ভবিষ্যৎ আছে, তাকে বিনষ্ট করার একটা পাঁয়তারা। এটা উসকানিমূলক।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ থেকে আবারও প্রমাণিত হলো, এ সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। জনগণের অধিকারকে হরণ করছে।’

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে পুলিশের পরিচালিত তল্লাশি বেআইনি হয়েছে দাবি করেন সুপ্রিম  কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও দলের ভাইস  চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন।

তিনি বলেন, ‘সিআরপিসির বিধান হচ্ছে— এরকম তল্লাশি করতে হলে স্থানীয় দুজন গণমান্য ব্যক্তি অবশ্যই থাকতে হবে। এখানে দেখা যাচ্ছে যে, গণ্যমান্য ব্যক্তি কাউকেই অবহিত করা হয়নি। আইনের আরও বিধান হচ্ছে, যে ভবনটি তল্লাশি করবে, সেই ভবনের যে মালিক বা সেই ভবনে যারা থাকেন, তাদের অবহিত করবেন। প্রথমে বলবেন, তাদের দরজা যেভাবে আছে সেগুলো খুলে দিতে।’ বিষয়টি নিয়ে দলের সিনিয়র আইনজীবীরা বসে ‘পরবর্তী পদক্ষেপ’ নেবেন বলেও জানান অ্যাডভোকেট জয়নাল।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র এই আইনজীবী বলেন, ‘তল্লাশির পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জেনেছি, তারা (পুলিশ)  কোনো গণ্যমান্য ব্যক্তি তো নেননি। ওই অফিসে যে দুজন পিয়ন ছিলেন, তাদের একটি কক্ষে আটকে রেখে তল্লাশি করেছে। এ কাজ সম্পূর্ণ বেআইনি। পুলিশ সিআরপিসির ১০৩ ধারা লঙ্ঘন করেছে এবং ৯৬ ধারাও যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হয়নি। আদালত যে আদেশ দিয়েছে তা প্রতিপালনে তারা (পুলিশ) আইনের  কোনো  তোয়াক্কা করেনি।’

বিএনপির নয়াপল্টনের কার্যালয়ে যৌথসভায় দলের ভাইস  চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয়  নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, বিলকিস জাহান শিরিন, শামা ওবায়েদ, মাহবুবুর রহমান শামীম, আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর