সোমবার, ২২ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
বনানীতে দুই তরুণী ধর্ষণ

আরও তিন দিন সময় চাইল গাফিলতি তদন্ত কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বনানীর দ্য রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব ও গাফিলতি তদন্তে গঠিত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিটি আরও তিন দিন সময় নিয়েছে। এরই মধ্যে গতকাল পুনরায় বিকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বি এম ফরমান আলীকে ডিএমপি সদর দফতরে তলব করা হয়। গতকাল বেলা ৩টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ডিএমপি কার্যালয়ে অবস্থান করেন। সেখানে তদন্ত কমিটির সদস্যরা তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে বনানীতে হোটেলে আটকে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন সাফাত আহমেদের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন। গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসানের আদালতের খাসকামরায় তিনি এই জবানবন্দি দেন। তবে তলব করার বিষয়ে বনানী থানার ওসি ফরমান আলী বলেন, ‘আমি প্রশাসনিক কাজে ডিএমপি সদর দফতরে গিয়েছিলাম। তদন্ত কমিটি আমাকে ডাকেনি।’ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়ে ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, গতকাল কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা থাকলেও তদন্ত কমিটি তিন দিনের সময় চেয়েছে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবারের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দাখিল করবেন। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রাথমিকভাবে ফরমানের অনেক অনিয়মের বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে। কারণ মামলা হওয়ার পর বনানী থানা পুলিশ সাফাতের বাড়িতে গিয়েছিল। তখন সাফাত বাসায়ই অবস্থান করছিলেন। এ অভিযোগটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। বাদীদের সঙ্গে খারাপ আচরণের বিষয়ে এরই মধ্যে সত্যতা পাওয়া গেছে। আরও কিছু অনিয়ম ও অসঙ্গতি নজরে এসেছে। গাফিলতির প্রমাণ তদন্তে মিললে অবশ্যই শাস্তির সুপারিশ করা হবে। ১২ মে এডিশনাল কমিশনার মিজানুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন ও যুগ্ম-কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায়।

বিল্লালের জবানবন্দি : বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিল্লাল তার জবানবন্দিতে বলেছেন, দুই শিক্ষার্থীকে বনানীর রেইনট্রি হোটেলের অষ্টম তলার দুই কক্ষে আটকে রেখে সাফাত ও নাঈম ধর্ষণ করে। দুই তরুণীর ধর্ষণের পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে সাফাতের বন্ধু সাদমান সাকিফ। এদের মধ্যে নাঈম আশরাফ ধর্ষণ কাজে প্রধান ভূমিকা রাখে। ধর্ষণের সময় দুই তরুণীই ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার করে। তাদের এই অনৈতিক কাজে বাধ্য না করতে দুই শিক্ষার্থীই সাফাত ও নাঈমের হাত-পা ধরে। কিন্তু কোনো কিছুতেই তারা ছাড় দেয়নি। বিল্লাল বলেন, ‘সাফাতের কথামতো আজাদ ও আমি পুরো রাতই হোটেলের ওই কক্ষ পাহারা দিই। ধর্ষণের সময় বিভিন্ন খাবারসহ সরঞ্জাম এনে দিই। ধর্ষণের সময় দুই শিক্ষার্থীর আরও দুই বন্ধুও ছিল। গভীর রাতে সাফাত আমাকে তার কক্ষে আসতে বলে। এরপর আমাকে বাথরুমে দাঁড় করিয়ে রাখে।’ বিল্লাল বলেন, ওই সময় এক কক্ষে সাফাত, অন্য কক্ষে নাঈম ও সাদমান দুই তরুণীকে ধর্ষণ করে। এরপর তারা পাশের কক্ষ  থেকে দুই তরুণীর বন্ধুকে ডেকে এনের মারধর করে এবং তাদের কথা না শুনলে ইয়াবা দিয়ে চালান দেওয়ার হুমকি দেয়। ধর্ষণের সময় সে (বিল্লাল) বাথরুমে দাঁড়িয়ে পুরো ভিডিওচিত্র ধারণ করে। জবানবন্দি শেষে বিল্লালকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। এর আগে বিল্লাল র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছিলেন, ২৮ মার্চ বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সাফাতকে নিয়ে তিনি রেইনট্রি  হোটেলের অষ্টম তলায় ভাড়া করা কক্ষে যান। সেখানে সাফাতকে হোটেলে রেখে তিনি গুলশান ২ নম্বর থেকে এক তরুণীকে এবং বনানীর ১১ নম্বর থেকে আরেক তরুণীকে নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রেইনট্রি হোটেলে সাফাতের কাছে দিয়ে আসেন। তখন আবু নাঈম নামে সাফাতের আরেক বন্ধুকে তিনি দেখতে পান। এরপর সাফাতের  দেহরক্ষী আজাদকে নিয়ে তিনি আট তলায় যান। আদালত সূত্র জানায়, এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিদর্শক ইসমত আরা এমি আসামির স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার জন্য আদালতে আবেদন জানান। পরে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসানের খাসকামরায় বিল্লাল জবানবন্দি দেন। বিল্লাল স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি দেওয়ার আগে তাকে চিন্তাভাবনা করার জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়। জবানবন্দি দেওয়ার সময় বিল্লাল স্বাভাবিক ছিলেন।

সাফাত, সাদমানের মোবাইল ফোন সিআইডিতে : দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফের কাছ থেকে জব্দ করা পাঁচটি মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে আদালত। গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনে ঢাকার মহানগর হাকিম দেলোয়ার হোসেন এ আদেশ দেন। ধর্ষণের ঘটনায় আলামত হিসেবে ওই দুজনের কাছ থেকে জব্দ করা পাঁচটি মোবাইল সেট ও একটি পাওয়ার ব্যাংক পরীক্ষার জন্য সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানোর অনুমতি দিয়েছেন বিচারক। এ ছাড়া এই মামলার অন্যতম আসামি নাঈম আশরাফের ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম দেলোয়ার হোসেন সিআইডির ফরেনসিক বিভাগকে এ আদেশ দেন।

সর্বশেষ খবর