মঙ্গলবার, ২৩ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

দেখা হলো হাসিনা-ট্রাম্পের

বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

দেখা হলো হাসিনা-ট্রাম্পের

গতকাল সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ মুসলিম বিশ্ব নেতাদের পাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। গত রবিবার আরব ইসলামিক-আমেরিকান সামিট শুরুর আগ মুহূর্তে তাদের মধ্যে দেখা হয় বলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানিয়েছেন।

সাক্ষাৎকালে শেখ হাসিনা ও ডোনাল্ড ট্রাম্প একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশে সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী। জবাবে ঢাকা সফরে আগ্রহ প্রকাশ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বাংলাদেশে আসব।’

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাদশাহ আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের কক্ষে সম্মেলন শুরুর আগে দুই নেতা কুশল বিনিময় করেন। এ ছাড়া সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ও তাজাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রহমানের সঙ্গেও বৈঠক করেন। সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিদের অস্ত্র ও অর্থায়নের জোগান বন্ধে বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। পরে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত এবং পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য মদিনার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।

জানা যায়, সৌদি বাদশাহর আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মুসলিম প্রধান অর্ধশতাধিক দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে ‘আরব ইসলামিক আমেরিকান সামিটে’ অংশ নেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনস্থলে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ। পরে বাদশাহর দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন তিনি। স্থানীয় সময় বিকালে শুরু হয় শীর্ষ বৈঠক। সম্মেলন শেষে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এই সামিটের মূল উদ্দেশ্য ছিল সবাই মিলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে চিহ্নিত করা। মূলমন্ত্র ছিল ‘টুগেদার উই প্রিভেইল’। অর্থাৎ সবাই যদি আমরা সম্মিলিতভাবে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই, তাহলে এটা রোধ করা সম্ভব। সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ দমনে সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ বন্ধ করাসহ চার দফা প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ত্রাসী বোঝাতে গিয়ে ইসলাম শব্দটি ব্যবহার করা যে উচিত নয়, সে ঘোষণা দিতে সম্মেলনে উপস্থিত আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

সবাই মিলে শরণার্থী সংকট মোকাবিলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর : সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অবশ্যই সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র সরবরাহ ও অর্থের উৎস বন্ধ করতে চাই। তিনি মুসলিম দেশগুলোর প্রতি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি বন্ধ ও শান্তির নীতি অবলম্বনের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংলাপে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এটি সবার জন্য বিজয়—বিজয় পরিস্থিতি তৈরি করবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সব ধরনের চরমপন্থার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে এবং সর্বদাই যে কোনো ধরনের একক বা সম্মিলিত সন্ত্রাস ও উেসর বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে।

ইসলামকে সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়ে বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম, বিশ্বাস বা মৌলিক পরিচয় নেই, তারা যে কোনো ধর্ম থেকে আসুক না কেন।’ ইসলাম শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম কখনো সহিংসতা বা হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে না এবং ‘আমরা যে কোনো ধরনের চরমপন্থা ও সহিংসতায় ধর্মকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিচার্য মনে করি না’। তিনি বলেন, ইরাক ও সিরিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো সন্ত্রাসী সংগঠনসমূহের অভিযান এবং সদস্য সংগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর যুক্তরাষ্ট্রের মার্শাল পরিকল্পনা অনুসরণে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর জন্য একটি পুনর্গঠন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সংকটের কারণে সন্ত্রাস ও সহিংসতা বেড়ে যেতে পারে। কারণ শরণার্থী সংকট সন্ত্রাস ও সহিংসতার একটি সম্ভাবনাময় উেস পরিণত হতে পারে। তিনি বলেন, সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকা তিন বছরের শিশু আয়লানের লাশের ছবি অথবা আলেপ্পোতে ওমরানের রক্তাক্ত মরদেহ প্রতিটি মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। একজন মা হিসেবে আমাকেও এ ছবি কঠিনভাবে নাড়া দিয়েছে। শরণার্থীদের বেদনা আমি বুঝি। কারণ আমিও শরণার্থী ছিলাম।

শেখ হাসিনা বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি ও বঞ্চনা নতুন প্রজন্মের মনে অন্যায়-অবিচারের প্রতি ঘৃণার মনোভাবের সৃষ্টি হয়। তাই একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অনুষ্ঠানে সৌদি আরবের বাদশাহ ও দুটি বড় মসজিদের খাদেম সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরা বক্তব্য রাখেন।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও তাজাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক : বাদশাহ আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আরব ইসলামিক-আমেরিকান সামিটের সাইড লাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রহমনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার সুবিধাজনক সময়ে সে দেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। আশা করা হচ্ছে, এ বছরই হয় তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করবেন, অথবা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাজিকিস্তান সফরে যাবেন। পরে সম্মেলনের সাইড লাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নজিব রাজাকের সঙ্গেও বৈঠক করেন।

মহানবীর রওজা মোবারক জিয়ারত এবং ওমরাহ পালন : ‘আরব ইসলামিক আমেরিকান সামিটে’ যোগদান শেষে শেখ হাসিনা গতকাল স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে সৌদি রয়্যাল ফ্লিটের একটি উড়োজাহাজে করে মদিনার প্রিন্স মোহাম্মদ বিন আবদুল আজিজ বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান সৌদি আরবের ডেপুটি প্রিন্স সৌদ বিন খালেদ আল ফয়সাল। প্রধানমন্ত্রী মসজিদে নববীতে জোহরের নামাজ আদায় করেন এবং পরে মহানবী (সা.)-এর রওজায় যান। সেখানে তিনি রিয়াজুল জান্নাতে নফল নামাজ পড়েন এবং জিয়ারত করেন। পরে মোনাজাতে অংশ নেন। সন্ধ্যায় আকাশ পথে জেদ্দা গিয়ে পরে সড়কপথে মক্কায় পৌঁছান তিনি। পরে ওমরাহ পালন করেন প্রধানমন্ত্রী। চার দিনের সফর শেষে ২৪ মে দেশে ফিরবেন তিনি।

সর্বশেষ খবর