নির্বাচনে ব্যালটের পরিবর্তে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে আপত্তি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল সিইসি কে এম নূরুল হুদার কাছে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের চিঠি তুলে দেন। প্রতিনিধি দল নির্বাচন ভবনে সিইসির সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। পরে প্রতিনিধি দলের নেতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সিইসিকে বলেছি ইভিএম আমরা চাই না, (আগামী সংসদ নির্বাচনে) এর ব্যবহার যেন না হয়।’ তিনি জানান, সিইসিকে তারা বলেছেন, বিশ্বের অনেক দেশ যেখানে ইভিএম পরিত্যাগ করছে, সেখানে বাংলাদেশে তা চালু করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে; এখানে ডিজিটাল কারচুপির শঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘সিইসি বলেছেন এটা একটা নতুন পদ্ধতি; এটা নিয়ে দেখার বিষয় রয়েছে। কমিশন বলেছে, কেউ আপত্তি করলে ইভিএম তারা ব্যবহার করবেন না। এখন পর্যন্ত যা বুঝলাম তাতে আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সম্ভাবনা নেই।’ ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথম ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এরপর স্থানীয় সরকারের কয়েকটি নির্বাচনে সফলভাবে ইভিএম ব্যবহার হলেও কারিগরি ত্রুটি নিয়ে নির্বাচন কমিশন-বুয়েট দ্বন্দ্বে এর ব্যবহার আটকে যায়। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ই-ভোটিং’ চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়। নতুন কমিশন ভোট আয়োজনের যে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে, এতে ইভিএম নিয়ে প্রস্তুতির জন্যও সময় রাখা হয়েছে। ১১ মে সিইসি কে এম নূরুল হুদা এক অনুষ্ঠানে জানান, রাজনৈতিক দল ও সরকার চাইলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব। সিইসির সঙ্গে আলোচনায় ইভিএম নিয়ে আপত্তির পাশাপাশি ব্যালট পেপারের ভোট আরও সুচারু করা এবং আইন সংস্কার নিয়ে মতামত দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিএনপি। নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ব্যালটে ভোট আরও সুষ্ঠু করার জন্য আরপিও সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। আইন সংস্কার নিয়ে আমরা কথা বলব। সিইসি বলেছেন ইসির প্রস্তাবিত সংস্কার বইয়ের মতো করে রাজনৈতিক দলসহ সবার কাছে পাঠানো হবে, সংলাপে তাদের মতামত নেবেন। আমরা সেখানে পরামর্শ দেব।’ বিএনপির এই নেতা জানান, ‘ইসির সংলাপে আমরা আসব; আলোচনা করব। আমরা নির্বাচন চাই, নির্বাচনেও অংশ নেব। এর জন্য পরিবেশও চাই।’ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি নেতা সুজাউদ্দিন ও ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ : আগামীকাল বুধবার ২৪ মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশির প্রতিবাদে রবিবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ২৪ মে এ সমাবেশ এবং পরদিন ২৫ মে সারা দেশে প্রতিবাদ মিছিল কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এ সমাবেশের জন্য অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট দুটি দফতরে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ গতকাল এ তথ্য নিশ্চিত করেন। স্থায়ী কমিটির বৈঠকের উদ্ধৃতি দিয়ে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

প্রসঙ্গত, শনিবার সকালে গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এর প্রতিবাদে পরদিন রবিবার সারা দেশে বিক্ষোভ করে বিএনপি।