বুধবার, ২৪ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে বৈঠক

জুলাইয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপ শুরু

গোলাম রাব্বানী

জুলাইয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপ শুরু

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগামী দেড় বছরের কাজের খসড়া সূচি বা রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। চলতি বছরের জুলাই থেকে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত সেই কর্মসূচি অনুযায়ী কাজ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বছরের জুলাই থেকে নভেম্বরের মধ্যে সংলাপের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।

নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সময়সূচি চূড়ান্ত করতে প্রস্তাবিত ‘রোডম্যাপ’ নিয়ে গতকাল বৈঠক করেছে ইসি। বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত দলগুলোসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একবারই সংলাপ করব। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এ সংলাপ হবে। সীমানা পুনর্নির্ধারণ, আইন সংস্কার, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নতুন নিবন্ধন, ভোটকেন্দ্র, ইসির সক্ষমতা বাড়ানো ও সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি—এ সাত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’ সিইসি বলেছেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার জন্য তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি থাকছে। ২০ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির শেষার্ধ পর্যন্ত সময়ে যে কোনো দিন ভোটের তারিখ রাখা হবে। এ কর্মযজ্ঞ এগিয়ে নিতে চার নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে আলাদা চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান সিইসি। ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সিইসি বলেন, ‘যথাসময়ে তফসিল ঘোষণা করা হবে। ডিসেম্বরের শেষার্ধ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটের জন্য উপযুক্ত সময়। আমরা নিজেরা (কমিশন) বসে ভোটের তারিখ দেব।’ প্রস্তাবিত রোডম্যাপ নিয়ে গতকাল প্রথম দফা আলোচনা সেরেছেন বলে জানান নূরুল হুদা। তিনি বলেন, ‘আমরা খসড়া নিয়ে বসেছি। চূড়ান্ত হতে আরও ১৫-২০ দিন সময় লাগবে। এর পরই আমরা প্রস্তাবগুলো নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করব।’ জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে আলোচনাও একই সঙ্গে চলবে বলে জানান সিইসি, যদিও বিএনপি এরই মধ্যে ইভিএমে আপত্তি জানিয়ে ইসিকে চিঠি দিয়েছে। নূরুল হুদা বলেন, ‘ইভিএমকে আমরা সামনে রাখতে চাই। এর প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো সবার কাছে উপস্থাপন করা হবে। প্রযুক্তি নিয়ে সবাই একমত হলে তা ব্যবহারের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি থাকবে আমাদের।’ তবে রাজনৈতিক দলগুলো একমত না হলে জোর করে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না বলে জানান সিইসি। নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সিইসি।

নির্বাচনী কর্মযজ্ঞ শুরু জুলাইয়ে : জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে একাদশ সংসদ নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ। এ মাসে নির্বাচনী আইন সংস্কার এবং রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করতে চাইছে ইসি। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এ সংলাপ। একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল নির্বাচনী রোডম্যাপের খসড়া চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। রোডম্যাপে সাতটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—সীমানা পুনর্নির্ধারণ, আইন সংস্কার, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নতুন নিবন্ধন, ভোটকেন্দ্র, ইসির সক্ষমতা বাড়ানো ও সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। এ জন্য বিভিন্ন কাজের সময়সীমাও নির্ধারণ করা হয়েছে।

এবারের নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে নির্বাচনী আইন সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য চলতি বছরের জুলাই থেকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সহজ ও যুগোপযোগী করতে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষক ও অভিজ্ঞ সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। এ জন্য চলতি বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সংলাপের সুপারিশ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে চলতি বছরের আগস্টের মধ্যে। এরপর আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ করবে ইসি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত। ভোটার তালিকা থেকে মৃত ভোটারদের বাদ দেওয়ার জন্য নতুন করে ভোটার হালনাগাদ করা হবে নির্বাচনের আগেই। এ জন্য চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। আর ৩০০ আসনের জন্য ভোটার তালিকা মুদ্রণ করা হবে আগামী বছরের জুনের মধ্যে। সংসদ নির্বাচনের জন্য নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেওয়ার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে নির্বাচনী রোডম্যাপে। এ জন্য চলতি বছরের অক্টোবরে নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন চাইবে ইসি। আগামী বছরের জানুয়ারিতে নিবন্ধন প্রদান, এরপর এপ্রিলের মধ্যে রাজনৈতিক দলের তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আগামী বছরের জুলাই থেকে তফসিল ঘোষণার ৩০ দিন আগে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে ইভিএম বিষয়ে মতামত দিয়ে তা ব্যবহারের বিষয়ে আগামী বছরের জানুয়ারিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইসি।

সর্বশেষ খবর