বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

শেষ হচ্ছে না ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের বিচার

সুইডেন আসলাম ২০ বছর ধরে বন্দী ♦ ১১ মামলা নিয়ে জোসেফ আটক ১৯ বছর

আনিস রহমান

শেষ হচ্ছে না ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের বিচার

ঢাকা মহানগর পুলিশের খাতায় তারা ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর কেটে গেছে প্রায় দুই দশক। খুন, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির মামলায় তারা কারাবন্দী। পুলিশ এসব মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষী হাজির করতে না পারায় তাদের বিচার শেষ হচ্ছে না। ফলে প্রায় দুই দশক ধরে কারাগারে তারা দিন কাটাচ্ছেন হাজতি হিসেবে। অবশ্য ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের মধ্যে জোসেফ, সানজিদুল হাসান ইমন, ফ্রিডম সোহেল ও হাবিবুর রহমান তাজ কয়েদি হিসেবে বন্দী আছেন। এ ছাড়া হাজতি হিসেবে আছেন শেখ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, খন্দকার নাঈম আহম্মেদ টিটন, কিলার আব্বাস, ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, খোরশেদ আলম রাসু, আরমান, আক্তার, লম্বু সেলিম, রতন গামা, শাহাজাদা, মোকসেদ আলী মুকসা ও তাজ। ২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকা মহানগরীর ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম ঘোষণা করে। এদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কারের টাকাও ঘোষণা করা হয়। ওই তালিকায় রয়েছেন ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল (শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা ঘোষণার আগে থেকেই কারাবন্দী), খন্দকার নাঈম আহম্মেদ টিটন, ফ্রিডম সোহেল, খোরশেদ আলম রাসু, কিলার আব্বাস ও আরমান অন্যতম। রাজধানীর ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের একজন শেখ মো. আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম। নব্বইয় দশকের আলোচিত এই শীর্ষ সন্ত্রাসী আর মাত্র একটি মামলায় খালাস পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। দুই দশক ধরে তিনি কারাগারে বন্দী। ২০ বছর আগে আসলাম যখন গ্রেফতার হন, তখন তার নামে ঢাকার বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজি, খুন, অবৈধ অস্ত্র বহনের অভিযোগে ১২টি মামলা ছিল। গ্রেফতার হওয়ার পর ১২ বছরে ১১টি মামলায় খালাস পেয়েছেন তিনি। আর আট বছর ধরে চলছে তেজগাঁওয়ের যুবলীগ নেতা গালিবকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলাটি। এ মামলায়ও যদি তিনি খালাস পান, তাহলে তার কারামুক্ত হতে আর কোনো বাধা থাকবে না। এই হাজতির ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, সুইডেন আসলাম নানা অজুহাতে মামলাটির নিষ্পত্তিতে বিলম্ব করছেন।

ওই সময়ের আরও এক সন্ত্রাসী তোফায়েল আহম্মেদ জোসেফ। ১৯ বছর আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা ১৯৯৬ সালের ৭ মে ফ্রিডম পার্টির নেতা মোস্তফা হত্যা মামলার আসামি হন। এ মামলায় তিনি যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছেন। অপর একটি মামলা বিচারাধীন। তার বিরুদ্ধে মোট ১১টি মামলা ছিল। ইতিমধ্যে নয়টি মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। কারা অধিদফতর থেকে পাওয়া বিভিন্ন কারাগারে বন্দী ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের একটি হালনাগাদ তালিকায় দেখা যায়, সানজিদুল হাসান ইমন কয়েদি হিসেবে বন্দী আছেন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১-এ। ১৯৯৪ সালে হওয়া ধানমন্ডি থানার ৩৮ নম্বর মামলায় তার সাজা হয়েছে। এ ছাড়া তেজগাঁও ও শাহবাগ থানার আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। একই কারাগারে হাজতি হিসেবে বন্দী আছেন মহাখালীর সন্ত্রাসী আক্তার। তার বিরুদ্ধে হওয়া গুলশান থানার তিনটি মামলা বিচারাধীন। লম্বু সেলিমের বিরুদ্ধে ১৯৯৯ সালে গুলশান থানায় হওয়া একটি মামলা বিচারাধীন। অন্য সাতটি মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ বন্দী রতন গামার বিরুদ্ধে মিরপুর ও ধানমন্ডি থানায় করা ১০টি মামলার বিচার চলছে। একই কারাগারের হাজতি শাহাজাদার বিরুদ্ধে রামপুরা, খিলগাঁও, বাড্ডা থানার পাঁচটি মামলার বিচার চলছে। মোকসেদ আলী মুকসার বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় আটটি এবং সূত্রাপুর থানায় করা একটি মামলার বিচার চলছে। খন্দকার নাঈম আহম্মেদ টিটনের বিরুদ্ধে যশোরের কোতোয়ালি এবং ঢাকার ধানমন্ডি ও কাফরুল থানার চারটি মামলার বিচার চলছে দীর্ঘদিন ধরে। কিলার আব্বাসের বিরুদ্ধে উত্তরা, কাফরুল ও ক্যান্টনমেন্ট থানায় হওয়া ছয়টি মামলা বিচারাধীন। ইমামুল হাসান ওরফে পিচ্চি হেলালের মোহাম্মদপুর থানায় হওয়া তিনটি মামলার বিচার চলছে। খোরশেদ আলম রাসু রমনা থানার একটি মামলায় নির্দোষ প্রমাণিত হলেই কারাগার থেকে বের হতে আইনগত আর কোনো বাধা থাকবে না। একই অবস্থা আরমানের। তার বিরুদ্ধেও দুটি মামলা বিচারাধীন আছে।

সর্বশেষ খবর