বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, বিএনপি নির্বাচনে যাবেই

মাহমুদ আজহার

ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, বিএনপি নির্বাচনে যাবেই

মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন

চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে ভয় দেখিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। এতে সরকার ঈর্ষান্বিত হয়ে নির্বাচন থেকে কৌশলে বিএনপিকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। এ কারণেই সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে। নেতা-কর্মীদের শঙ্কিত করাই ছিল সরকারের লক্ষ্য। কিন্তু তল্লাশি চালিয়ে, ভয় দেখিয়ে বিএনপিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন থেকে বিরত রাখা যাবে না।’ গুলশানের নিজ বাসভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এ মন্তব্য করেন। খোলামেলা আলাপচারিতায় চলমান রাজনীতির পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়েও কথা বলেন তিনি। সরকারকে হুঁশিয়ার করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে আরেকটি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। বিএনপিকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে আর কোনো নির্বাচনও হবে না। অফিস তল্লাশি করে, জেল-জুলুমের ভয় দেখিয়ে, নেতা-কর্মীদের হয়রানি-নির্যাতন করে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে সরকারের পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পরিণত হবে। যে কোনো পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচনে যাবেই। তবে নির্বাচনে যাওয়ার আগে আমাদের দাবিগুলোও সরকার মানতে বাধ্য হবে।’

সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘কোনো পরাশক্তিই চাইবে না ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন এ দেশে হোক। বিএনপি চায় এ দেশ আইডিয়াল ডেমোক্র্যাসিতে ফিরে আসুক। এটা বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দল। বিএনপি হচ্ছে জিয়ার পক্ষ থেকে বাংলাদেশিদের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার। এটাই আমাদের ঠিকানা। আমি মনে করি, ১৬ কোটি মানুষের ঠিকানাই হচ্ছে বিএনপি।’ অতীতেও বিএনপি গণতন্ত্র ও জনগণের পাশে থেকেছে দাবি করে মীর নাছির বলেন, ‘দেশের জনগণের স্বার্থেই বিএনপি সংবিধানের পঞ্চম ও দ্বাদশ সংশোধনী এনেছে। এগুলো জনগণের ভোটের অধিকার পাওয়ার জন্যই করা হয়েছে। তার বিপরীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য চতুর্থ ও পঞ্চদশ সংশোধনী করেছে। বহুদলীয় গণতন্ত্র এনেছেন শহীদ জিয়াউর রহমান। আর বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশে প্রথম সংসদীয় গণতন্ত্র চালু করেছেন। শহীদ জিয়া সামরিক বাহিনী থেকে এসেও গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেছেন। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল চালু করেছেন।’ মীর মোহাম্মদ নাছির বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ এতে হাত দেয়নি। এমনকি পঞ্চদশ সংশোধনীতেও তারা এ বিষয়ে কিছুই করেনি। কিন্তু ২০১৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর যখন আদালত অবমাননার একটি আইন হাই কোর্ট বাতিল করল তখনই ষোড়শ সংশোধনী এনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল বাতিল করে সংসদ। যদিও হাই কোর্ট তাকে বেআইনি ঘোষণা করেছে। সে কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে সরকার সব ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়েছে। সংসদের হাতে নিয়ে যাওয়া মানেই প্রধানমন্ত্রীর হাতে নিয়ে যাওয়া। কারণ, তিনি সংসদ নেতা।’ সাবেক এই বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যারা দলে রয়েছেন, তারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করে দলের পতাকা সমুন্নত রাখছেন। আমি আশা করি, মৃত্যুর পর শহীদ জিয়ার সঙ্গে আমার দেখা হবে। সেদিন আমি যেন মাথা উঁচু করে বলতে পারি, আপনার দর্শনের সঙ্গে আমি বেইমানি করিনি। আপনার পরিবারের সঙ্গে মোনাফেকি করিনি। অনেকে ‘৯১ সালে যোগ দিয়ে এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। আমি বার বার বলেছি, আই নেভার মাইন্ড ফর ইট। সেজন্য আমাকে দল সম্মানিত করেছে। বিভিন্ন স্থানে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সৌদি আরবে বাঙালিরা যত দিন থাকবে তত দিন তারা মীর নাছিরের নাম মুখে মুখে রাখবে। আমি মনে করি, সফল রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমি সেখানে কাজ করেছি। এটা ছিল শহীদ জিয়ারই দর্শন। একবার বাদশাহকে জিয়ার কথা বলার পর ঈদের দিন তিনি আমাকে বিশেষভাবে তার বাসায় দাওয়াত করেন।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপিতে নতুন আগমনকারী ও যোগদানকারীর হিড়িকে “সহনশীল” নেতারা হতাশাগ্রস্ত। এমন অনেক নেতাই আছেন যারা গত ১০ বছরে এক দিনও কারাবরণ করেননি। তাদের কোনো মামলাও নেই। কোনো মিছিলেও ছিলেন না। সরকারি দলের ভাষায় তারা নাকি “সহনশীল” নেতা। আমি বা আমরা যারা বিএনপির জন্ম দেখেছি, আমরা নাকি এখন অ্যাগ্রেসিভ নেতা। যারা গুলশান অফিসে প্রতিদিন ঘোরাঘুরি করেন, তাদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয় কে কয়দিন জেল খেটেছেন— তবে ভিড় কমে যাবে। সত্যিকারের ত্যাগী নেতারা এতে উৎসাহিত হবেন।’ হেফাজতের আমির মাওলানা আহমদ শফীর সঙ্গে সম্প্রতি দেখা-সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘মাওলানা শফীর মাদ্রাসার সঙ্গে আমাদের পরিবারের সম্পর্ক শত বছর ধরে। আমি এলাকায় গেলেই তার সঙ্গে দেখা না করলে বলাবলি করেন, আমি কেন দেখা করিনি? শুধু দেখা-সাক্ষাতের জন্যই গেছি। বিএনপির কোনো বার্তা ছিল না। তা ছাড়া হেফাজত কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এরা নিরীহ টাইপের কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন। মাওলানা শফীর সঙ্গে আমি কখনো রাজনৈতিক আলাপ করিনি। তবে আমার সাক্ষাতের পর যেভাবে বিভিন্ন সংস্থা যোগাযোগ করেছে, তাতে বিস্মিত হয়েছি।’ মীর নাছির বলেন, ‘নির্বাচনে যদি সামরিক বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে এক সপ্তাহের জন্য নামানো হয়, তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবেই। ২০০৮ সাল পর্যন্ত সামরিক বাহিনী নির্বাচনে ছিল। “ল ইন ফোর্সিং” এজেন্সিতেও তারা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কিন্তু আরপিও সংশোধন করে সেনাবাহিনীকে বাদ দেওয়া হয়। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞা থেকে তাদের বাদ দেওয়া হয়। এমন কোনো কাজ নেই যাতে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা হচ্ছে না। ভোটে ব্যবহার করলে ভয় কীসের? এ নিয়ে সরকারের বৈরিতার কারণ বোঝা যাচ্ছে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এ সরকার করেনি। একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদ ও হস্তক্ষেপে এ নির্বাচন হয়েছে। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।’ কোনো পরাশক্তি কাউকে ক্ষমতায় বসাতে পারে না দাবি করে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপি মনে করে এ দেশে ক্ষমতায় বসানো বা বাদ দেওয়ার একমাত্র শক্তি হচ্ছে জনগণ। আমরা মনে করি, মোদি বা ট্রাম্প বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে পারবেন না। ক্ষমতায় বসাবে বা সরাবে জনগণ। তবে জনগণ ভোটাধিকারের সুযোগ পেলে ৯০ ভাগ ভোট পাবে বিএনপি।’

সর্বশেষ খবর