শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
মোদির সঙ্গে বৈঠক

বাংলাদেশের আত্রাই নদী নিয়ে অভিযোগ মমতার

কলকাতা প্রতিনিধি

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট শহরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা আত্রাই নদীতে বাংলাদেশের অংশে বাঁধ দেওয়ার ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বৃহস্পতিবার দুপুরে দিল্লিতে মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পর মমতা সাংবাদিকদের জানান ‘উত্তরবঙ্গে  আত্রাই নদী, পুনর্ভবা নদী আছে। ভারতকে জিজ্ঞাসা না করেই বাংলাদেশের সীমানায় ওই নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ফলে শুখা মরসুমে আমাদের এখানে পানি আসে না। আমাদের কৃষকরা অনেক কষ্টে রয়েছে। আবার যখন ওদের ওখানে পানি বেশি হয়ে যায় তখন সেটা ছেড়ে দেয়, ফলে আমাদের এখানে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই বিষয়টি দেখার জন্য কেন্দ্রকে জানিয়েছি।’ বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রসঙ্গটি তুলে মমতা বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের বড় বন্ধু, আমরা সবসময় তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলি। কিন্তু কখনো কখনো এমন কিছু ঘটনা ঘটে...জানি না কেন হয়? বালুরঘাটের লাইফলাইন বলে পরিচিত আত্রাই নদীর ওপর বাংলাদেশের তরফে বাঁধ নির্মাণের ফলে এই নদীর নাব্য কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। দেখা দিয়েছে তীব্র জলাভাব। পানি সমস্যায় পড়ছে বালুরঘাটের সাধারণ মানুষ। এদিন সেই প্রসঙ্গ তুলেই মমতা ক্ষোভ উগড়ে দেন। তিনি বলেন, ‘এর আগে ২০১৫ সালেও আমরা এই বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে একবার চিঠি লিখেছিলাম কিন্তু কোনো কাজ হয়নি’। নদী সমস্যার জট ছাড়াতে গত বুধবার বিকালেই দিল্লিতে এসে পৌঁছান মমতা। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩.৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সচিবালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মমতা। দুজনের মধ্যে বৈঠক চলে প্রায় আধা ঘণ্টার মতো। বৈঠক শেষেই তিনি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন। আত্রাই সমস্যার পাশাপাশি চুর্নী ও ফারাক্কা ইস্যুটি নিয়েও মোদির সঙ্গে আলোচনা করেন মমতা। চুর্নী নদী দূষণের জন্য সরাসরি বাংলাদেশের দিকে অভিযোগ তুলে মমতা জানান, ‘বাংলাদেশে মাথাভাঙা নামে একটি নদী আছে। ওই নদীটাই যখন আমাদের নদীয়া জেলায় আসে সেটাকে চুর্নী নদী বলে। ওই নদীতে এত পরিমাণ দূষিত পদার্থ ফেলা হচ্ছে যে নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো সব দূষিত হয়ে যাচ্ছে। আমরা এই বিষয়টিকে সমাধানের কথা বলেছি’। বাংলাদেশ সরকারের তরফে কর বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলা থেকে বাংলাদেশে আম রফতানি করা যাচ্ছে না বলেও বৈঠকে মোদির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মমতা। মমতা বলেন, ‘মালদা, মুর্শিবাবাদে অনেক আমের ফলন হয় কিন্তু বাংলাদেশ সরকার রফতানি কর দ্বিগুণ করে দিয়েছে।  ইলিশ মাছ তো আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এবার এখানকার আম যেটা ওদেশে রফতানি করা হতো তার ওপর কর দ্বিগুণ করে দেওয়ায় উৎপাদনকারীরা আর আম রফতানি করতে পারছে না’। এই বিষয়টিও আমরা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। এদিন ফারাক্কা প্রসঙ্গটিও তোলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে যখন আমাদের গঙ্গা চুক্তি হয়েছিল তখন বলা হয়েছিল যে কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের রুপি দেবে এবং গঙ্গা ভাঙন যাতে না হয় সেটাও দেখা হবে। কিন্তু সেই রুপি এখনো পাওয়া যায়নি, গঙ্গাকে পরিষ্কারও করা হয়নি। তার ফলে কত গ্রাম চলে গেছে মাটির তলায়। কৃষকদের প্রায় এক হাজার কোটি রুপির ফসল, সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে পানি না পাওয়ার ফলে কখনো কেন্দ্রীয় সরকারের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এনটিপিসি বন্ধ হয়ে যায়, কখনো পশ্চিমবঙ্গেও মানুষ পানি পায় না আবার কখনো বিহারে বন্যা হয়। এটা নিয়ে একটি মাস্টারপ্লান তৈরির বিষয়ে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি’। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে মমতা এদিন যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন কয়েকদিন আগেই তার প্রতিটি বিষয়েই সম্প্রতি সরব হয়েছিলেন মমতা। গত মাসের গোড়ার দিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে এলে তার সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা। সেই বৈঠকে তিস্তার পানির বদলে তোর্সাসহ বিকল্প প্রস্তাব দেন মমতা। এরপর দিল্লি থেকে রাজ্যে ফিরে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় সভা করেন মমতা। এবং প্রতিটি সভার থেকেই তিস্তা, আত্রাই, চুর্নী, আম নিয়ে রাজ্যের বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছিলেন মমতা। মমতা এমনও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শিগগির এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে জানানো হবে। সেই মতো এদিন নদী সমস্যাসহ একাধিক সমস্যার কথা তুলে ধরেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

পাশাপাশি রাজ্যের দাবি-দাওয়া নিয়েও আলোচনা হয় মোদি-মমতার। তবে মোদি-মমতার একান্ত বৈঠকে তিস্তা প্রসঙ্গটি ছিল কি না তা জানা যায়নি। কারণ তিস্তা নিয়ে এদিন সাংবাদিকদের সামনে কোনো মন্তব্যই করেননি মমতা। আজ শুক্রবার বিকালে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করবেন মমতা। বিরোধীদের তরফে সর্বসম্মতভাবে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ঠিক করতেই এই বৈঠকে বসবেন সোনিয়া-মমতা। দিল্লিতে আরও কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন মমতা।

সর্বশেষ খবর