শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে বিচারপতি অপসারণ কীভাবে

------- প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী-সংক্রান্ত আপিলের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘সংসদে কোনো রাজনৈতিক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা অবস্থায় কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলে ষোড়শ সংশোধনী অনুসারে তাকে অপসারণ করা হবে কীভাবে।’ শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদের মতামত উপস্থাপনের সময় প্রধান বিচারপতি গতকাল এ প্রশ্ন তোলেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ মামলার শুনানি গ্রহণ করে। শুনানি রবিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এখন না হয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। কিন্তু কখনো যদি তা না থাকে? তাহলে কী হবে? কীভাবে বিচারপতিদের অপসারণ করা হবে? তখন তো একটা শূন্যতা সৃষ্টি হবে।’ জবাবে আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমার লিখিত সাবমিশনে এটা আছে। আমি নিজেও এ প্রশ্ন রাখছি।’ তিনি বলেন, ‘সিভিল সার্ভিসের ব্যক্তিদের কারা অপসারণ করেন? পুলিশ সদস্যদের কারা করেন? সেক্রেটারিদের কারা করেন? আপনি (প্রধান বিচারপতি)? সংসদ? কেউ না। তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অপসারণ করে। সেনাবাহিনীতেও ডিসিপ্লিনারি আছে। তাহলে আপনাদেরটা (বিচারপতি) কেন পার্লামেন্টে যাবে? সচিব, পুলিশ তো সংসদে যাচ্ছে না, তাহলে এটি কেন?’ তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল না থাকলে এখানে অরাজকতা হবে। আর এটি (ষোড়শ সংশোধনী) যদি হয়ে যায়, তাহলে হাই কোর্টের জজদের তো আপনি (প্রধান বিচারপতি) কিছু বলতে পারবেন না। তারা যদি বেলা ১১টায় আসেন, তখনো কিছুই বলতে পারবেন না। অথবা খাসকামরায় কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যখন কথা বলবেন, তখন সংসদ কী দেখবে?’ রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের জজ নিয়ে সংসদে আলোচনার সুযোগ নেই। কিন্তু তবু এমপিরা আলোচনা করেছেন। স্পিকার টুঁশব্দ করেননি। বলছি না, আপনাদেরও (বিচারপতিরা) ত্রুটি নেই। দোষে-গুণে মানুষ।’ রোকন উদ্দিন বলেন, ‘তোরে জজ বানাইছে কেডা— পত্রিকায় এ রকম দেখেছি। যারা সংসদে দাঁড়িয়ে এ রকম কথা বলেন, তাদের হাতে এটা (বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা) ছেড়ে দেবেন? তখন জুডিশিয়ারির স্বাধীনতা থাকবে?’ তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে ক্লাসে হচ্ছেন আপনারা। শিক্ষা-দীক্ষায় আর সম্মানে আপনারা ক্লাসে। আপনাদের সম্মান থাকবে না? বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকবে না?’ শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে লিখিত বক্তব্য দেন বিচারপতি টি এইচ খান। তার পক্ষে তার ছেলে অ্যাডভোকেট আফজাল এইচ খান বক্তব্য তুলে ধরেন। বিচারপতি টি এইচ খান বলেন, ‘১৬তম সংশোধনী বাতিল করাই উচিত।’ পরে আফজাল এইচ খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাই কোর্টের রায় বহাল রাখার পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন বিচারপতি টি এইচ খান। এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি যে, ১৬তম সংশোধনী যে সংসদ পাস করেছে, সেই সংসদ যে নির্বাচনের মাধ্যমে এসেছে, সেই নির্বাচনটাই বৈধ নয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে আরও শক্তিশালী করা উচিত।’ অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, ‘কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে জুডিশিয়ারির তদন্ত হবে এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে।’ ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় আপিল শুনানিতে আদালতকে আইনি সহায়তার জন্য ১২ আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেয় আপিল বিভাগ।

সর্বশেষ খবর