শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

বিশ্বমানে গড়তে চাই এফবিসিসিআইকে

—শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন

রুহুল আমিন রাসেল

বিশ্বমানে গড়তে চাই এফবিসিসিআইকে

ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন- এফবিসিসিআইকে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে চান সংগঠনটির নবনির্বাচিত সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি সারা দেশের বাণিজ্য সংগঠনগুলোতেও শৃঙ্খলা আনতে চান। গত বুধবার রাজধানীর মতিঝিল ফেডারেশন ভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মনোভাব ব্যক্ত করেন। সারা দেশের ব্যবসায়ীদের মিনি-পার্লামেন্টখ্যাত বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআইতে ২০১৭-১৯ মেয়াদের সভাপতি হিসেবে গত ২১ মে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। সাক্ষাৎকারে তিনি এফবিসিসিআই নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথাও তুলে ধরেন। অর্থনীতির মূলচালিকা শক্তি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অবস্থান সুদৃঢ় করতে সরকারের আর্থিক নীতি প্রণয়নের জন্য গবেষণা ভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করার কথাও বলেছেন এফবিসিসিআইর নতুন সভাপতি। বিদায়ী কমিটির সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, এফবিসিসিআইর যে আয় আছে তা দিয়ে কোনো গবেষণা সম্ভব না। সংগঠনটিতে এখন আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। এখন মাসে খরচ আছে ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু আয় হয় ৩০ লাখ টাকা। আমি এই সংকট উত্তরণের চেষ্টা করব। হাটখোলার নতুন ভবনকে ব্যবহার করব। পাশাপাশি উত্তরা বা পূর্বাচলে একটি বড় জায়গা প্রধানমন্ত্রী যদি দেন, তাহলে সেখানে একটি কনভেনশন সেন্টার করার ইচ্ছা আছে। যেখানে মেলা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার কাজ নিশ্চিতভাবে করা যাবে। এফবিসিসিআই নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রাণের সংগঠন এফবিসিসিআই নিয়ে আমারও কিছু স্বপ্ন আছে। সেই স্বপ্ন হলো— সরকারের আর্থিক নীতি প্রণয়নের জন্য গবেষণা ভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করা। এফবিসিসিআই গবেষণা সেলের সক্ষমতা বাড়াব। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে সহজে যাতে গাইড লাইন পাওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা করতে চাই। তাছাড়া নারী উদ্যোক্তা বা ছোট উদ্যোক্তাদের ন্যায়সঙ্গত বিষয়গুলোতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে এফবিসিসিআই। তার মতে, বিগত ২০০৮ সালে যে বিশ্বমন্দা হয়, তাতে জার্মানির কোনো আর্থিক ক্ষতি না হওয়ার পেছনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিশাল ভূমিকা ছিল। কারণ জার্মানির ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প অনেক শক্তিশালী। এফবিসিসিআই ও বাণিজ্য সংগঠনগুলোতে সরকারের নেওয়া সংস্কার উদ্যোগ প্রসঙ্গে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, এটি একটি চলমান বিষয়। সংস্কারের জন্য সরকার একটি কমিটি করেছে। সে কমিটি সংস্কারের একটি প্রস্তাব দিয়েছে। সেই প্রস্তাবে মনোনীত পরিচালক রাখা হয়েছে, যার নাম রিজার্ভ সিট। এই রিজার্ভ সিটের বিপরীতে যদি একাধিক প্রার্থী ইচ্ছা পোষণ করেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের বোর্ডের মধ্যে নির্বাচন হবে। আমি এফবিসিসিআইর সাধারণ পরিষদের একজন সদস্য হিসেবে মনে করি, এই নির্বাচন সরাসরি সাধারণ সদস্যদের ভোটে হওয়া উচিত। কিন্তু তার আগে কিছু কাজ করতে হবে। আমাদের কিছু কিছু সংগঠন বা সমিতি আছে, যেখানে নির্বাচন হয় না। এগুলোকে নিয়মের মধ্যে আসতে হবে। অডিট হতে হবে। বাণিজ্য সংগঠন আইনে যে নিয়ম ও শর্তাবলি আছে, তা যথাযথ নিয়মে পালন করতে হবে। তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক সমিতি আছে, যারা কোনো নিয়ম-নীতির মধ্যে নেই। তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়িয়ে বাণিজ্য সংগঠন আইনের শর্ত পালনে উৎসাহিত করা হবে। যে সব সংগঠন নিয়ম-নীতির মধ্যে আসতে পারবে না, তাদের সংস্কারের মাধ্যমে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ সাবেক এই সভাপতি বলেন, বিশ্বে ৪৩তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। আগামী ২০৩০ সালে বিশ্বের ৩০তম অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। সে জন্য আমাদের যে প্রস্তুতি দরকার, এফবিসিসিআইকে যে পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া দরকার, সেই লক্ষ্যে আমি কাজ করতে চাই। তিনি বলেন, দেশের অব্যাহত প্রবৃদ্ধিতে ছন্দপতন হলে চলবে না। যে কোনো পরিস্থিতিতে যাতে বাংলাদেশ স্থিতিশীল থাকে, সেই জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন আরও বলেন, বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এমডিজি অর্জন করে এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা— এসডিজি অর্জনের পথে এগোচ্ছে। সে জন্য আমাদের পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের দিকে যেতে হচ্ছে। সুবজ শিল্পায়নে আরও নজর দিতে হবে। এ জন্য আমাদের চিন্তারও পরিবর্তন হচ্ছে। যে সব শিল্প আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সেজন্যও আমি ব্যবসায়ী সমাজকে উৎসাহিত করতে চাই।

সর্বশেষ খবর