শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

আমার কাছে বন্দুক থাকলে গুলি করতাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

আমার কাছে বন্দুক থাকলে গুলি করতাম

‘শিবির ক্যাডার নাছিরের নেতৃত্বে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে উল্লাস করে মিছিল করেছে ক্যাডাররা। দিনে-দুপুরে খুন করে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে থানার সামনে দিয়ে মিছিল করে যাচ্ছে। আমার কাছে অবাক লাগে, আমাদের পুলিশ তাদের কোনো ধরনের আক্রমণ করেনি। পুলিশ শুধু চেয়ে চেয়ে দেখল। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমার কাছে বন্দুক থাকলে আমি গুলি করতাম। গতকাল চট্টগ্রামের আদালতে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি ২৫ বছর আগে নিজের চোখে দেখা চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে জামায়াত-শিবিরের নৃশংসতার বর্ণনা দিতে গিয়ে এভাবে বললেন তিনি। ১৯৯২ সালের ৮ মে ঘটনার সময় তিনি ছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ফেরদৌস আরার আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় তখন আসামির কাঠগড়ায় শিবির ক্যাডার নাছির উদ্দিন ওরফে শিবির নাছির উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মোশাররফ তার গাড়ি আক্রান্ত হওয়া এবং নিজের চোখের সামনে রাজনৈতিক সহকর্মী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হারুন বশর হত্যা এবং নিজের বেঁচে যাওয়ার বর্ণনা দেন আদালতে। মোশাররফের পর চাঞ্চল্যকর মামলাটির বাদী ও তার গাড়িচালক মো. ইদ্রিস মিয়া ১৫ বছর পর আদালতে এই প্রথম সাক্ষ্য দেন। একই সঙ্গে এই দুজনকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জেরাও করেন।  এ সময় সরকার পক্ষে মামলার কার্যক্রমে অংশ নেন চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী ও বিভাগীয় বিশেষ পিপি মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীসহ সরকারি আইনজীবীরা। বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন সাবেক জেলা পিপি ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবুল হাশেম ও ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশত আইনজীবী। বিভাগীয় বিশেষ পিপি মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মোশাররফ ও বাদীসহ এ পর্যন্ত মামলার সাতজন সাক্ষীর সাক্ষ্য সম্পন্ন হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণের পর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে বলে জানান তিনি। আদালতে জবানবন্দিতে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ এমপি আরও বলেন, ঘটনার দিন তিনি ফটিকছড়ি উপজেলার আজাদী বাজারে উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন। সম্মেলনে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে মোশাররফরা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই আওয়ামী লীগ কর্মীর জানাজা পড়ার জন্য ফটিকছড়ি সদরে কলেজ মাঠে যান। জানাজা পড়ার এক পর্যায়ে গোলাগুলি শুরু হয়। মোশাররফ শুনতে পান তাদের কর্মী জমির উদ্দিনকে মেরে ফেলেছে। তারা দ্রুত ফটিকছড়ির থানার ভিতরে অবস্থান নেন। তিনি বলেন, থানায় বসা অবস্থায় দেখা যায়, শিবির ক্যাডার নাছিরের নেতৃত্বে আনুমানিক ১০০-১৫০ সশস্ত্র ব্যক্তি বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল করছে। এ সময় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিবির ক্যাডার নাছিরও উল্লাস করেন।  সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালের ৮ মে ফটিকছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে পণ্ড করে দেয় জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এতে সম্মেলনস্থলে জমিরউদ্দিন নামে একজন নিহত হয়। সম্মেলনের প্রধান অতিথি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের গাড়িতে হামলা চালিয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হারুন বশরকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। মোশাররফের বুকে রাইফেল ঠেকানোর পরও তিনি কোনোমতে আত্মরক্ষা করেন। এ ঘটনায় মোশাররফের গাড়িচালক ইদ্রিস বাদী হয়ে ফটিকছড়ি থানায় মামলা করেন। ১৯৯৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দণ্ডবিধির ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ৩৪২, ৩০২, ৩২৪, ৩২৩ ও ৪২৭ ধারায় মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এতে ৩১ জনকে আসামি করা হয়েছিল। আটজনের মৃত্যুর পর এখন আসামি আছেন ২৩ জন। এর মধ্যে একমাত্র শিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডার নাছির উদ্দিন ওরফে শিবির নাছির জেলে আছেন। ২০০২ সালের ২৫ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর গত ১৫ বছরে সাতজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর