শনিবার, ২৭ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ‘গ্রিক দেবীর মূর্তি’ অপসারণ করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, এটা আপসকামিতার রাজনীতি। আওয়ামী লীগ যে মৌলবাদীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, তার অংশ হিসেবে এটি হলো। শুধু এটা নয়, পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন এবং তাদের অন্যান্য দাবির প্রতি আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থন তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। তারা নিজেরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের কথা বলছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কোনো না কোনো কারণে তারা একেবারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী যেই চিন্তাভাবনা, কার্যকলাপগুলো রয়েছে, সেটির সঙ্গে একটা আপস করে যাচ্ছে। ড. শাহদীন মালিক বলেন, এটি দুটি ধারণার বহিঃপ্রকাশ। প্রথমত, সরকারের সুপ্রিম কোর্টকে নিয়ন্ত্রণ করার ধারাবাহিক চেষ্টার একটি বহিঃপ্রকাশ। দ্বিতীয়ত, সরকার তথাকথিত ধর্মীয় ভোটের কাছে ক্রমাগত নতিস্বীকার করার আরেকটা বহিঃপ্রকাশ। সুপ্রিম কোর্ট নিয়ন্ত্রণ আর ধর্মীয় জুজুর ভয় এই দুটোই আমাদের আইনের শাসন, গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ কোনো কিছুর জন্যই শুভ নয়। সবকিছুর জন্যই অশুভ ও অশনিসংকেত। দেশবাসী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া প্রকাশ করেছে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত সব ‘মূর্তি’ অপসারণেরও দাবি জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। গতকাল জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেট এলাকায় পৃথক শুকরিয়া মিছিল ও সমাবেশ থেকে এসব কথা বলা হয়। হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর শাখা আয়োজিত এক শুকরিয়া মিছিল-পূর্ব সমাবেশে সংগঠনের মহানগর সভাপতি আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, ‘গ্রিক মূর্তি সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে অপসারণ করা হয়েছে। এ জন্য আল্লাহপাকের শুকরিয়া জ্ঞাপন করি। যত মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে, সব অপসারণ করা হোক। এ সময় হেফাজতের ঢাকা মহানগর নেতা মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, মুজিবুর রহমান হামিদী, ওলিউল্লাহ আরমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রমজানের আগেই গ্রিক দেবীর মূর্তির অপসারণ করায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম পীর চরমোনাই সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, গণদাবির কাছে অশুভ শক্তির পরাজয় হয়েছে। পীর চরমোনাই ভবিষ্যতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমতকে উপেক্ষা করে ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগর আয়োজিত সমাবেশে দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা এ টি এম হেমায়েত উদ্দিন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে অপসারিত ‘গ্রিক দেবীর মূর্তি’ অন্যত্র স্থাপনের চেষ্টা করা হলে প্রতিহত করা হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত সব মূর্তি অপসারণ করতে হবে।

ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ এক বিবৃতিতে বলেছেন, জাতিকে অভিশাপমুক্ত ও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে মূর্তি অপসারণ করায় দেশবাসী প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা-সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং ইনসাফের পক্ষের। মূর্তি অপসারণ করায় প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবীবুর রহমান, অভিভাবক পরিষদের চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী ও মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে পৌত্তলিকতার যে ষড়যন্ত্র হচ্ছিল উলামায়ে কেরাম, ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ মুসলমানদের প্রতিবাদের মুখে তার পরাজয় হয়েছে। ওলামা লীগ সাধারণ সম্পাদক কাজী মাওলানা আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী এক বিবৃতিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এটা পুনঃ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। সুপ্রিম কোর্টের নকশার মধ্যে গ্রিক মূর্তির কোনো স্থান নেই। সুতরাং সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের ভিতরে পুনরায় গ্রিক মূর্তি স্থাপন দেশবাসী কখনো মেনে নেবে না। এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ‘মূর্তি’ অপসারণ করায় বামদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের প্রতিবাদে গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। এতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি জি এম রুহুল আমিন। এ সময় আজ সারা দেশে মূর্তি ইস্যুতে বামপন্থীদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। মূর্তি অপসারণ করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মিছিল করেছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর