শিরোনাম
শনিবার, ২৭ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
রমজানে নির্বাচনী রাজনীতি

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের এলাকায় ইফতার ব্যস্ততা

মাহমুদ আজহার

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী। নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩১ মে নিজ সংসদীয় এলাকায় নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের উদ্দেশে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছেন। পঞ্চগড়-২ আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদও নিজ এলাকায় ইফতার মাহফিলের কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম। তিনিও জুনের প্রথম সপ্তাহে নিজ এলাকায় ইফতার পার্টি দিয়েছেন। একই অবস্থা নওগাঁ-৪ (মান্দা) বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল মতিনেরও। ৩০ মে তিনিও নিজ এলাকায় ইফতার পার্টি করবেন। শুধু এই চারজন নেতাই নন, দলের সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ একঝাঁক তরুণ নেতা আগামী সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে লড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে রমজান মাসে নিজ নিজ এলাকায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছেন। চেষ্টা করছেন সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার। উদ্দেশ্য আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করা, ঘর গোছানো। অবশ্য ৩০ মে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষেও অর্ধমাসজুড়েই রয়েছে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল। এদিকে ঢাকায় দলের পাশাপাশি ২০-দলীয় জোটের ইফতার পার্টিতে অংশ নেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার ২০ রমজান পর্যন্ত ইফতার পার্টির কর্মসূচি এরইমধ্যে নির্ধারিত হয়েছে। সেখানে জোট ছাড়াও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথাবার্তা হবে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের। তবে রমজানের শেষদিকে পবিত্র ওমরাহ পালনে সৌদি আরব যাবেন কি না তা এখনো চূড়ান্ত নয়। বিএনপির সিনিয়র নেতারা ঢাকার পাশাপাশি নিজ সংসদীয় এলাকাতেও ইফতার পার্টি করবেন বলে জানা গেছে। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, পবিত্র রমজান মাসে রাজনীতি ঘরে আবদ্ধ থাকলেও ইফতারের মাধ্যমে নেতা-কর্মীরা আরও কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ পাবেন। ঘরোয়া রাজনীতিও হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক মামলা-হামলায় জর্জরিত যেসব নেতা-কর্মী গ্রেফতারের ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন ইফতারকে কেন্দ্র করে তারাও প্রকাশ্যে আসার সুযোগ পাবেন। জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পাবেন। এর মাধ্যমে দল আরও চাঙ্গা ও গতিশীল হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।   সূত্রমতে, রমজানে নতুন করে বিএনপির কোনো সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা নেই। এরইমধ্যে অর্ধশত জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বশেষ গতকালও নতুন করে ৫টি জেলার কমিটি অনুমোদন করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলনকে সভাপতি ও নূরুল ইসলাম নূরুলকে সাধারণ সম্পাদক করে সুনামগঞ্জ বিএনপি, মো. সাইফুল ইসলাম সভাপতি ও রইচ আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে রংপুর জেলা বিএনপি, মো. মোজাফফর হোসেন সভাপতি ও সহিদুল ইসলাম মিজুকে সাধারণ সম্পাদক করে রংপুর মহানগর বিএনপি, কৃষিবিদ শামসুল আলম তোফা সভাপতি ও অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবালকে সাধারণ সম্পাদক করে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি এবং এম নাসের রহমান সভাপতি ও মিজানুর রহমান মিজানকে সাধারণ সম্পাদক করে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিএনপির সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।  জানা যায়, এবারও পয়লা রমজানে এতিম ও আলেম-ওলামাদের সঙ্গে ইফতারের মধ্য দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের ইফতারের কর্মসূচি শুরু হবে। রাজধানীর লেডিস ক্লাবে এই ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ২৯ মে কূটনীতিকদের সঙ্গে রাজধানীর গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করবেন খালেদা জিয়া। ৩ জুন বসুন্ধরায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটির নবরাত্রি হলে বিএনপি নেতৃবৃন্দ পরদিন একইস্থানে ৪ জুন পেশাজীবী, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী এবং ৫ জুন একই স্থানে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছেন বেগম জিয়া। সূত্রমতে, ৬ জুন লেডিস ক্লাবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ১০ জুন মতিঝিলের হোটেল পূর্বাণীতে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ১২ জুন রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি, ১৩ জুন গুলশানের ইমান্যুয়েলস ব্যাঙ্কুয়েট হলে লেবার পার্টি এবং ১৪ জুন ইন্টারন্যাশনাল কনভেশন সিটি, বসুন্ধরায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন বেগম খালেদা জিয়া। এদিকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীকে ঘিরে আজ শনিবার থেকে আগামী ১০ জুন পর্যন্ত ১৫ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি নেতারা রমজান মাসজুড়েই আলোচনা সভা ও ইফতার পার্টির উদ্যোগ নিয়েছেন। ৩০ মে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের প্রতি থানায় দুস্থদের মধ্যে কাপড় ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ, বিভাগীয় শহরগুলোতে জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে বইমেলা এবং ছাত্রদলের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবে দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী করা হবে। এ ছাড়া জেলা ও মহানগরীসহ অন্যান্য ইউনিটে সুবিধা অনুযায়ী আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও দুস্থদের মাঝে কাপড় ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রমজান মাসে সবাই রাজনীতিটাকে একটু দূরে রেখে ধর্ম-কর্ম করতে চান। তবে রাজনীতির তো আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো ছুটি হয়ে যায় না। এ মাসে ইফতার পার্টি ও বিভিন্ন সেমিনারে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে। আর এর মধ্য দিয়েই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চলবে। এ ছাড়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষেও কর্মসূচি রয়েছে বিএনপির।’

সর্বশেষ খবর