সোমবার, ২৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফের হেফাজতের হুমকি স্বস্তি প্রতিবাদীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফের হেফাজতের হুমকি স্বস্তি প্রতিবাদীদের

ভাস্কর্য সরিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপন করায় ফের হুমকি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটি বলেছে, থেমিস মূর্তি সুপ্রিম কোর্টের সামনে থাকবে, নাকি পিছনে থাকবে, এটা কোনো ইস্যু ছিল না। ইস্যু ছিল, থেমিস থাকবে কি থাকবে না। এখানে মধ্যপন্থার কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে ভাস্কর্যটি এনেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপনে কিছুটা স্বস্তিতে প্রতিবাদকারীরা। এরই মধ্যে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ থেকে গ্রেফতার চারজনের জামিনও হয়েছে।

ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে বসানো ভাস্কর্যটি শনিবার মধ্য রাতে সুপ্রিম কোর্টের বর্ধিত ভবন—এনেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপন করা হয়। ভাস্কর মৃণাল হক বলেন, ‘ভাস্কর্যটি আগে যেখানে ছিল ভালো ছিল, হাজার হাজার লোক দেখত। সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের পেছনে এনেক্স ভবনের এই জায়গায় বাইরের লোকজন তেমন আসে না। এখানে বসানো না বসানো একই কথা। এখানে কেউ দেখবে না, জানবে না, শুধু কোর্টের লোকজনই দেখবে।’

ভাস্কর্য পুনঃস্থাপন করায় হতবাক ও বাকরুদ্ধ হয়েছেন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমেদ শফী। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এ বিবৃতিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে এনেক্স ভবন থেকে ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানানো হয়। আল্লামা শফী বলেন, ‘দেবী থেমিসের ভাস্কর্য অপসারিত হয়েছে জেনে শুকরিয়া জ্ঞাপন করেছিলাম। কিন্তু মাত্র দুই দিনের মাথায় দেশবাসীকে হতাশ করে এটি পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। এমন সংবাদে আমি বিস্মিত, হতবাক এবং বাকরুদ্ধ। থেমিস মূর্তি সুপ্রিম কোর্টের সামনে থাকবে, নাকি পেছনে থাকবে, এটা কোনো ইস্যু কখনো ছিল না। ইস্যু ছিল, থেমিস থাকবে কি থাকবে না। এখানে মধ্যপন্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। থেমিস আধুনিক রাষ্ট্র ধারণায় বিচার বিভাগের যে অবস্থান, তারও পরিপন্থী। কারণ থেমিস গ্রিক সংস্কৃতির ঐশ্বরিক আইনের (ডিভাইন ল’) প্রতীক। যে রাষ্ট্র নিজেকে আলাদাভাবে স্যেকুলার বলে পরিচয় দিয়ে নিজের কৌলিন্য জারি করে, সে কীভাবে গ্রিক ঐশ্বরিক আইনের প্রতীককে নিজের বলতে পারে?’ তিনি বলেন, ‘থেমিস অপসারণে যখন আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিলাম। রমজানের আগেই কোনো সংঘাত ছাড়াই থেমিস অপসারণে ভেবেছিলাম সবার শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে, ঠিক তখন মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র মাস রমজানের প্রথম রাতে থেমিসকে পুনঃস্থাপন করে জাতির ধর্মীয় বিশ্বাস ও আবেগের সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে। থেমিস পুনঃস্থাপনের প্রতিবাদ জানাতে গভীর রাতেও তৌহিদি ছাত্র-জনতা প্রেস ক্লাবে সমবেত হয়েছেন। প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশ হামলা করেছে। গ্রেফতার হয়েছেন অনেকে। এই সংবাদে আমি মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ।’ হেফাজত আমির বলেন, ‘আজকের মধ্যে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। কার উসকানিতে হামলা হয়েছে, তার তদন্ত করে দোষীদের বিচার চাই। সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানাই, নাগরিকদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আমাদের জাতীয় চেতনা ও ঐতিহ্য নিয়ে তামাশা বন্ধ করে গ্রিকদের দেবী থেমিসকে চিরতরে দেশ থেকে অপসারণ করুন। ইসলাম বিরোধী নানা কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দিয়ে দেশকে আল্লাহর ভয়াবহ আজাব ও গজবের দিকে দয়া করে ঠেলে দেবেন না।’ এদিকে ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদ-বিক্ষোভ থেকে গ্রেফতার চারজনকে জামিন দিয়েছে আদালত। পুলিশের করা হত্যাচেষ্টা ও সরকারি কাজে বাধার মামলায় শুনানি শেষে মহানগর হাকিম এ কে এম মঈনুদ্দীন সিদ্দিকী গতকাল এ আদেশ দেন। এ চারজন হলেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি মোর্শেদ হালিম, ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী জয় এবং উদীচীর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফ নূর। জামিন হওয়ায় যেকোনো সময় তারা মুক্তি পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন তাদের অন্যতম আইনজীবী জীবনানন্দ জয়ন্ত।

সর্বশেষ খবর