সোমবার, ২৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

টার্গেট দুই কোটি সদস্য

আওয়ামী লীগে ঠাঁই হবে না স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদের পর আওয়ামী লীগের সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান জোরদার করা হচ্ছে। দীর্ঘ সাত বছর বিরতির পর এবার নতুন সদস্য সংগ্রহে টার্গেট ধরা হয়েছে দুই কোটি। প্রথমবারের মতো যারা ভোটার হয়েছেন ও হবেন এবং নারী ভোটারদের সদস্য করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগে। এর মধ্যে ১/১১ সরকারের সময় কারাবন্দি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য ২৫ লাখ গণস্বাক্ষরকে স্মরণীয় করে রাখতে রাজধানীতেই ২৫ লাখ নতুন সদস্য টার্গেট করা হয়েছে। নতুন সদস্য পদ অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধী এবং জামায়াত পরিবারের সন্তানরা যেন ঢুকে না পড়ে সে জন্য জেলা-মহানগর, উপজেলা, থানা ও ইউনিয়ন নেতাদের সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

দলীয় সূত্রমতে, দুই কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহের টার্গেট নিয়ে বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি সদস্য সংগ্রহ শুরু করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু বছর না ঘুরতেই সদস্য সংগ্রহ ও সদস্যপদ নবায়ন কর্মসূচি মুখ থুবড়ে পড়ে। সারা দেশের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার কোথাও কোথাও কেবল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সদস্যপদ নবায়ন করা হয়। আবার কোনো কোনো জেলায় শুরুই হয়নি। কর্মসূচি বেশি দূর না এগোনোর জন্য কেন্দ্রীয় নেতা, বিশেষ করে সাংগঠনিক সম্পাদকদের উদ্যোগ না থাকা এবং দুর্বল তদারকিকে দায়ী করেন তৃণমূল নেতারা। দীর্ঘ সাত বছর বিরতি দিয়ে গত ২০ মে গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় নতুন সদস্য সংগ্রহ ও পুরনো সদস্যের নবায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সদস্য পদ নবায়ন করেন এবং দুজন নতুন সদস্যপদ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে গত বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে জেলা নেতাদের হাতে নতুন সদস্য সংগ্রহের ফরম বুঝিয়ে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে, নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিয়ে প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর দলের সদস্যপদ নবায়ন করতে হয়। আর নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানও সময় সময় করা হয়। নতুন সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে দলের গঠনতন্ত্রের ৫ (১) ধারার (গ) তে বলা হয়েছে, অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নহেন। একই ধারার (২) তে বলা হয়েছে, সংগঠনে দুই প্রকার সদস্যপদ থাকিবে। যথা প্রাথমিক (অস্থায়ী সদস্য) ও পূর্ণাঙ্গ সদস্য। দলের সদস্যপদ প্রার্থীকে দলের প্রাথমিক বা শাখা কমিটির নিকট আবেদন করিতে হইবে এবং ত্রিবার্ষিক চাঁদা বাবদ ২০ টাকা দরখাস্তের সহিত প্রদান করিতে হইবে। প্রাথমিক বা শাখা কমিটির সদস্যদের সাধারণ সভায় প্রার্থীর সদস্যপদ অনুমোদিত হইলে তিনি অনুমোদনের তারিখ হইতে এক বত্সর পর্যন্ত প্রাথমিক সদস্য বলিয়া গণ্য হইবেন। প্রাথমিক সদস্যের মেয়াদ পূর্ণ হইলে সংশ্লিষ্ট কমিটি প্রাথমিক সদস্যকে পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ প্রদানের জন্য দলীয় জেলা কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট সুপারিশ করিতে পারিবেন। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকিলে মেয়াদান্তে আপনাআপনি পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ লাভ করিবেন। পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ না হইলে কেহ সংগঠনের কোনো স্তরের কর্মকর্তা নির্বাচিত হইতে পারিবেন না। দলীয় সূত্রমতে, দুই কোটি সদস্যের মধ্যে রাজধানীতেই ২৫ লাখ টার্গেট করা হয়েছে। এ ছাড়া ১১ সিটির মধ্যে রাজধানী বাদে অন্য ৯টিতে ১৫ লাখ সদস্য সংগ্রহের টার্গেট ধরা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক নতুন ভোটার করার আশা ক্ষমতাসীন দলটির। ৩১৫টি পৌরসভায় ১৫ লাখ এবং ৭৮টি সাংগঠনিক জেলায় এক কোটির ওপরে সদস্য সংগ্রহ করা হবে। জেলার মধ্যে উপজেলা-থানা ও ইউনিয়ন, ওয়ার্ড যুক্ত থাকবে। আগামী জানুয়ারির মধ্যেই এই টার্গেট পূরণ করা হবে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ফার্স্ট টাইম ভোটাররাই হবে ফার্স্ট টার্গেট। তাদের আওয়ামী লীগের সদস্য একবার করতে পারলে মনের মধ্যে দলের জন্য একটা তাগিদ তৈরি হয়ে যাবে যে, আমি এই দলের সদস্য। তিনি বলেন, আমাদের সদস্য করার ক্ষেত্রে নারীরা হবে দ্বিতীয় টার্গেট। আমাদের দেশের প্রায় অর্ধেক ভোটারই নারী। তাদের গুরুত্ব অনেক বেশি। নতুন ভোটার এবং নারী ভোটারের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লার সম্মানিত ব্যক্তিদেরও আওয়ামী লীগের সদস্য করার তাগিদ দিয়ে জেলা-মহানগর ও উপজেলা নেতাদের উদ্দেশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, পাড়া-মহল্লায় অনেক শিক্ষিত ভদ্রলোক আছেন, যাদের কথা অনেকে মূল্যায়ন করেন, আপনারা তাদের দলের সদস্য করেন। মসজিদের ইমাম, স্কুলের শিক্ষকদের সদস্য করেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের ভোটার বাড়াতেই নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এবার আমরা দুই কোটির মতো নতুন সদস্য সংগ্রহ করব বলে আশা করছি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন রমজানে আমরা থানা ও ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ শেষ করব। ঈদের পর পুরোদমে সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান পরিচালনা করব। আমরা রাজধানীতে ২৫ লাখ সদস্য সংগ্রহের টার্গেট করেছি। কারণ ১/১১ সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে কারাবন্দি করলে তার মুক্তির জন্য রাজধানীতে ২৫ লাখ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। সেই ২৫ লাখ গণস্বাক্ষরকে স্মরণীয় করে রাখতেই এবার নতুন ২৫ লাখ নতুন সদস্য সংগ্রহ করব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর