সোমবার, ২৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যাম্পাস ছেড়েছেন শিক্ষার্থীরা, ৪২ ছাত্রের জামিন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল ক্যাম্পাসের পরিস্থিতিকে শান্ত করতে অনির্দিষ্টকালের জন্য  বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা বহাল রেখেছে প্রশাসন। হল খালি করার নির্দেশে গতকাল সকাল থেকেই ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে শুরু করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এদিকে গতকাল গ্রেফতার ৪২ শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় জরুরি সিন্ডিকেট সভায় সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। শাখা ছাত্রলীগ এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাত্ করলেও সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি প্রশাসন। তবে কিছুদিনের মধ্যে আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে বলে ছাত্রলীগকে আশ্বস্ত করেছেন উপাচার্য। ২৬ মে ভোর ৫টায় জাবি-সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলায় কিছুদিন পর পর এ রাস্তায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনা ঘটছে। ওই দিন বেলা ২টায় পাঁচ দফা দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। কিন্তু প্রশাসনের আশ্বাসে এবং শাখা ছাত্রলীগের বাধায় ১০ মিনিটের মধ্যে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি হলো— নিহতদের লাশ জানাজার জন্য ক্যাম্পাসে কেন ঢুকতে দেওয়া হয়নি প্রশাসনকে এর জবাবদিহি করতে হবে, নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, নিহত আরাফাতের ভগ্নিপতিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্যতা অনুসারে চাকরি দিতে হবে, যে গাড়িটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে সেটিকে চিহ্নিত করে চালকের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, সিঅ্যান্ডবি থেকে বিশমাইল পর্যন্ত প্রয়োজনীয় স্পিডব্রেকার, জয় বাংলা গেটে ফুটওভারব্রিজ ও অত্র এলাকায় একাধিক পুলিশ বক্স দিতে হবে এবং এ এলাকায় গাড়ির গতিসীমা সর্বোচ্চ ৩০ কিমির মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। পরদিন ২৭ মে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে আবারও একই দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধ করার পরপরই শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা ও সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অবরোধকারীদের রাস্তা ছেড়ে দিয়ে আন্দোলন করার অনুরোধ জানান। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে অবরোধকারীদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এরপর বেলা ১টার দিকে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাত্ক্ষণিকভাবে তাদের দাবি পূরণে অবরোধ অব্যাহত রাখেন। এরপর ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের কাছে মারধরকারীদের বিচার দাবি করেন। এদিকে টানা পাঁচ ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনার পর রাস্তা থেকে সরে না দাঁড়ানোয় বিকাল ৫টার দিকে অ্যাকশনে যায় আশুলিয়া ও সাভার মডেল থানার দুই শতাধিক পুলিশের দুটি টিম। পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে জাগো নিউজের জাবি প্রতিনিধি হাফিজুর রহমান, জাবির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন এবং ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের সবাইকে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে রাস্তা থেকে হটিয়ে দিলে সন্ধ্যায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসায় ভাঙচুর চালায়। এ সময় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তিতে সাত শিক্ষক আহত হন। রাত ১২টার দিকে জরুরি সিন্ডিকেটের সভা বসে। সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থানকারী ৪২ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। এ বিষয়ে  বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহার কাছে জানতে চাইলে তিনি গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। আশুলিয়া থানার ওসি মোহসিনুল কাদিরকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা রিসিভ করেননি। তবে উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুরের মামলায় গতকালই ৪২ শিক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান জামিনের এ আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকার আশুলিয়া থানার এসআই অভিজিত্ চৌধুরী গ্রেফতার ৪২ শিক্ষার্থীকে আদালতে হাজির করে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। এ সময় আসামি পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে জামিন চেয়ে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক আসামিদের জামিন দেন। সার্বিক ঘটনা বিবেচনা করার জন্য ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অধ্যাপক অসিত বরণ পালকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন অধ্যাপক মো. শাহেদুর রশিদ, অধ্যাপক লুত্ফর রহমান, অধ্যাপক রাশেদা আখতার, সহযোগী অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার। সদস্যসচিব হিসেবে রয়েছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. আবু হাসান। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে। বিবৃতিতে জড়িতদের বিচার দাবি করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর