মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

উপকূলে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত

ঘূর্ণিঝড় মোরা’র প্রভাবে ডুবে গেছে নিম্নাঞ্চল

নিজস্ব প্রতিবেদক

উপকূলে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত

‘মোরা’র প্রভাবে উত্তাল চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর। ওড়ানো হয়েছে লাল পতাকা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার দিকে। আজ সকালে এটি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজার উপকূলকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মোরার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের সতর্কতা জারির পর উপকূলবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে এসব এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, বিদ্যালয়গুলোতে তাদের আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, খাবার পানি মজুদ রাখা হয়েছে।

সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ও তত্সংলগ্ন এলাকা থেকে কিছুটা উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহা বিপদ?সংকেতের আওতায় থাকবে। এ ছাড়া মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর বিপদ?সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৮ নম্বর বিপদ?সংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় মোরা উপকূল অতিক্রমের সময় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর এবং জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে অতি ভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৩৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্ব ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আজ সকালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাবে গতকাল বিকাল থেকেই উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

সরকার প্রস্তুত : ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবিলায় সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব গোলাম মোস্তফা। প্রস্তুতির ব্যাপারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত সচিব এসব তথ্য জানান। ভারপ্রাপ্ত সচিব জানান, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জেলা-উপজেলার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষার জন্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় উদ্ধার তত্পরতা চালাতে পর্যাপ্ত নৌযান প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

চট্টগ্রাম : ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবিলায় চট্টগ্রামের উপকূল থেকে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৪৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে চার লাখ লোকের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে চট্টগ্রামের চিকিৎসক ও নার্সদের ছুটি। গতকাল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, অন্য বার তিন চার দিন আগে থেকে ঘূর্ণিঝড়ের আভাস পাওয়া যেত। কিন্তু এবার কম সময়ের মধ্যে এই সংবাদ পেয়েছি। চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, সকাল ১০টা থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে পণ্য খালাস এবং জেটিতে অবস্থানরত জাহাজে কনটেইনার ও কার্গো (পণ্য) লোড-আনলোড বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্দর সূত্রে জানা যায়, সকালে বন্দর জেটিতে ছিল বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী ১৬টি জাহাজ। জেটি থেকে সব জাহাজকে ক্রমান্বয়ে বহির্নোঙরে পাঠানো হচ্ছে। রিভার মুরিং জেটিতে থাকা ১০টি জাহাজকেও গভীর সমুদ্রে পাঠানো হচ্ছে। বিদেশ থেকে বড় জাহাজে বহির্নোঙরে চাল, গম, কয়লা, ক্লিংকার ইত্যাদি খোলা পণ্য আনার পর ছোট ছোট জাহাজে (লাইটার) খালাস করে নদীপথে বিভিন্ন কারখানা ও বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আঘাত হানলে যাতে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে প্রস্তুত চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। এ লক্ষ্যে জেলার ২৮৪টি মেডিকেল টিমকে ওষুধ নিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিটি টিমে একজন চিকিৎসক আর দুজন সহকারী আছেন। তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মো. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, জেলার সব চিকিৎসক-নার্সদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ইফতার ও সাহরি সামগ্রী নিয়ে তাদের অফিসে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। মোরা আঘাত হানা পর্যন্ত তাদের অফিসেই রাত কাটাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, উপকূলের বিভিন্ন ঘাটে আমাদের ৬০ জন কারিগর আছেন। তারা বোট বা নৌকায় কোনো ধরনের ব্যাঘাত ঘটলে তা দ্রুত সেবা ও মানুষের যাতায়াতে সহযোগিতা করবেন। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবিলা ও ঘূর্ণিদুর্গত মানুষকে সহায়তায় নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। মেয়রের নির্দেশে দামপাড়ার বিদ্যুৎ বিভাগের কার্যালয়ে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম (০৩১-৬৩০৭৩৯, ৬৩৩৬৪৯)। বাগেরহাট : বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচাতে খুলে দেওয়া হয়েছে ২৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র। জেলার সব সরকারি কর্মীর ছুটি বাতিল করে ২৮৩টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সন্ধ্যার আগেই বাগেরহাটের উপকূলীয় দ্বীপ, চর ও নিম্নাঞ্চালসহ সব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জনসাধারণকে আশ্রয়কেন্দে  নিয়ে আসার কাজ শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম নৌঘাঁটি থেকে ১০টি যুদ্ধ জাহাজ ও চট্টগ্রাম কোস্টগার্ডের ২টি জাহাজকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখতে মংলায় সরিয়ে আনা হয়েছে। মংলা বন্দরের সব ধরনের পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিকাল থেকেই বইছে ঝড়ো হাওয়া। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ ও বাগেরহাট জেলা প্রশাসন ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। খোলা হয়েছে ১৪টি কন্ট্রোল রুম। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন, জেলার ৯টি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের সব আশ্রয়কেন্দ  খুলে দিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোরা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার : ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জোয়ারে কক্সবাজারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গতকাল বিকালে জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় পানি লোকালয়সহ বসত বাড়িতেও ঢুকে পড়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, ঘূর্ণিঝড় মোরা প্রভাবে ভোর রাতে মাঝারি ও হালকা বৃষ্টি হলেও সকাল থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা ৪ থেকে ৫ ফুট বেড়ে গিয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। দুপুরে জোয়ারের সময় সাগরে ঢেউয়ের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। শহরের সমিতি পাড়া, নাজিরারটেক, ফদনারডেইল ও কুতুবদিয়া পাড়ায় পানি ঢুকে মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। তা ছাড়া কুতুবদিয়া, চকরিয়া, মহেশখালী ও টেকনাফেও জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। বরিশাল : ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবিলায় বরিশালে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বরিশাল সিপিপির উপ-পরিচালক আবদুর রশিদ জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বরিশাল অঞ্চলে ৬ হাজার ১৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রয়েছে। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির প্রস্তুতি সভা হয়েছে। জনগণকে সতর্ক করতে উপকূলীয় এলাকায় স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে মাইকিং করা হয়েছে। এদিকে গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে ভীত-সন্ত্রস্ত না হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ উপকূল অতিক্রমকালে দ্বীপ ও চরসমূহে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার বেগে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। এ সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফিট জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হয়েছে। পটুয়াখালী : মোরার প্রভাবে পটুয়াখালীর উপকূলে সাগর উত্তাল রয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৮ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সকালে প্রস্তুতি সভা করেছে জেলা প্রশাসন। নদী বন্দরগুলোতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে নৌ-বন্দর কর্তৃপক্ষ। লক্ষ্মীপুর : মেঘনা উপকুলীয় অঞ্চল লক্ষ্মীপুরে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি সভা করেছেন জেলা প্রশাসক হোমায়রা বেগম। সভায় উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা, দুর্যোগ পূর্ববর্তী, দুর্যোগকালীন ও পরবর্তী সময়ে খাদ্য সরবরাহ, মেডিকেল টিম গঠন, রেড ক্রিসেন্ট সদস্য ও ৬টি কন্ট্রোলরুম খোলাসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। নোয়াখালী : ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবিলায় নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর, হাতিয়া ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় ৩১২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানায়, উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে মাইকিং করে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুব্রত কুমার দে জানান ৩১২টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে প্রয়োজনে আরও ১০০টি স্কুল কলেজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৭ নম্বর সতর্ক সংকেত ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুত গ্রহণ শুরু হয়েছে। কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : কলাপাড়া উপকূলীয় এলাকায় কয়েক লাখ মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় পাঁচ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে হালকা বৃষ্টিপাতসহ দমকা হাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে এক ধরনের গুমোট পরিবেশ বিরাজ করছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাসের জন্য কোনো জাহাজ নেই বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুরের পোতাশ্রয় শিববাড়িয়া নদীতে প্রায় পাঁচ শতাধিক মাছ ধরা ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোরার খবর পেয়ে গভীর সমুদ্র থেকে মাছ ধরা বন্ধ করে জেলেরা ট্রলার নিয়ে নিরাপদে আসতে শুরু করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন কুয়াকাটা-আলীপুর ট্রলার মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা। কলাপাড়া আবহাওয়া অধিদফতরের ঘূর্ণিঝড় পর্যবেক্ষণ কেন্দে র কর্মকর্তা শাহ আলম জানান, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলের ৩০০ কি.মি. এর মধ্যে চলে এসেছে। এর কেন্দে  বাতাসের গতিবেগ রয়েছে ঘণ্টায় ৬৫ কি.মি। এটি ভোর রাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে। ভোলা : ভোলার মনপুরাসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে বসবাসকারী লক্ষাধিক মানুষ চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মনপুরা উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে মেঘনার বেড়ি বাঁধ বিধ্বস্ত থাকায় সেখানকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। ভোলায় রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি নদীর তীরবর্তী এলাকায় সতর্ক সংকেত জারি করে মাইকিং করেছে। নদী থেকে মাছ ধরা নৌকা ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। জেলার ৭ উপজেলার কন্ট্রোল রুম খেলা হয়েছে। আমতলী : আমতলী ও তালতলী উপকূলীয় এলাকায় দুপুর দেড়টার দিকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে। আমতলী লঞ্চঘাট থেকে ঘূর্ণিঝড় মোরার খবর পেয়ে লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। স্থানীয় প্রশাসন ঘূর্ণিঝড় মোরা মোকাবিলার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মুশফিকুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব আশ্রয়কেন্দওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। নৌ চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে মাইকিং করা হয়েছে। নোয়াখালী : নোয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব আলম তালুকদার জানান, উপকূলীয় এলাকায় ৪১২টি আশ্রয়কেন্দ  খোলা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ গুলোকে প্রয়োজনীয় খাবার, নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে  নেওয়ার জন্য ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির ৬ হাজার ২৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। বাড়িঘর থেকে  লোকজন আশ্রয়কেন্দে  চলে আসার পর যাতে ঘরের কোনো কিছু খোয়া না যায় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে গ্রাম পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১০২টি মেডিকেল টিম। এ ছাড়া তাত্ক্ষণিক ত্রাণ সহায়তা হিসেবে নগদ ৬ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ও ২৯৮ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর