মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়

পীর চরমোনাই

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। আগামীতেও দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ একটা ব্যবস্থা থাকা জরুরি।

গত সপ্তাহে রাজধানীর পল্টন কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, আন্দোলনসহ নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন। চরমোনাই পীর বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতা ধরে রেখেছে। আসলে তাদের ক্ষমতায় থাকারই কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই। দলের সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে পীর চরমোনাই বলেন, উপজেলা ও ইউনিয়ন ছাড়িয়ে এখন ওয়ার্ড পর্যায়ে দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্প্রসারিত হচ্ছে। দেশের অনেক অঞ্চলে পাড়া-মহল্লাভিত্তিক এবং ভোট কেন্দ্রভিত্তিক কার্যক্রম বিস্তৃত হচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য দল প্রস্তুতি নিচ্ছে। আসনভিত্তিক কার্যক্রম এবং প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি সব কটি আসনেই ইসলামী আন্দোলন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। জোট গঠন নিয়ে তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন গতানুগতিক কোনো জোট গঠনে বিশ্বাসী নয়। ফলপ্রসূ ঐক্যবদ্ধ কোনো আদর্শিক প্লাটফরম তৈরি হলেই কেবল ইসলামী আন্দোলন জোটে যাবে। তা ছাড়া সব দল কোনো না কোনো জোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ ক্ষেত্রে বিকল্প জোট কাকে নিয়ে করব? দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে পীর চরমোনাই বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। মানুষ চরম উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠার সঙ্গে দিনাতিপাত করছে। ১৩ মে জামালপুরে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের সহসভাপতি মাওলানা আবদুল হককে গুম করা হয়। পাঁচ দিন পর নদীতে তার লাশ ভেসে ওঠে। এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, নৈতিকতাবিবর্জিত শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের যুবসমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। ইসলামী শিক্ষার বারোটা বাজিয়েছে এ সরকার। ছাত্রদের বিশেষ একটি ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করতে সিলেবাসে ভয়াবহ পরিবর্তন আনা হয়। ইসলামী জনতার দাবির মুখে সিলেবাস সংশোধন করলেও বাম ও নাস্তিক্যবাদীদের প্রবল বিরোধিতায় পুনঃসংশোধন কমিটি গঠন করা হয়। তবে সিলেবাস পুনরায় বিতর্কিত করার চেষ্টা হলে ইমানদার জনতা রক্ত ও জীবন দিয়ে তা প্রতিহত করবে। বিএনপির রাজনীতি নিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি এখনো ভুল থেকে শিক্ষা নেয়নি। কওমি সনদের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার কওমি সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। আশা করব, স্বীকৃতি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। বিগত সরকারগুলোর মতো তারা নোংরা রাজনীতির আশ্রয় নেবে না। স্বীকৃতির জন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম। রোজায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ সম্পর্কে পীর চরমোনাই বলেন, অতি মুনাফার লোভ এবং রমজানের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের অভাবে এটা হচ্ছে। আল্লাহর ভয় অন্তরে না থাকায় মানুষ অতি মুনাফালোভী হয়ে খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করে। এতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে থাকে। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট সম্পর্কে পীর চরমোনাই বলেন, দেশের অধিকাংশ মানুষ এ পদ্ধতি সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি জানে না। মানুষকে তৈরি না করে এর ব্যবহার কতটুকু ফলপ্রসূ হবে তা বিবেচনায় নিয়েই এ পদ্ধতি চালু করা উচিত। নারী নির্যাতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নৈতিক শিক্ষার অভাবে নারী নির্যাতনসহ অপরাধ বাড়ছে। পর্দার বিধানের প্রতি অবহেলার কারণেও নারী নির্যাতন, ইভ টিজিং, ধর্ষণ বেড়ে চলছে। ইসলামই নারীর প্রকৃত মর্যাদা দিয়েছে। কোরআন-বর্ণিত নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা করলেই নারী নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব।

সর্বশেষ খবর