মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিচার বিভাগকে বিক্ষুব্ধ করবেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিচার বিভাগকে বিক্ষুব্ধ করবেন না

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, বিচার বিভাগকে বিক্ষুব্ধ করবেন না। নির্বাহী বিভাগের এমন কিছু করা উচিত হবে না যাতে বিচার বিভাগ বিক্ষুব্ধ হয়। নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ বিষয়ক শুনানিতে গতকাল প্রধান বিচারপতি একথা বলেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, আপনারা আইন না জানলে আমাদের কাছে ব্যাখ্যা চাইবেন। আমরা সংবিধান অনুসারে ব্যাখ্যা দেব। নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করতে না পেরে রাষ্ট্রপক্ষ আবারও সময়ের আবেদন করে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ শুনানি শেষে আরও দুই সপ্তাহ সময় দেয়। এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল সময়ের আবেদন জমা দিলে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা হাসব না কাঁদব? হাসতে গেলেও কষ্ট হয়। যাই হোক, আমি কিছু বলছি না। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হয়ে গেছে। কিছু ত্রুটি রয়ে গেছে। কিছু অনিয়ম আছে। এগুলো নিয়ে সারাজীবন নয়। আমরা চাচ্ছি একটা সিস্টেমে চলে আসতে। প্রধান বিচারপতি অনিয়ম থেকে নিয়মে আনতে গেলে বলে গেল গেল। প্রধান বিচারপতি বলেন, পত্রিকায় বলা হয়, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সরকারের দ্বন্দ্ব্ব। আপনার মিনিস্ট্রিকে জেনারেল ক্লজ অ্যাক্টের ২১ পড়তে বলবেন। সরকারকে বলবেন, যেসব বিচারক প্রেষণে আছে, তারা সরকারি কর্মচারী নয়। যারা প্রেষণে আছেন তাদের মধ্যে কারা বিদেশে যান তাদের নাম সুপ্রিম কোর্ট জানতে চেয়েছিল। প্রধান বিচারপতি বলেন, যত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ডেপুটেশনে দিয়েছি, তাদের যদি প্রত্যাহার করি, তাহলে কারও কিছু করার নেই। বিচারকদের ডেপুটেশনে দিয়ে নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে কাজ করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। আপনারা বিচার বিভাগকে বিক্ষুব্ধ করবেন না, রাষ্ট্রপতির অনুশাসন বলে এমন কিছু করতে পারেন না। রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো ফাইল পাঠিয়ে যদি করতে বলা হয় তখন তিনি করেন, আর ‘না’ বলা হলে তিনি ‘না’ বলেন। তাই বলছি ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। তারা মনে করে সুপ্রিম কোর্টকে আদেশ করবে, তা ভুল করবে। তারা আইন না জেনে একের পর এক ব্যবধান সৃষ্টি করছে। নির্বাহী বিভাগকে আইনের ব্যাখ্যা না দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী! মারাত্মক হয়ে যাবে! তারা যদি আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে বলে এটাই কারেক্ট, খুব ভুল হবে। ৯ মে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণের বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ গ্রহণ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সুপ্রিম কোর্ট। তাতে প্রেষণে থাকা বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ ছাড়া বিদেশে না যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর ১৬ মে আইন মন্ত্রণালয় থেকে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে গত বছর মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা চিঠির বরাতে সেখানে বলা হয়, অধস্তন আদালতের বিচারকরা প্রেষণে থাকলে তাদের বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নেওয়ার আবশ্যকতা নেই। ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে আপিল বিভাগ যে রায় দেয়, তাতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা তৈরির নির্দেশনাও ছিল। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়। সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী বলে এর আগে এক শুনানিতে জানায় আপিল বিভাগ। পরে ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।

সর্বশেষ খবর